মোদির শপথ কাল আজ যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
অনলাইন নিউজ ডেক্স
ভারতের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) জোটের প্রধান ও ভারতীয় জনতা পার্টি প্রধান নরেন্দ্র মোদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর। শুক্রবার বিকালে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বেরিয়ে নরেন্দ্র মোদি এ কথা জানান। এর আগে সকালে দিল্লিতে এনডিএ জোটের আইনপ্রণেতাদের বৈঠকে টানা তৃতীয় মেয়াদে নরেন্দ্র মোদিকে এনডিএ নেতা নির্বাচিত করা হয়। রোববার সন্ধ্যায় নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন বলে আগেই জানিয়েছেন এনডিএর এক মুখপাত্র। এ শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আজ দিল্লি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খবর রয়টার্স, হিন্দুস্থান টাইমস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, আনন্দবাজার পত্রিকার।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে বাইরে এসে সাংবাদিকদের নিজের বক্তব্য জানালেও নরেন্দ্র মোদি প্রশ্নোত্তর পর্বের মুখোমুখি হননি। এক দশকের প্রধানমন্ত্রিত্বে মোদি কখনো সংবাদ সম্মেলন করেননি। তবে শুক্রবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মোদি বলেন, ‘এটুকু আশ্বাস দিতে পারি, গত দু’দফায় উন্নয়নের যে গতি বজায় ছিল, তৃতীয় দফার পাঁচ বছরেও তা থাকবে।’ এর পরে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি আমাকে ডেকেছিলেন। সরকার গড়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি তাকে জানিয়েছি, ৯ তারিখ (রোববার) বিকালে শপথগ্রহণ হলে ভালো হয়। তার মধ্যেই মন্ত্রীদের তালিকা আমি রাষ্ট্রপতিকে পাঠিয়ে দেব।’
সকালে সংসদের সেন্ট্রাল হলে এনডিএ-র বৈঠকের পরেই প্রবীণ বিজেপি নেতা তথা দলের সদস্য লালকৃষ্ণ আদভানি, মুরলি মনোহর জোশি এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রাইসিনা হিলে রাষ্ট্রপতি ভবনে যান মোদি। বিজেপি সূত্রে জানা গেছে, এনডিএ-র মোট ২১ জন নেতার সমর্থনপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে তিনি সরকার গঠনের দাবি জানান।
আগামী ৯ জুন নরেন্দ্র মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে নেপাল, শ্রীলংকা, ভুটান, মরিশাস, সেশেলসের রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সে সঙ্গে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ মুইজ্জুও।
এর আগে সকালে এনডিএ-র নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে আয়োজিত বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে নরেন্দ্র মোদিকে সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত করেন। এনডিএ-র নেতা, বিজেপির লোকসভা নেতা হিসাবে নরেন্দ্র মোদির নাম প্রস্তাব করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। সেই প্রস্তাব অনুমোদন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, নিতিন গডকড়িসহ এনডিএ-র শরিক দলের নেতারা।
শুক্রবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তেলুগু দেশম পার্টির (টিডিপি) নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু, জনতা দল ইউনাইটেড দলের নেতা নীতীশ কুমার, শিবসেনা দলের নেতা মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে, এনসিপির নেতা অজিত পাওয়ার, জেডিইউ নেতা এইচডি কুমারস্বামী। শাহ-গডকড়ির পর একে একে কুমারস্বামী, চন্দ্রবাবু নাইডু, নীতীশ, একনাথ, অজিত, চিরাগ পাসোয়ানসহ অন্যরা সমর্থন জানান। তারপরই শরিক দলের সবার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মোদি।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘সরকার চালানোর জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা আবশ্যক, তবে দেশ চালানোর জন্য সর্বমত জরুরি। নির্বাচনের আগে জোট করে লড়াই করে এনডিএ-র মতো সাফল্য কেউ পায়নি।’
আমি সব সময় প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে থাকব : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ও জনতা দল ইউনাইটেডের (জেডি-ইউ) প্রধান নীতীশ কুমার। তিনি বলেছেন, ‘আমি সব সময় প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে থাকব।’ শুক্রবার বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট থেকে নির্বাচিত লোকসভার সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠকে বক্তব্যে বিরোধীদের সমালোচনা করে নীতীশ কুমার বলেন, ‘বিরোধী জোট দেশের জন্য কিছুই করেনি। আমি সব সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকব।’ ভবিষ্যতেও নির্বাচনে এনডিএ জোট সফল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে নীতীশ কুমার বলেন, ‘পরেরবার আপনি যখন আসবেন, এদিকে-ওদিকে যেসব দল এবারের নির্বাচনে জয় পেয়েছে, তারা সবাই হেরে যাবে। আমাদের এ ব্যাপারে পুরো ভরসা আছে।’
এদিকে এনডিএ’র বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে গিয়ে রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন নীতীশ কুমার। মোদির থেকে খুব একটা বেশি বড় নন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৫১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন মোদি। আর ১৯৫১ সালের ১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেছেন নীতীশ। পায়ে হাত দিয়ে নরেন্দ্র মোদিকে প্রণাম করতে গেলে বয়সে বড় নীতীশকে সেই কাজটা অবশ্য করতে দেননি মোদি। এই প্রচেষ্টার ভিডিও ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এর মধ্যে মোদির নেতৃত্বের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেছেন নীতীশ।
প্রধানমন্ত্রী নয়াদিল্লি যাচ্ছেন আজ : নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে নয়াদিল্লি যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইট সকাল ১০টায় ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবে। ফ্লাইটটি দুপুর ১২টায় (নয়াদিল্লির স্থানীয় সময়) নয়াদিল্লির ভিভিআইপি বিমানবন্দর পালাম এয়ারফোর্স স্টেশনে অবতরণ করবে। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে একটি উচ্চ পর্যায়ের ভারতীয় প্রতিনিধিদল এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মুস্তাফিজুর রহমান অভ্যর্থনা জানাবেন। নয়াদিল্লিতে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা রোববার সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ভবনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগদানের পর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন। পরে তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে যোগ দেবেন। তিনি নয়াদিল্লি ত্যাগ করার আগে কিছু অফিসিয়াল কাজ শেষ করে সোমবার বিকাল ৫টায় (নয়াদিল্লি সময়) পালাম এয়ারফোর্স স্টেশনে পৌঁছাবেন এবং রাত ৮টায় (বাংলাদেশ সময়) তার ঢাকা পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
শ্রীলংকার রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমাসিংহে এবং নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহালসহ বিশ্ব নেতারা এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এতে ৮ হাজারের বেশি বিশিষ্টজন উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।