উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামা: এমপিদের চেয়ে সম্পদ বাড়ার হার বেশি
অনলাইন নিউজ ডেক্স
অর্থসম্পদ বৃদ্ধিতে সংসদ-সদস্যদের ছাড়িয়ে গেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানরা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২৫১ জন প্রার্থীর আয় ১০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের আয় বেড়েছে ৩১ হাজার ৯০০ শতাংশ। একজন চেয়ারম্যানের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১১ হাজার ৬৬৬ শতাংশ। আরেকজনের পরিবারের সদস্যদের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১২ হাজার ৪০০ শতাংশ। উপজেলা পরিষদে নির্বাচিতদের মধ্যে ১৩২ জন আছেন কোটিপতি। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে রোববার রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ‘ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হলফনামা বিশ্লেষণ ও চূড়ান্ত ফলাফল’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় টিআইবি।
প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, জাতীয় পর্যায়ের মতো স্থানীয় নির্বাচনেও জনস্বার্থ ব্যাপকভাবে উপেক্ষিত। জনপ্রতিনিধিত্বের নামে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদের বিকাশই মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদর্শিক ও জনকল্যাণমুখী জনপ্রতিনিধিত্বের কোণঠাসা অবস্থায় দেশের সুশাসন, গণতন্ত্র ও দুর্নীতিবিরোধী কাঠামো এবং সক্ষমতার ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জনস্বার্থকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হওয়ার প্রত্যাশা থাকলেও বাস্তবে জনপ্রতিনিধিত্বের নামে ক্ষমতার অপব্যবহারকেন্দ্রিক অসুস্থ প্রতিযোগিতার বিকাশ ঘটছে। হলফনামার তথ্যের বিশ্লেষণ এই ক্ষমতাকেন্দ্রিক অসুস্থ প্রতিযোগিতার উৎকৃষ্ট প্রমাণ বহন করছে। ক্ষমতায় থাকলে সম্পদ বিকাশের অবারিত সুযোগ তৈরি হয় এবং কোনো জবাবদিহির মুখে পড়তে হয় না। জনপ্রতিনিধিত্বের অবস্থানকে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিকভাবে, প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ও বিভিন্ন যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থসম্পদ বৃদ্ধির লাইসেন্স হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ফলে দলীয় নির্দেশনা বা শৃঙ্খলা উপেক্ষা করে মুনাফাকেন্দ্রিক উদ্দেশ্য নিয়ে জনপ্রতিনিধিত্বের অবস্থান দখল করা হচ্ছে। অন্যদিকে যারা জনকল্যাণমুখী আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছেন, এমন পরিস্থিতিতে তারা নিজেদের কোণঠাসা ভাবছেন। এ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন তৈরি হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতা অপব্যবহারের সুযোগ এমন ব্যাপকভাবে তৈরি করে দিচ্ছে যে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই ভূমিকা রাখতে হবে।
প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে টিআইবি জানিয়েছে, ৮৫৮ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা রয়েছে। অতীতে মামলা ছিল এক হাজার ১০৯ জনের বিরুদ্ধে। একজন চেয়ারম্যান ও এক ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ২৭টি করে মামলা রয়েছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ৫৭ শতাংশ স্নাতক বা তদূর্ধ্ব শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন। ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে তা ৪০ শতাংশ। আর নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে ৪০ শতাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক বা এর নিচে। পেশাগত দিক বিবেচনায় ৬৯ শতাংশই ব্যবসায়ী। প্রায় ১২ শতাংশ প্রার্থী কৃষিজীবী। আইনজীবী আছেন সাড়ে ৫ শতাংশের ওপরে। শিক্ষক আছেন প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ। নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বাড়ছে। অন্য পেশার অংশগ্রহণ কমছে।
টিআইবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রার্থীদের মধ্যে ৩৯০ জন কোটিপতি। পাঁচ বছরে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে তিনগুণ। সবচেয়ে বেশি অস্থাবর সম্পদের মালিক নরসিংদীর শিবপুরের চেয়ারম্যান ফেরদৌসী ইসলাম। তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১৭৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। অন্য শীর্ষ অস্থাবর সম্পদের মালিকদের মধ্যে রয়েছেন নোয়াখালীর সেনবাগের এসএম জাহাঙ্গীর আলম মানিক, কুমিল্লার হোমনার রেহানা বেগম, হবিগঞ্জের মাধবপুরের এসএফএএম শাজাহান, ঢাকার ধামরাইয়ের সুধীর চৌধুরী, চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর জাহেদুল হক, ফেনীর ছাগলনাইয়ার মিজানুর রহমান মজুমদার, গোপালগঞ্জ সদরের কামরুজ্জামান ভুইয়া, শরীয়তপুরের জাজিরার ইদ্রিস ফরাজী ও ঝালকাঠি সদরের নুরুল আমিন খান।
বেশি জমির মালিকানার দিক থেকে এগিয়ে আছেন দোয়ারাবাজারের চেয়ারম্যান দেওয়ান আশিদ রাজা চৌধুরী। তার জমির পরিমাণ ২৮০ একর। এর পরের অবস্থানে রয়েছেন সাদুল্লাপুরের রোজউল করিম, লোহাগড়ার খোরশেদ আলম চৌধুরী, বান্দরবানের একেএম জাহাঙ্গীর, রাণীনগরের রাহিদ সরদার, পটিয়ার ভাইস চেয়ারম্যান সাজেদা বেগম, নওগাঁ সদরের রফিকুল ইসলাম, গোদাগাড়ির জাহাঙ্গীর আলম ও জাজিরার এসএম আমিনুল ইসলাম।
এতে আরও জানানো হয়, চার ধাপে ৪৪২ উপজেলায় ১ হাজার ২১০ জন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে ৯৩০ জনই নতুন মুখ। তাদের মধ্যে ২৭৯ জন জনপ্রতিনিধি রয়েছেন যারা পঞ্চম উপজেলা পরিষদেও ছিলেন। এবার ৩০৩ জন চেয়ারম্যান, ৩১৭ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ৩১০ জন নারী ভাইস চেয়ারম্যান নতুনভবে জয়ী হয়েছেন। আইনি সীমার বেশি জমি আছে ২৫ জন প্রার্থীর। তাদের মধ্যে সাত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, প্রায় ৮৪ শতাংশ প্রার্থীর হলফনামার সঙ্গে আয়কর রিটার্নের সম্পদের হিসাবের পার্থক্য পাওয়া গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক ও গবেষণাদলের প্রধান মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা দলের সদস্য ও আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট কো-অর্ডিনেটর রিফাত রহমান, কেএম রফিকুল আলম ও ইকরামুল হক ইভান।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।