নির্বাচনের আগে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির চাপে ইইউ
অনলাইন নিউজ ডেক্স
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইইউভুক্ত দেশগুলোতে সামরিক ব্যয় বাড়ছে। ইইউ সংসদের নির্বাচনি প্রচারণাতেও গুরুত্ব পাচ্ছে বিষয়টি। সামরিক ব্যয় বাড়াতে গিয়ে সামাজিক কল্যাণ খাতের ব্যয় সংকোচনের আশঙ্কাও উঠে আসছে আলোচনায়। শনিবার রোমে ইটালির সোশাল ডেমোক্র্যাটটিক পার্টির প্রধান কার্যালয়ে ইইউ অঞ্চলের দেশগুলোর সোশাল ডেমোক্র্যাট নেতাদের নির্বাচনি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এবং জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসওও ছিলেন সেখানে। সভায় ইইউ সংসদের সোশালিস্ট ও ডেমোক্র্যাটদের নেতা গার্সিয়া পেরেস বলেন, ‘‘এই নির্বাচনি প্রচারণায় আমাদের সবচেয়ে বড় ইস্যু মূল্যবোধ, গণতন্ত্র এবং আমাদের নিরাপত্তাকে রক্ষা করা।ইউরোপের (ইইউ সদস্য) ২৭টি দেশে সেই প্রস্তাবই রাখছি আমরা।সেখানে আমরা সকলের জন্য সংহতি, সমতা এবং সুযোগের ভিত্তিতে একটি ভবিষ্যৎ গড়ার প্রস্তাব করছি।\"
ইইউ সদস্য ২৭ দেশে এ নির্বাচন হবে আগামী জুনে। ধারণা করা হচ্ছে এ নির্বাচনে ইইউ পার্লামেন্টে দ্বিতীয় বৃহত্তম দলের অবস্থান ধরে রাখবে সোশাল ডেমোক্র্যাটরা। সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপের কয়েকটি দেশে সোশাল ডেমোক্র্যাটদের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। জার্মানি, স্পেন, রোমানিয়া ও ডেনমার্কে সরকারে রয়েছে তারা। পর্তুগালের কেয়ারটেকার সরকারেও রয়েছে সোশাল ডেমোক্র্যাটরা।
কিন্তু এমন এক অবস্থায় দেশ পরিচালনার দায়িত্বে তারা, যখন করোনা এবং ইউক্রেন যুদ্ধের জোড়া আঘাতে অর্থনীতি নাজুক। তার ওপর ক্রমাগত বেড়ে চলেছে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির চাপ। এই চাপ সামলাবে কী করে ইইউভুক্ত দেশগুলো? মিউনিখভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইফো ইন্সটিটিউট-এর অর্থনীতিবিদ এবং সামরিক নীতিমালা বিশেষজ্ঞ মার্সেল শ্লেপার মনে করেন, চলতি সময়ে ‘‘(ইইউ অঞ্চলে) সামরিক খাতের ব্যয় বহনে নাগরিকদের সমর্থন বেশ ভঙ্গুর।\'\'
এমনিতে ইইউ অঞ্চলের দেশগুলোর নাগরিকদের মাঝে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধিতে সমর্থন য়থেষ্ট কম।ইউরোপের মাত্র চারটি দেশ সুইডেন, বুলগেরিয়া, জার্মানি এবং নরওয়ের ৫০ ভাগের বেশি মানুষ সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধির পক্ষে। এই চার দেশের মধ্যে নরওয়ে আবার ইইউ সদস্য নয়।
অথচ ২৭ সদস্যের মধ্যে মাত্র তিনটির নাগরিকদের সামরিক ব্যয় বৃদ্ধিতে সায় থাকলেও অন্যান্য দেশেও প্রয়োজনে কর বৃদ্ধির মাধ্যমেও তা করার প্রস্তাব বিবেচনায় আসছে। জার্মানির সোশাল ডেমোক্র্যাট নেতা ইইউ পার্লামেন্ট সদস্য ইওয়াখিম শুস্টার মনে করেন, এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অন্য বিকল্পগুলো বিবেচনায় নেয়া জরুরি।
এমনটি মনে করার কারণও আছে। একে তো অর্থনীতি গত কয়েক বছর ধরেই চাপের মুখে, তার ওপর ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সামরিক খাতের ব্যয় ইতিমধ্যে রাশিয়ার সামরিক ব্যয়ের তিনগুণেরও বেশি হয়ে গেছে।
রোমের সভায় তারপরও ইইউ সংসদের সোশালিস্ট ও ডেমোক্র্যাটদের নেতা গার্সিয়া পেরেস বলেন, ‘‘আমাদের নিরাপত্তা এবং ইউরোপীয় মডেল, অর্থাৎ সোশ্যাল মডেল – দুটোকেই রক্ষা করতে হবে।\'\' এস্তোনিয়ার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও বর্তমানে ইউরোপীয় সংসদে সামাজিক গণতন্ত্রীদের প্রতিনিধি স্ভেন মিকসার মনে করেন, ইউরোপীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার স্বার্থে অন্য খাতের খরচ কমিয়ে হলেও সামরিক খাতে ব্যয় বাড়াতে হবে, তবে, ‘‘সামাজিক কল্যাণ খাত থেকেই যে কমাতে হবে এমন কোনো কথা নেই।\'\'
মিকসার আরো বলেন, ‘‘সেনাবাহিনী এবং আমাদের নিরাপত্তার জন্য আরো অবদান রাখতেই হবে এখন। কারণ, নইলে কয়েক বছরের মধ্যে হয়ত আমরা অসহনীয় একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হবো। এটা এমন এক বিষয় যা নিয়ে কখনো ভোটারদের কাছে আমরা মিথ্যা বলতে পারি না।\'\' সূত্র: ডিডব্লিউ।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।