তদন্ত করতে দুদকের চিঠি ভূমি মন্ত্রণালয়ে ১০ কোটি টাকা ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগ
অনলাইন নিউজ ডেক্স
শব্দ-সার্ভেয়ার, ড্রাফটসম্যান ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা থেকে কানুনগো পদে পদোন্নতিতে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
পদোন্নতি পূর্ব গ্রেডেশন তালিকা প্রণয়নের জন্য দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছে ওই সব পদে মাঠপর্যায়ে কর্মরতদের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর) চাওয়া হয়।
এছাড়া গ্রেডেশন লিস্ট তৈরিতে ১০ কোটি টাকা ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়কে পত্র দেওয়া হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানতে চাইলে ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। অনিয়ম হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনি লেখার আগে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে নেবেন।
আর্থিক লেনদেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে মাঠ প্রশাসন অধিশাখার (যুগ্ম সচিব) মমতাজ বেগম বলেন, গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা নিষেধ। কে নিষেধ করেছেন এবং লিখিত না মৌখিকভাবে নিষেধ করেছেন-এমন প্রশ্নের উত্তরে যুগ্ম সচিব বলেন, মৌখিকভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২৮ মার্চ ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-১ শাখা থেকে সার্ভেয়ার, ড্রাফটসম্যান ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা থেকে কানুনগো পদে পদোন্নতির জন্য গ্রেডেশন লিস্ট তৈরির লক্ষে বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের কাছে অধীন সার্ভেয়ার, ড্রাফটসম্যান এবং ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের ২০২৩ সালের এসিআর চাওয়া হয়।
ওই পত্রে আরও বলা হয়, ইতঃপূর্বে অধীন কর্মচারীদের এসিআর চাওয়া হয়েছে কিন্তু তা এখনও পাওয়া যায়নি। এছাড়া যেসব কর্মচারী পদোন্নতির অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছেন এবং কেন অযোগ্য হলেন তার প্রমাণসহ ১৫ এপ্রিলের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হলো। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে এই পত্র দেশের ৮ বিভাগ ও ৬১ জেলার ডিসিদের পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রেডেশন লিস্ট তৈরিতে অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জনৈক ব্যক্তির অভিযোগ কানুনগো পদে পদোন্নতি পূর্ব গ্রেডেশন তৈরিতে ১০ কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন হয়েছে। সে সার্ভেয়ার, ড্রাফটসম্যান ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের গ্রেডেশন তালিকা তৈরিতে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ আসে দুদকে।
১৬ মে দুদক থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক পত্রে উল্লেখ করা হয়, কর্মচারীদের গ্রেডেশন লিস্ট তৈরিতে ব্যাপক অনিয়মসংক্রান্ত অভিযোগটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হলো। দুদক থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই পত্রে একজন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। দুদকও বিষয়টি তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইতঃপূর্বে গ্রেডেশন তালিকা প্রণয়ন এবং পিএসসিতে পাঠানো পদোন্নতির প্রস্তাবের বিষয়ে বেশকিছু অসংগতি পেয়েছে সংস্থাটি। ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে দফা ভিত্তিক পিএসসির সব প্রশ্নের ব্যাখ্য দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নিয়োগ বিধিমালা ১৯৮৫ অনুযায়ী সার্ভেয়ার পদে পদোন্নতির জন্য এইচএসসি পাশসহ স্বীকৃত ইনস্টিটিউট থেকে সার্ভে ডিপ্লোমা থাকতে হবে। এছাড়া কানুনগো পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে নিয়োগ বিধিতে কিছুই বলা নেই। তবে কানুনগো পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে।
জানা গেছে, কর্মরত অনেক সার্ভেয়ারের নিয়োগের কোনো বৈধতা নেই। কারণ নিয়োগের সময় তাদের সার্ভে ডিপ্লোমা ছিল না। অনেকের সার্ভিস বুকও নেই।
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, একজন কর্মচারী ২০-২২ বছর চাকরি করেছে অথচ তার সার্ভিস বুক থাকবে না-এটা হতেই পারে না। তিনি আবার পদোন্নতি দাবি করছেন! সুতরাং এ ধরনের কর্মচারীদের পদোন্নতির সুপারিশ করার কোনো সুযোগ নেই।
এছাড়া যাদের সার্ভেয়ার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে তারাও পদোন্নতি পাবেন না। কারণ সার্ভেয়ার একটি টেকনিক্যাল পদ। এ পদটিতে সরাসরি নিয়োগ হয়। পদোন্নতির মাধ্যমে সার্ভেয়ার পদ পূরণের কোনো সুযোগ নেই। যারা সার্ভেয়ার পদে পদোন্নতি পেয়েছেন এবং যারা পদোন্নতি দিয়েছেন তারা সবাই আইন ভঙ্গ করেছেন। এখন আবার পদোন্নতি দাবি করা হচ্ছে।
আবার অনেকে দাবি করছেন, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসাবে সার্ভেয়ারদের এসিআরের বাধ্যবাধকতা নেই। এটা মোটেই ঠিক নয়। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসাবে সার্ভেয়ারদের এসিআর সংরক্ষণ করতে হবে এবং এসিআর সংরক্ষণ না করা অসদাচরণ। সুতরাং এসিআর ছাড়া সার্ভেয়ারদের গ্রেডেশন প্রস্তুত এবং কানুনগো পদে পদোন্নতির সুপারিশ করার কোনো সুযোগ নেই।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।