হতাহতদের এজাহারে বৈসাদৃশ্য, সুশাসনের স্বার্থে নিরপেক্ষ তদন্ত কাম্য


কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে গেল কয়েকদিন দেশজুড়ে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। হতাহতের সংখ্যাও কম নয়। বেসরকারি সূত্রের পরিসংখ্যান বলছে, নিহত দু’শতাধিক, আহত হয়েছেন অন্তত কয়েক হাজার। একটি অহিংস আন্দোলন কীভাবে ভয়াবহ সহিংসতার দিকে গড়ালো, এ প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি। অবশ্য সহিংসতার নেপথ্য অনুসন্ধানে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ তদন্ত করছে। তবে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে জনমনে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এর অবশ্য কারণও রয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত হত্যা মামলার এজাহারে পুলিশের গুলির কথা কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। বেশিরভাগ এজাহারে হত্যাকারী হিসাবে অজ্ঞাতনামা তৃতীয় পক্ষের ওপর দায় চাপানো হয়েছে। এদিকে সুরতহাল প্রতিবেদনেও লাশের শরীরে গুলির চিহ্ন এড়িয়ে গেছে পুলিশ। এমনকি ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ গানশট ইনজুরি (গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু) লেখা থাকলেও সুরতহালে গুলির আঘাতের কথা উল্লেখ করা হয়নি। এদিকে দায়েরকৃত মামলার প্রায় ৯০ শতাংশেই আসামিদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। আসামির ঘরে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের কথা বলা হয়েছে। ফলে এসব মামলায় প্রকৃত দোষীরা গ্রেফতার হবেন, নাকি নিরপরাধ ব্যক্তিরা হয়রানির শিকার হবেন, সে আশঙ্কা থেকেই যায়। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, সংঘর্ষ-সংঘাতে অনেকের মৃত্যুর কারণ গুলির আঘাত হলেও কৌশলে তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে এ চেষ্টা ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা’রই শামিল। ভুলে গেলে চলবে না, অনেক স্থানেই পুলিশের গুলিতে মানুষ হতাহতের ঘটনার ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে জনসমক্ষে এসেছে। এ ছাড়াও রংপুরে নিহত আবু সাঈদের ভিডিওর মতো অনেক ফুটেজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমের কাছেও এখন রয়েছে। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি প্রকৃত সত্য এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে শুধু জনমনে নয়, বিশ্ব দরবারেও প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হলেও প্রকৃত সত্যটা বেরিয়ে আসবে। ফলে তা সরকারের জন্যই বুমেরাং হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কাজেই প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে নয়, সুশাসনের স্বার্থেই কেউ আইন অমান্য (সে যেই হোক) করলে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ও সঠিক প্রক্রিয়ায় দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকার আন্তরিকতার পরিচয় দেবে, এটাই প্রত্যাশা।