আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা: ইসরাইল-আমেরিকা দূরত্ব কি বাড়বে?
অনলাইন নিউজ ডেক্স
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়ভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। দ্য হেগ আদালতের এই পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক আইন ও রাজনৈতিক বাস্তবতার এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে।
আইসিসি নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টকে গাজার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করেছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- ক্ষুধার্ত রাখাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার, গণহত্যা, নির্যাতন এবং অন্যান্য অমানবিক কর্মকাণ্ড।
রোম চুক্তি অনুযায়ী, আইসিসির সদস্য ১২৪টি দেশ এখন বাধ্য তাদের গ্রেফতার করতে এবং আইসিসির কাছে হস্তান্তর করতে।
আইসিসির প্রাক-বিচার চেম্বারের মতে, ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজার জনগণকে খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে তাদের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। এছাড়া এই পদক্ষেপগুলো যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত ছিল বলেও জানিয়েছে আদালত।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
আইসিসির রোম চুক্তিতে বিশ্বের ১২৪টি দেশ স্বাক্ষর করলেও যুক্তরাষ্ট্র এতে স্বাক্ষর করেনি। বরাবরই এই আদালতের বিরোধিতা করে আসছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশটি।
সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আইসিসির এই সিদ্ধান্তকে ‘অবমাননাকর’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং নেতানিয়াহুর প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বাইডেন তার বক্তব্যে বলেন, ‘ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে কোনো নৈতিক সাম্য নেই। আমরা সবসময় ইসরাইলের নিরাপত্তার পক্ষে থাকব’।
এখানেই শেষ নয়, মার্কিন কংগ্রেসেও আইসিসির ওপর পালটা নিষেধাজ্ঞা আরোপের একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে। যার ফলে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আরও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
বৈশ্বিকভাবে ইসরাইলের একঘরে হওয়ার ঝুঁকি
এদিকে আইসিসির পরোয়ানা ইসরাইলের বৈশ্বিক অবস্থানকে আরও নড়বড়ে করে তুলেছে। ইতোমধ্যেই ইউরোপের দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালি ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন জানিয়েছে।
তবে আইসিসির রায় তাদের আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার বাধ্যবাধকতাকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইসিসি এই রায়ের ফলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে নতুন মামলা দায়ের হতে পারে। এমনকি দ্বৈত নাগরিকদের বিরুদ্ধেও। ব্রিটেনে বসবাসকারী ইসরাইলি নাগরিকদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগে বিচার শুরু হলে দেশটির আন্তর্জাতিক আইন পালনের প্রতিশ্রুতি কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়বে।
ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৫ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসায়, তার প্রশাসন কীভাবে এই পরোয়ানার প্রতি প্রতিক্রিয়া জানাবে, তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
মিডল ইস্ট আই-এর চিফ এডিটর ডেভিড হার্স্টের মতে, ট্রাম্প যদি তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রতি সত্যিকারের আনুগত্য দেখান, তাহলে ইসরাইলের বিতর্কিত পদক্ষেপগুলো থেকে দূরত্ব তৈরি করাই তার জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
মূলত গাজা পরিস্থিতির আলোকে আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত নির্দেশ করে। এটি শুধু নেতানিয়াহু বা গ্যালান্টের ওপরই নয়, দখলদার ইসরাইলের নীতির ওপরও বিশ্বব্যাপী আলোচনার নতুন অধ্যায় খুলে দিয়েছে।
এখন যুক্তরাষ্ট্র যদি এই বিষয়গুলোতে সমর্থন অব্যাহত রাখে, তাহলে এটি শুধু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার অবস্থানকেই দুর্বল করে দেবে।
উপরোন্তু আইসিসির পরোয়ানা বিশ্ববাসীর কাছে একটি মৌলিক প্রশ্ন রেখে গেছে- ‘আপনি কী আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলবেন, নাকি পেশীশক্তির প্রতি সমর্থন দেবেন?’ সূত্র: মিডল ইস্ট আই
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।