সকালে হাসান বিকালে অশ্বিন-জাদেজা


হাসান মাহমুদকে যদি এখন থেকে ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ নামে ডাকা হয়, আপনি কি আপত্তি করবেন? বৃহস্পতিবার সকালে চেন্নাইয়ের মেঘেঢাকা আকাশের নিচে এমএ চিদম্বরম স্টেডিয়ামের পিচে সবুজের প্রলেপে প্রলুব্ধ বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত টস জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠান। দক্ষিণ ভারতীয় এই শহরে ৪২ বছরে শান্তই প্রথম অধিনায়ক, যিনি টস জিতে ফিল্ডিং নেন। এরপর প্রথম টেস্টের প্রথম দুই সেশনে চেন্নাইয়ের ‘লন্ডন-সদৃশ কন্ডিশনে’ বাংলাদেশের তরুণ ডান-হাতি পেসার হাসান মাহমুদ ভারতের ইনিংসে ছুরি চালিয়ে দেন। ১/১৪ থেকে ভারত ৪/৯৬-তে পরিণত হয় হাসানের আগুনে বোলিংয়ে। যশস্বী জয়সওয়াল (৫৬) ও ঋষভ পন্তের (৩৯) পঞ্চম উইকেটে ৬২ রানের জুটির পর ১৪৪ রানে পাঁচ বলের ব্যবধানে ভারত পরপর দুই উইকেট হারায়। কিন্তু এরপরই দৃশ্যপটে পরিবর্তন। এই টেস্ট শুরুর দুদিন আগে ৩৮-এ পা দেওয়া অশ্বিন, জন্মসূত্রে যিনি চেন্নাইবাসী এবং আরেকজন রবীন্দ্র জাদেজা, যিনি আইপিএলে খেলেন চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে। এই ‘স্পিন যমজ’ ১৪৪/৬ থেকে ভারতকে টেনে তুলে দিনশেষে ৩৩৯/৬-এ নিরাপদে পৌঁছে দেন, ১৯৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটির সহায়তায়। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে সপ্তম উইকেটে যা সর্বোচ্চ। ২০০৪ সালে ঢাকায় শচীন টেন্ডুলকার ও জহির খান ১৩৩ রানের জুটি গড়েছিলেন। অশ্বিন ও জাদেজা কাল সেই রেকর্ড টপকে যান। ১৪৪/৬-স্কোর বোর্ডে ভারতের প্রথম ইনিংস পাংশুটে দেখাচ্ছিল। প্রথম দুই সেশনে হাসান মাহমুদের বদান্যতায় বাংলাদেশের দুরন্ত বোলিং পারফরম্যান্স তখন খুশির ‘পারফিউম’ ছড়াচ্ছিল। হাসান তার বড়শিতে প্রথমেই গেঁথে নেন বড় মাছ রোহিত শর্মাকে। তার দ্বিতীয় শিকার শুবমান গিল। দীর্ঘদিন পর টেস্ট খেলতে নেমে শচীন টেন্ডুলকারের কন্যা সারা টেন্ডুলকারের কথিত প্রেমিক গিল শূন্য রানে আউট। অষ্টম ওভারের তৃতীয় বল লেগ স্টাম্পের অনেকটা বাইরে করেন হাসান। ফ্লিক করতে গিয়ে বল গিলের ব্যাটে হালকা খোঁচা লেগে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের গ্লাভসে জমা পড়ে। এ নিয়ে টেস্টে তিনবার শূন্য রানে আউট হলেন গিল। ২০২১ সালে বিরাট কোহলির তিনবার কোনো রান না করে আউট হওয়ার নজির ছিল। ভারতের অন্য ব্যাটারদের মধ্যে মনসুর আলী খান পতৌদি (১৯৬৯), দিলীপ ভেংসরকার (১৯৭৯) ও বিনোদ কাম্বলি (১৯৯৪) টেস্টে তিনবার আউট হয়েছেন শূন্য রানে। অধিনায়ক রোহিতের মতো কোহলিও সাজঘরে ফেরেন ছয় রান করে। ৬৩২ দিন পর টেস্ট ক্রিকেটে ফেরা ঋষভ পন্ত হাসানের চতুর্থ শিকার। এ পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। কিন্তু খেলাটা যে টেস্ট ক্রিকেট, ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়-সেটি প্রমাণ করতেই যেন আবির্ভূত হন ‘চেন্নাই বয়’ রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা। প্রথমদিনের খেলা ভারত যে ৩৩৯/৬-এ শেষ করেছে, এর পুরো কৃতিত্ব এ দুজনের। সপ্তম উইকেটে ১৯৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে তারা চিদম্বরমে প্রথম ঘণ্টার বিভীষিকা মুছে দেন। অশ্বিন টেস্টে ষষ্ঠ সেঞ্চুরি পেয়ে যান ঘরের মাঠে চিরচেনা অনুরাগীদের সামনে। দিনশেষে ১০২ রানে অপরাজিত তিনি। আর জাদেজা আজ দ্বিতীয়দিন শুরু করবেন ৮৬ রান নিয়ে। প্রথম দুই সেশনে ছয় উইকেট হারানো ভারত দিনের শেষ সেশনে তোলে ১৬৩ রান। ১৮ ওভারে ৫৮ রান দিয়ে চার উইকেট নেওয়া হাসান শেষ সেশনে এনে দিতে পারেননি ব্রেকথ্রু। একটি করে উইকেট নেন নাহিদ রানা ও মেহেদী হাসান মিরাজ।