দেশে এখন দখলের রাজনীতি চলছে: আমির খসরু


পুলিশি বাধায় বিশ্ব নারী দিবসে র‌্যালি করতে পারেনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দল। শুক্রবার দুপুরে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত হয়ে র‌্যালি বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় নেতাকর্মীরা নানা স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানান। একপর্যায় পুলিশ তাদের ঘিরে ফেলে। পরে র‌্যালি না করেই কর্মসূচি শেষ হয়। এর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চেীধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন দখলের রাজনীতি চলছে, সিলেকশনের রাজনীতি চলছে। জনগণের ভোট তো আগেই দখল হয়ে গেছে। এখন আইনজীবী ও ব্যবসায়ীদের ভোট বাক্সও দখল করতে চায় ক্ষমতাসীনরা।’ র‌্যালির আগে মহিলা দলের পক্ষ থেকে পুলিশকে অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়েছিল, তারা শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা করবে। এছাড়া নারী দিবসের এ কর্মসূচিতে ঘটনাস্থলে থাকা নারী পুলিশ সদস্যদের পাশে থাকার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু এতে পুলিশ সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগ আয়োজক সংগঠনের নেতাকর্মীদের। এ বিষয়ে পুলিশের মহিলা শাখার এডিসি ফারজানা ইয়াসমিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘উনাদের বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি ছিল। জুমার সময় গাড়ি চলাচল করছে, এই র‌্যালি করতে দিলে যানবাহন চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হবে। সেজন্য করতে দেওয়া হয়নি। যতটুকু অনুমতি ছিল ততটুকু করতে দেওয়া হয়েছে।’ সমাবেশে আমির খসরু আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মূল চিন্তা, নারীর ক্ষমতায়নে রাষ্ট্র ও সমাজকে বিনিয়োগ করতে হবে। এই বিনিয়োগ নারীর কথা বলা, পেশা ও কাজের স্বাধীনতা-সব ক্ষেত্রে।’ দেশ এখন ‘ধর্ষণের দেশে’ পরিণত হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এমন কোনো দিন, সপ্তাহ, মাস কিংবা বছর নেই যে নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন না। এটার কারণ দোষীদের বিচার না হওয়া। এসব ঘটনায় তাদের (আওয়ামী লীগ) অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িত। ধর্ষণের ঘটনায় নারীবাদীরাও সোচ্চার হচ্ছেন না। তারাও ভয়-ভীতির পরিবেশে আছেন।’ নারীদের আগামী দিনে ক্ষমতায়ন করতে চাইলে আগে জনগণের ক্ষমতায়ন করতে হবে দাবি করে আমির খসরু বলেন, ‘জনগণের ক্ষমতায়ন করা না গেলে, ভোটাধিকার ফেরানো না গেলে, কারও ক্ষমতায়নের সুযোগ থাকবে না। নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে না আনা গেলে দেশ যে অবস্থায় আছে, সেখান থেকে ফিরে আসার সুযোগ নেই। নাগরিক অধিকার ফিরে পেলে নারীদের অধিকার নিশ্চিত করা যাবে।’ র‌্যালিকে কেন্দ্র করে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি প্রসঙ্গে মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘বিশ্ব নারী দিবসে আমরা যতজন উপস্থিত হয়েছি তার চেয়ে বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কতখানি ভয় পায় ওরা। আমরা যদি ৫ জন নারী থাকতাম সেখানে ৫শ পুলিশ মোতায়েন থাকত। এখানেই আমাদের বিজয়। কেন ভয় পায়? কারণ আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করি, সত্য কথা বলি।’ সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় সমাবেশে সহসভাপতি নেওয়াজ হালিমা আরলি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক নায়েবা ইউসুফ, দক্ষিণের আহ্বায়ক রুমা আক্তার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। শান্তিপূর্ণ র‌্যালিতে বাধা দিয়ে ন্যক্কারজনক ইতিহাস সৃষ্টি-রিজভী : বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে রাজনৈতিক অধিকারও কেড়ে নিয়েছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে মহিলা দলের আজকের শান্তিপূর্ণ র‌্যালিতে বাধা দিয়ে তারা আবার ন্যক্কারজনক ইতিহাস সৃষ্টি করল। রমজানের আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যেমূল্যের অস্বাভাবিক দামে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গোস্তের বদলে কাঁঠাল, পেঁয়াজ ছাড়া তরকারি, পেঁপে দিয়ে বেগুনি বানানোর হাস্যকর পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) জনগণের সঙ্গে মশকরা করেছিলেন। ‘ডামি’ মন্ত্রীরাও এখন জনগণের সঙ্গে মশকরা শুরু করছেন। এক ‘ডামি’ মন্ত্রী রোজাদারদের ইফতারের সময় খেজুরের পরিবর্তে বরই খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু রাজনৈতিক চরিত্র হারানো আওয়ামী লীগের ‘ডামি’ মন্ত্রী-এমপিরা জানেন না সব জিনিসের ‘ডামি’ হয় না। বরই কখনো খেজুরের ‘ডামি’ হতে পারে না। তেলের দাম নিয়ে সরকার প্রতারণা করেছে-আলাল : এদিন দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, গত কয়েকদিন ধরে জ্বালানি তেলের দাম কমানো নিয়ে চিৎকার চ্যাঁচামেচি হচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেট্রোলের দাম ৩ টাকা ও অকটেনের দাম ৪ টাকা কমানো হয়েছে। প্রতারণার একটা সীমা থাকা উচিত। আবার বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়েছে আকাশ সমান। জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উদ্যোগে নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এক বিক্ষোভ সমাবেশ তিনি এ কথা বলেন। আলাল বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে নিজেদের সংকুচিত হতে হয়। এ সরকার একটি প্রতারণার সরকার। তারা বলে রোজায় কোনো জিনিসের দাম বাড়বে না। তারা কিন্তু সত্যি কথাই বলেছেন। কারণ রোজার ৩ মাস আগে থেকে জিনিসপত্রের দাম বাড়াতেই থাকে। এরপর আর রোজার সময় দাম বাড়ায় না। তার মানে আওয়ামী লীগ ওয়াদা ঠিক রাখে। তারা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করে। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন বেপারীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, বিএনপির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, তাঁতীদলের কাজী মনির প্রমুখ।