মিল্লাদের বেঁচে ফেরার গল্প বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন


চারপাশে তখন মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ। তার মধ্যেই হঠাৎ করে এলোপাতাড়ি গুলি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাশের দুজন লুটিয়ে পড়লেন। তাদের শরীর থেকে অনবরত রক্ত ঝরছে। ওদিকে থামছে না পুলিশের গুলিও। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ। হামলার তেজ তাতে যেন আরও বাড়ে। কমতে থাকে বেঁচে ফেরার আশাও। কিন্তু দুই সহযোদ্ধাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে পালাতে মন সায় দেইনি। যদিও কাছে গিয়ে বুঝলাম তারা আর বেঁচে নেই। এর মধ্যেই আমার দিকে চায়না রাইফেল তাক করে গুলি করে পুলিশ। তা বিদ্ধ হয় বাঁ হাতের বাহুতে। এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে বেরিয়ে যায় সেই গুলি। ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। ক্ষণিকের মধ্যেই পুরো শরীর ভিজে যায়। ধীরে ধীরে অচেতন হতে থাকি। এরপর আর কিছু মনে নেই। রাজধানীর ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিল্লাদ হোসেন যখন ফিরে আসার গল্প বলছিলেন, তখনো কাঁপছিলেন ভয়ে। বলেন, আমি ফিরতে পারব, ওই সময়ে ভাবনাতেও ছিল না। তবে বেঁচে ফিরেছি। ফের বাবা-মা, স্বজন, দলীয় নেতাকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হতে পেরেছি, এটা সৃষ্টিকর্তার বিশেষ নেয়ামত। অযুত মানুষের জীবন, আর রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচারমুক্ত যে দেশ পেয়েছি, সেটি লক্ষ বছর টিকে থাকুক। শকুনের দৃষ্টি থেকে হেফাজতে থাকুক। কোটাবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে ১৯ জুলাই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির সমাবেশে গুলিবিদ্ধ হন মিল্লাদ। মিল্লাদ হোসেন হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার চারগাঁও গ্রামের জিতু মিয়ার ছেলে। তার বাবা উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক। তিনি বলেন, ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় দুর্বিষহ দিন পার করছি। গুলিবিদ্ধ জায়গায় হাড়ের পরিবর্তে স্টিলের পাত বসানো হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চিকিৎসার ব্যয় বহন করার পাশাপাশি সবসময় খোঁজখবর নিয়েছেন। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হাতটি কখনো স্বাভাবিক হবে না। তারপরও দেশ স্বাধীন করতে যারা রক্ত দিয়েছেন, আমিও তাদের একজন ভেবে কিছুটা শান্তি পাই, নিজেকে সান্ত্বনা দিই।