কিশোর গ্যাংয়ের লক্ষ্য নারীরা


ঈদকে সামনে রেখে কুমিল্লা নগরীসহ উপজেলা সদরের সবকটি বিপণিবিতানে এখন ক্রেতার উপচে পড়া ভিড়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিশোর গ্যাং সদস্যরা তৎপর হয়ে উঠেছে। এই ঈদে বিশেষ করে বিপণিবিতানে আসা নারীরা তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। সুযোগ পেলেই তারা নারী ক্রেতাদের পার্স, ভ্যানিটি ব্যাগসহ টাকা-পয়সা চুরি-ছিনতাই করছে। এছাড়া তারা বিপণিবিতানগুলোর সামনে জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কোনো নারী তাদের সামনে দিয়ে গেলে বিভিন্ন রকম বাজে মন্তব্যসহ শিকার হচ্ছেন যৌন হয়রানির। এতে ক্রেতা-বিক্রেতাসহ বিপণিবিতান ও এর আশপাশের এলাকার লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এদিকে কিশোর গ্যাং দমনে শক্ত অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী-এমনটাই জানিয়েছে কোতোয়ালি মডেল থানা ও জেলা ডিবি। তারা নগরীর বিপণিবিতানসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নজরদারি বাড়িয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুমিল্লা নগরীতে ১৮-২০টি সক্রিয় কিশোর গ্যাং রয়েছে। এসব গ্যাংয়ের হাতে বেশ কয়েকটি আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। নগরীর বাইরে উপজেলা সদরগুলোতেও কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান এবং কোতোয়ালি থানার ওসি ফিরোজ হোসেনের কঠোর অবস্থানের কারণে নগরীতে কিশোর গ্যাংয়ের কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ঈদকে কেন্দ্র করে গ্যাংগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। গত কয়েকদিনে নগরীর টমছমব্রিজ, সালাউদ্দিন মোড়, চকবাজার ও কান্দিরপাড় এলাকায় কিশোর গ্যাংগুলো মহড়া দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ এবং আধিপত্য নিয়ে সুযোগ পেলেই এক গ্রুপ অপর গ্রুপের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। নগরীর হাউজিং এস্টেট, নূরপুর, হজরতপাড়া, মুরাদপুর, সংরাইশ, সুজানগর, শুভপুর, ফৌজদারি মোড়, মোগলটুলী, তালপুকুরপাড়, ঠাকুরপাড়া, মদিনা মসজিদ সড়ক, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ এলাকা, চর্থা থিরাপুকুর পাড়, চর্থা বড় পুকুর পাড়, ঢুলিপাড়া, ইপিজেড গেট, পকেট গেট, উত্তর চর্থা, টিক্কারচর ব্রিজের উত্তর-দক্ষিণ পাড়, অশোকতলা, শহরতলির ধর্মপুর, চানপুর, বাখরাবাদ, শাসনগাছা, নোয়াপাড়া চৌমুহনী এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেড়েছে। স্থানীয়রা জানায়, দাগী অপরাধীরা নেপথ্যে থেকে গ্যাংগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে। বিশেষ করে আলোচিত কাউন্সিলর সোহেল ও হরিপদ হত্যাকাণ্ডের আসামি, মতিন সরদার হত্যা মামলার আসামি, এলিন হত্যা মামলার আসামিসহ বেশ কিছু আলোচিত মামলার আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়ে কিশোর গ্যাংগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে। এছাড়া টিক্কারচর গোমতী সেতু এলাকায় বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ওই এলাকার গ্যাং সদস্যরা বিবির বাজার স্থলবন্দর থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাক আটকে চাঁদাবাজি ও ছিনতাই করছে। শুধু ট্রাক নয়, সেতুর ওপর মালবোঝাই যে কোনো যানবাহন থামিয়ে ছিনতাই করছে। এলাকাবাসী জানায়, দূর-দূরান্ত থেকে ঘুরতে আসা লোকজনকে টার্গেট করে তাদের টর্চার সেলে নিয়ে মারধর করে অর্থকড়ি, স্বর্ণ গহনা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এই গ্যাংগুলোর বিরুদ্ধে সাদা পোশাকধারী র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যদের মারধরের অভিযোগও রয়েছে। অপরদিকে জেলার মুরাদনগর উপজেলা সদর, কোম্পানীগঞ্জ বাজার, দেবিদ্বার সদর, গৌরীপুর বাজার, চান্দিনা, বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া সদরের মার্কেটগুলোর সামনে কিশোর গ্যাং সদস্যদের সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা নারীদের ইভটিজিং (যৌন হয়রানি) করছে। সুযোগ পেলেই তারা নারীদের পার্স, ভ্যানিটি ব্যাগও চুরি-ছিনতাই করছে। কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন বলেন, কিশোর গ্যাং যাতে নারীদের হয়রানি করতে না পারে সেজন্য বিপণিবিতানগুলোর সামনে পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে আমাদের সদস্যরা নজরদারি করছে। আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। ঈদগাঁ এলাকায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, এ ঘটনায় ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। এছাড়া সদ্যকারামুক্ত অপরাধীদের সম্পর্কে বলেন, তাদের ওপর আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।