নিয়োগ পদোন্নতিতে অনিয়ম তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির পদে
অনলাইন নিউজ ডেক্স
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে জনবল নিয়োগ, পদোন্নতি এবং জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে নানা অনিয়ম ও অসংগতির অভিযোগ উঠেছে। মন্ত্রণালয়টিতে ২০১৭ সালে সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর ও অফিস সহায়ক পদে জনবল নিয়োগ, পরবর্তীতে তাদের পদোন্নতি, জ্যেষ্ঠতা নিয়ে তালগোল অবস্থা। মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রার্থীদের নিয়োগ নিয়ে খামখেয়ালিপনার আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মন্ত্রণালয়টির প্রশাসন শাখায় কর্মরতদের কারও ছেলে, মেয়ে জামাই, কারও মেয়ে আবার কারও শালিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। নিয়োগ পেয়েছে সাবেক মন্ত্রীর গাড়িচালকের ছেলে এবং মন্ত্রীর বাসার পাচকের স্ত্রী। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অণুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. নাজমুছ সাদত সেলিম বলেন, ওই নিয়োগে কিছু কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। বিরাজমান সমস্যা সমাধানে কাজ করছি। যারা অনিয়ম করেছেন, তাদের বহাল রেখে কিভাবে সমস্যার সমাধান করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত সচিব বলেন, কোনো অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি হয়নি। শুধু ভুল বোঝাবুঝি। ওই শাখায় কর্মরতদের আত্মীয়স্বজনের নিয়োগের পরও অনিয়ম হয়নি-এমন প্রশ্নের জবাবে এপিডি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালা সংশোধনে কাজ চলছে।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে জনবল নিয়োগের জন্য ২০১৭ সালের ২৪ জানুয়ারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরীক্ষা হয় ওই বছর ৭ এপ্রিল। একই বছরের ২৮ মে ৫৮ জনের ঠিকানায় নিয়োগপত্র পাঠানো হয়। মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রার্থীদের নিয়োগপত্র পাঠানো হয় ২০১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। একই সময়ে নিয়োগ পেলেও শুধু মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাছাইয়ের অজুহাতে ৩ মাস ১৩ দিন পর তাদের নামে নিয়োগপত্র পাঠানো হয়।
অথচ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এক পত্রে শুধু মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাছাইয়ের জন্য কাউকে নিয়োগের সময় হয়রানি না করার জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব, সচিবকে অনুরোধ করা হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়, একই সঙ্গে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং চূড়ান্ত বিবেচনায় নিয়োগ লাভের পরও শুধু মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাছাইয়ের জন্য কাউকে আগে পরে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রার্থীরা জ্যেষ্ঠতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হন।
নিয়োগসংশ্লিষ্টরা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আমলে নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অধিশাখার উপসচিব শামীম আহমেদ বলেন, আমরা সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি দিয়ে তা প্রতিপালনে অনুরোধ করেছি। এখন কেউ না মানলে জোর করে মানানো আমাদের কাজ না। অপরদিকে সব পদে নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশন করে প্রার্থীর সব তথ্য যাছাই করে এক সঙ্গে নিয়োগের বিধান থাকলেও তা মানা হয়নি।
নিয়োগপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রেও অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে। কেউ পেয়েছেন নিয়োগপত্র ছাড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। আবার কেউ পেয়েছেন ১৫ দিন পর। নিয়োগপত্র ছাড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কি করে একজন প্রার্থী নিয়োগপত্র পেয়ে চাকরিতে যোগদান করেছে তা তদন্তের দাবি উঠেছে। যাদের আত্মীয়স্বজন মন্ত্রণালয়টির প্রশাসন-১ শাখায় কর্মরত ছিলেন তারাই সর্বাগ্রে নিয়োগপত্র পেয়ে চাকরিতে যোগদান করেছেন। ফলে যোগদানের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ হলে অনেকেই বঞ্চিত হতে পারেন। ১৫ দিন পর যারা নিয়োগপত্র পেয়ে যোগদান করেছেন তারা জুনিয়র হিসাবে বিবেচিত হবে এবং পরবর্তী পদোন্নতিতে সুবিধা বঞ্চিত হবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ওই নিয়োগের ৫ বছর পর ২০২২ সালে মেধাকে জ্যেষ্ঠেতার ভিত্তি ধরে তিনজনকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ওই তিনজনকে পদোন্নতি দেওয়ার প্রায় ২ বছর পর এখন বলা হচ্ছে না জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ হবে যোগদানের ভিত্তিতে। নিয়োগ মেধাক্রম অনুসারে দেওয়া হয়েছে বলে নিয়োগপত্রে উল্লেখ রয়েছে। চূড়ান্ত রেজাল্টও মেধাক্রম অনুসারে নির্ধারণ করা হয়েছে বলে শিটে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এখন পরিকল্পিতভাবে সমস্যা তৈরি করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন।
তারা জানান, প্র্রশাসনিক কর্মকর্তা (এও) এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ফিডার পদের জ্যেষ্ঠতা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। অস্পষ্টতা দূরীকরণে (ক্যাডারবহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেডেটে কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করতে বলা হয়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিদ্ধান্ত এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে পদোন্নতি নিয়ে জটিলতা দিন দিন বড়েই চলছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, পারস্পরিক জ্যেষ্ঠতা এবং সমন্বিত জ্যেষ্ঠতা নিয়ে বিরাজমান সমস্যা সমাধানে বিধি অণুবিভাগের সিদ্ধান্ত ছিল নিয়োগ বিধি সংশোধন করা। যা এখনো সংশোধন করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, এ পরিস্থিতিতে কর্মচারীদের মধ্যে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। কর্মচারীরা জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রতিকার দাবি করেন। মন্ত্রী বিষয়টি তদন্ত করে ফরসালা দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। মন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে ২০১৭ সালে নিয়োগ পাওয়া সব সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটরের সাক্ষাৎকার নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (প্রশাসন) রিপন চাকমা। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই কর্মচারীদের অনিয়ম, অসঙ্গতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ। কারণ নিয়োগের সময় তিনি প্রশাসন-১ শাখায় উপসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। অথচ তাকেই তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ায় সংশ্লিষ্টরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
৭ মে কর্মচারীরা বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেজবাহ উদ্দীন চৌধুরীকে অবহিত করেন। তিনি অনিয়ম, অসঙ্গতি এবং দুর্নীতির ঘটনা মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং বিম্ময় প্রকাশ করেন। প্রশাসন অণুবিভাগের কর্মকর্তাদের ডেকে পাঠান এবং সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, সচিবের নির্দেশনার পর এখন সবাই চুপচাপ।
এ বিষয়ে জনপ্রশাস মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব প্রশাসন রিপন চাকমা বলেন, বিষয়টি নিয়ে কয়েক মাস আগে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। কমিটির কাজ এখনো শেষ হয়নি। কাজ শেষে জানা যাবে কোথায় কোথায় অনিয়ম হয়েছে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক কে জানতে চাইলে রিপন চাকমা বলেন, তিনি নিজেই তদন্ত কমিটির প্রধান। অপর এক প্রশ্নের জবাবে রিপন চাকমা বলেন, নিয়োগের সময় তিনি প্রশাসন-১ শাখায় উপসচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এ মন্ত্রণালয়টিতে অনেক বছর কর্মরত।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।