স্বপ্নের আমেরিকায় লাশ হলেন সিলেটের জনি, বাকরুদ্ধ পুরো পরিবার
অনলাইন নিউজ ডেক্স
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বাফেলোতে বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত দুইজনের মধ্যে একজনের বাড়ি সিলেটে। কানাইঘাট উপজেলার ঝিঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নে। তার নাম আবু সালেহ মো. ইউসুফ। ডাক নাম জনি। মাত্র বছরখানেক আগে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে তিনি আমেরিকার গিয়েছিলেন। শনিবার স্থানীয় সময় ১২টার দিকে বন্দুকধারীদের গুলিতে অপর এক বাংলাদেশিসহ তিনি নিহত হন।
আবু সালেহ মো. ইউসুফ নিহত হওয়ার ঘটনা রোববার সকাল ৭টার দিকে ফোনে জানানো হয় তার বাড়িতে। ছেলে নিহত হওয়ার খবর পাওয়ার পরই মা নাজিরা বেগম মূর্ছা যান। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ছিলেন বাকরুদ্ধ। অসংখ্য গণমাধ্যমকর্মী গেলেও তিনি কোনো বক্তব্য দেননি। বিছানায় শুয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকা ইউসুফের মাকে ঘিরে রেখেছিলেন স্বজনরা। নাজিরা বেগম পেশায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা।
ইউসুফের বাবা নুরুল হক দুইবারের ইউপি সদস্য ও একবারের ইউপি চেয়ারম্যান। তিনি কানাইঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তিনি বলেন, পরিবারের মুখে হাসি ফুটানোর পাশাপাশি নিজের বাচ্চাদের ভালো প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করানোর স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে গিয়েছিল ইউসুফ কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তিনিও কাঁদছেন আর মূর্ছা যাচ্ছেন।
নিহত ইউসুফের চাচা সাহাব উদ্দিন জানান, ইউসুফেরা তিন ভাই এক বোন। এরমধ্যে ইউসুফ সপরিবারে আমেরিকায়, অপর ভাই মাল্টায় এবং আরো এক ভাই ঢাকায় থাকেন। একমাত্র বোন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক। তিনি বলেন, লাশ দেশে আনানোর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ওখানের আইনি বিষয়াদি সম্পন্ন হলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।
নিহত হওয়ার খবর পেয়ে ইউসুফের খালু নুরুল আফসার ছুটে যান ইউসুফদের বাসায়। তিনি জানান, সকালে হঠাৎ ফোন আসলো, জানানো হলো গুলিতে ইউসুফ মারা গেছে। চাঁদা না দেওয়ায় ওখানের কৃষ্ণাঙ্গরা তাকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। ওখানে কুমিল্লার বাবুলের সাথে কন্সট্রাকশন ফার্মে কাজ করত ইউসুফ। বাবুলকে বন্দুকধারী কৃষ্ণাঙ্গরা ঘিরে ফেললে তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে যান ইউসুফ। তখন তাদের দুজনকেই গুলি করে হত্যা করে কৃষ্ণাঙ্গরা।
ঝিঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাস্টার আবু বক্কর বলেন, নিহত ইউসুফ সম্পর্কে আমার শ্যালক। বছরখানেক আগে ছোট্ট দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে নিউয়র্কে পাড়ি দিয়েছিলেন। বড় মেয়ের বয়স অনুমান সাড়ে তিন ও ছোট মেয়ের বয়স দেড় বছরের মতো হবে। রোববার সকাল ৭ টার দিকে নিউইয়র্ক থেকে এক বাঙালি কমিউনিটি নেতার মাধ্যমে প্রথমে নিহতের বিষয়টি জানতে পারি। এরপর বিভিন্ন মাধ্যমে অবগত হই। ঘটনাস্থলে প্রায় তিন ঘণ্টা মরদেহ পড়েছিল। এরপর পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ইউসুফের মরদেহ এখন হাসপাতালে আছে।
ইউসুফের বাড়ি কানাইঘাট হলেও বর্তমানে বাবা-মাসহ পুরো পরিবার বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন সিলেট নগরীর মেজরটিলার ইসলামপুরে। ইউসুফ নিহত হওয়ার খবর পাওয়ার পর অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ভিড় করেন বাসায়। ওখানে থাকা স্বজনরা জানান, ইউসুফ প্রথমে সিলেট নগরীর করিম উল্লাহ মার্কেটে মোবাইলের ব্যবসা করতেন। এরপর এমপি হাফিজ আহমদ মজুমদারের ঢাকার প্রজেক্টে কাজ করেন। সর্বশেষ পরিবার নিয়ে আমেরিকায় যান।
ঢাকায় থাকাবস্থায় ইউসুফের সাথে বিয়ে হয় জুরাইনের নুসরাত জাহান তপুর। তপুদের মূল বাড়ি ঢাকার মুন্সীগঞ্জে। ইউসুফ গুলিতে নিহত হওয়ার পর থেকে স্ত্রীও বাকরুদ্ধ। তারা আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটির বাফেলোতে থাকেন। এর আগে ভার্জিনিয়ায় থাকতেন ইউসুফ।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।