ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে বাদ দেয়ার চেষ্টা করবেন না -মির্জা ফখরুল
অনলাইন নিউজ ডেক্স
‘ক্ষমতায় যেতে রাজনীতিবিদরা উসখুস করছেন’- জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এমন বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, একজন উপদেষ্টা মন্তব্য করেছেন, রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উসখুস করছে। এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক কথা। আমরা আশা করি না, তিনি এ ধরনের মন্তব্য করবেন। আমরা দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছি, কারণ যত দেরি করবেন হাসিনারা ফিরে আসবে। আমরা সহযোগিতা করছি, আপনারাও সহযোগিতা করেন। আমরা ক্ষমতায় যেতেই চাই, সেজন্যই তো রাজনীতি করছি। মির্জা ফখরুল বলেন, পরিষ্কার করে বলতে চাই, আবারও ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে বাদ দিয়ে কিছু করার চেষ্টা করবেন না। মাইনাস টু ফর্মুলা আগেও কাজ করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। গতকাল রোববার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ-এ বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা ভয়াবহ দানবের হাত থেকে মুক্ত হয়েছি। আপনাদের সঙ্গে যখনই দেখা হতো তখনই বলতাম আমাদের বুকে পাথর হয়ে বসে আছে। পাথর গেলেও এখনো স্বস্তি নেই। কোথায় যেন আটকা আছি। আটকা আছি, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এখন সরকার আছে, সেটা অন্তর্বর্তী সরকার।
তিনি বলেন, সংবাদপত্রে এসেছে প্রতি বছর ১২ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে। হিসাব করে দেখা গেছে, ১০০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে। একেবারে অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ধ্বংস করেছে মানবিকতা। যেখানে যাবেন আওয়ামী লীগের চোরেরা বসে আছে। এখনো বসে আছে।
তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার শুধু বিএনপির সঙ্গে নয়, সব দলের নেতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। ঢাকা শহরের সব সড়কের নামগুলো বিশিষ্ট মানুষের নামে করে দিয়েছিলেন সাদেক হোসেন খোকা।
তরুণদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন তরুণ প্রজন্মের যুগ। যখন আব্বাস ও খোকা ভাই ছিলেন তখন ঢাকা শহর কাঁপতো। তোমাদেরও কাঁপাতে হবে।
বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, শেখ হাসিনা খোকা ভাইয়ের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। কখন পরাজিত হন? যখন মানুষটিকে মানুষ নিজের কাছের মানুষ হিসেবে বেছে নেয়। আমি তাকে কখনো উত্তেজিত হতে দেখিনি, অত্যন্ত ভাবনা-চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতেন। তার মৃত্যু আমাদের কাছে পাহাড়ের মতো ভারী হয়েছিল।
মির্জা ফখরুল বলেন, ঢাকাবাসী খুব ভাগ্যবান যে মির্জা আব্বাস ও সাদেক হোসেন খোকার মতো দুজন মানুষকে পেয়েছেন, যারা খুবই কর্মীবান্ধব।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমার কাছে রাজনীতির পরিস্থিতি ঘোলাটে মনে হচ্ছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার দোসররা এখনো সর্বত্র। নির্বাচন বিলম্বিত করে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফেরানোর আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছাকাছি বিশেষ একজন ব্যক্তি দেশকে ধ্বংসের কাছাকাছি নেওয়ার চেষ্টা করছেন। সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে বৈরিতা ছিল না জানিয়ে আব্বাস বলেন, বৈরিতা যেটা বলা হয় সেটা বাইরের মানুষের বানানো।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য গণমাধ্যমে বিকৃতি হচ্ছে অভিযোগ করে মির্জা আব্বাস বলেন, রাজনীতিবিদদের বক্তব্য যথাযথভাবে প্রচার না হলে তার অর্থ ভিন্ন হয়ে দাঁড়ায়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিএনপির আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্য ও সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণের পর ডা. শাহাদাত হোসেনকে নিয়ে শেরে বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পনের পরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ শুধু দেশটাকেই ধ্বংস করেনি ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে প্রতিটি নির্বাচনকে তারা তাদের মতো করে সাজিয়েছিলো। চট্টগ্রামে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনপ্রিয় নেতা সাবেক মহানগর আহ্বায়ক তিনি প্রতিযোগিতা করে জিতেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টরা বলপ্রয়োগভাবে জনগনের ফলাফল তারা কেড়ে নিয়েছিল। আজকে আমি ধন্যবাদ জানাই নির্বাচন কমিশন ট্রাইব্যুনালকে তারা সেই ফলাফলকে স্বীকৃতি দিয়ে পূর্বের নির্বাচনকে বাতিল করে তারা ডা. শাহাদাতকে নির্বাচিত ঘোষণা করেছে। সেই সাথে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাই তারা আদালতের রায়কে মেনে নিয়ে তাকে (শাহাদাত হোসেন) চট্টগ্রামের মেয়র শপথ গ্রহন করিয়েছেন।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিস্টদেরকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে যেন ফ্যাসিস্টরা ফিরে আসতে না পারে, জনগণের যে দূর্বার প্রতিরোধ সেই প্রতিরোধ যেন ফ্যাসিবাদকে নির্মূল করে এবং আগামী দিনের নির্বাচনগুলো যেন অবাধ সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয় আমরা সেই প্রত্যাশা করছি। আমি দলের দলের পক্ষ থেকে, চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ডা. শাহাদাতকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
বেলা সাড়ে ১২টায় শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে কয়েক‘শ নেতা-কর্মীকে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করেন। মরহুম নেতার রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন তারা। মোনাজাত পরিচালনা করেন মেয়র শাহাদাত নিজেই। এর আগে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা হাসান আরিফ ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করান।
এ সময়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, মাহবুবে রহমান শামীমসহ চট্টগ্রামের মহানগর নেতৃবৃন্দ।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।