মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়
ঘুস ছাড়া মেলে না এমপিও
অনলাইন নিউজ ডেক্স
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন: বেপরোয়া মাঠ প্রশাসন, ঘুস না দিলে প্রভাবশালীদের তদবির লাগে, অন্যথায় ত্রুটি ধরে ফাইল ফেরত দেওয়া হয় * ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে -মহাপরিচালক, মাউশি
বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির কাজে বেপরোয়া ঘুস বাণিজ্য চলছে। দেশের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার এই আবেদন নিষ্পত্তি করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয়।
কিন্তু সেবাপ্রার্থীদের প্রতিটি কাজে নির্ধারিত হারে অর্থ দিতে হয়। অথবা প্রভাবশালী মহল থেকে তদবির করাতে হয়। এই দুটির কোনোটির আশ্রয় না নিলে মাসের পর মাস ঘুরতে হয়। কখনো আবার নানান ত্রুটি ধরে আবেদন ফিরিয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘুস ছাড়া এমপিও মেলে না বললেই চলে।
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং মাউশিতে দাখিল হওয়া একাধিক অভিযোগের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। চলতি এবং গত সপ্তাহের একাধিক দিন মাউশির ঢাকা অঞ্চলে উপপরিচালকের দপ্তরে সরেজমিন গিয়ে প্রকাশ্যে ঘুস দেনদেনের প্রমাণ পাওয়া যায়।
এই প্রতিবেদক নিজের নাম-পরিচয় গোপন রেখে নিজের ভাবির (গোপালগঞ্জের একটি স্কুলের ‘শ’ আদ্যাক্ষরের শিক্ষিকা) বেতন স্কেল দশম থেকে নবম গ্রেডে উন্নীত করতে ওই দপ্তরের উচ্চমান সহকারী রাবেয়া সুলতানার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
উল্লেখ্য, এমপিও প্রত্যাশীদের তালিকায় নাম ছিল ওই শিক্ষিকার। রাবেয়া কাজটির জন্য এ প্রতিবেদকের কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে তিন হাজার টাকা তার হাতে তুলে দেওয়া হয়। টাকাটা তিনি ভবনটির খোলা বারান্দায় সিঁড়ির সামনেই গ্রহণ করেন।
এরপর তার (রাবেয়া) কাছে একই স্কুলের দুই কর্মচারীর ‘নতুন’ এমপিওভুক্তির কাজের কথা জানানো হয়। তখন তিনি কাগজপত্র ঠিক থাকলে ২০ হাজার, নইলে ৫০ হাজার টাকা রেটের কথা জানান।
এক ঘণ্টা পর ভবনটির নিচে তার সঙ্গে দুই কাজের জন্য ১৫ হাজার টাকা রফা করা হয়। ওই সময় তিনি বলেন, নতুন স্যার (উপপরিচালক) এসেছেন। তাছাড়া আরও ৩-৪ জনকে টাকার ভাগ দিতে হয়।
তাই এর কম নেওয়া হয় না। এরপর রফাকৃত টাকা শুক্রবার আজিমপুর কোয়ার্টারে তার সরকারি ফ্ল্যাটে পৌঁছে দিতে বলেন। সেই অনুযায়ী শুক্রবার ফোন করলে স্থান পরিবর্তন করে রোববার তার অফিসে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
এরপর রোববার গিয়ে দেখা যায়, তিনি অফিসে নেই। তখন অফিসের অন্য দুই কর্মচারীর নাম উল্লেখ করে তাদের কাছে টাকা দিয়ে যেতে বলেন। পরে এই প্রতিবেদক সাংবাদিক পরিচয়ে রোববার রাতে রাবেয়া সুলতানার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে অর্থগ্রহণের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘যারা কাজ করতে আসেন, তাদের পরামর্শ দিই। তখন তারা কিছু পয়সাপাতি দিয়ে যান। জোর করে নেওয়া হয় না।’ এসব ঘটনার ভিডিও এবং অডিও রেকর্ড কাছে রক্ষিত আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেবল ঢাকা নয়, মাউশির প্রায় সব অঞ্চলেই একইভাবে এমপিও-সংক্রান্ত যত কাজ আছে, তাতে কম বেশি অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে।
এসব বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারাও জানেন। যে কারণে মাঝেমধ্যে দু-একটি লোক দেখানো সতর্ক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেই দায়িত্ব শেষ করতে দেখা যায়। সর্বশেষ ২৩ ফেব্রুয়ারি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এ ধরনের একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
কিন্তু দুর্নীতিবাজ চিহ্নিত হওয়ার পরও সর্বোচ্চ ব্যবস্থা হিসাবে কেবল বদলি করা হচ্ছে। এর প্রমাণ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, সম্প্রতি ঢাকা অঞ্চলেই জনৈক সালমা বেগম নামে এক কর্মচারীকে ফরিদপুরের মধুখালীর একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসার এমপিও অবৈধভাবে করানোর অভিযোগে রাজধানীর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে সালমা বেগম বলেন, ওই ঘটনায় আরও একজন জড়িত আছেন। কিন্তু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তদবিরে তার বদলি ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। তার এমন কেউ না থাকায় বদলি হতে হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ঘুস লেনদেন বা হয়রানির এমন ঘটনা শুধু ঢাকা নয়, সব অঞ্চল থেকেই অভিযোগ আকারে আসছে।
কিন্তু প্রমাণের অভাবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তবে কারও বিরুদ্ধে কখনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে বদলিসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা অঞ্চল থেকে সালমা নামে এক কর্মচারীকে অভিযোগ পাওয়ার পর আমিই বদলি করেছি।
২০১৪ সালের আগে মাউশির প্রধান কার্যালয়ে এমপিওভুক্তির সব কাজ করা হতো। ২০১৫ সাল থেকে সংস্থাটির ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয় এই কাজ করছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ের এমপিও-সংক্রান্ত কাজ করেন আঞ্চলিক উপপরিচালকরা।
আর কলেজ পর্যায়ের কাজ করে পরিচালকের দপ্তর। আবার কেবল উল্লিখিত কোড পরিবর্তনই নয়, নতুন এমপিওভুক্তি, সহকারী অধ্যাপক, উচ্চতর বেতন স্কেল, নাম-বয়স সংশোধনসহ নানান কাজ আছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব কাজের জন্য আছে নির্দিষ্ট রেট। এর মধ্যে শিক্ষকের নতুন এমপিওভুক্তিতে লাগে ১০ হাজার টাকা। আর কাগজপত্রে ত্রুটি থাকলে ২০ হাজার টাকা।
কর্মচারী এমপিওভুক্তিতে পাঁচ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা লাগে। উচ্চতর স্কেলে দুই থেকে চার হাজার টাকা। এছাড়া নানা কারণে শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও বকেয়া হয়।
এ ধরনের দাবি পাশ করাতে লাগে পাঁচ থেকে ১৫ হাজার টাকা। অনেকে নাম ও জন্মতারিখ সংশোধনে আসেন। এজন্য পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়।
২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর এমপিওর কাজে ঘুস লেনদেনসংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন কাজে শিক্ষক-কর্মচারীদের পদে পদে ঘুস দিতে হয়।
মাধ্যমিকের বিভিন্ন কাজে ঘুসের এই রেট সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় উলটো প্রতিবাদ করে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে চিত্র এখনো বদলায়নি। এ ব্যাপারে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তাদের গবেষণায় মাধ্যমিকে শিক্ষক নিয়োগ, বদলি, এমপিওভুক্তি থেকে শুরু করে পদে পদে আর্থিক লেনদেনের চিত্র উঠে এসেছিল। এ খাতে সুশাসনের ঘাটতি আছে বলে মনে করেন তিনি।
জানা যায়, মাউশির প্রতি অঞ্চলে দুই মাস পরপর এমপিওসংক্রান্ত আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়। প্রতি চক্রে (২ মাস) গড়ে দুুই থেকে আড়াই হাজার ব্যক্তির আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে শিক্ষক এমপিওভুক্তির আবেদন ৪ থেকে ৫শ, কর্মচারী ২-৩শ, উচ্চতর স্কেল ৫-৬শ, বকেয়া দাবি দেড় থেকে ২শ এবং সংশোধনীর জন্য দেড়শ থেকে ২শ।
ঢাকা অঞ্চলে শুধু চলতি চক্রে উপপরিচালকের দপ্তরে সেবাপ্রার্থী তিন হাজার। সূত্র জানায়, যদি প্রভাবশালীদের তদবিরে এক হাজার নিষ্পত্তি আর ৫শ ‘রিজেক্ট’ বা ফেরত দেওয়া হয়, তাহলে অন্তত দেড় হাজার ব্যক্তি ঘুসের শিকার হন।
আবার গড়ে প্রতি ব্যক্তির কাছ থেকে তিন হাজার টাকা আদায় করা হলে এর অঙ্ক দাঁড়ায় ৪৫ লাখ টাকা। যেহেতু বিভিন্ন ধরনের কাজে আলাদা রেট থাকে। তাই গড়ে প্রতি ব্যক্তির কাছ থেকে পাঁচ থেকে সাত হাজার করে আদায় ধরা হলে প্রতি চক্রের এমপিওতে ৭৫ লাখ থেকে এক কোটি টাকার উপরে ঘুস লেনদেন হয় কেবল একটি অঞ্চলে।
ঢাকা অঞ্চলে বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, ভবনটির ছাদে দুই শিক্ষকের সঙ্গে লেনদেন চলছে। পরে তাদের সঙ্গে ভবনের বাইরে ফুটপাতে কথা বলে জানা গেল তারা নারায়ণগঞ্জের পাগলা হাইস্কুলের শিক্ষক।
একজন বাংলার আরিফুল ইসলাম এবং অপরজন শারীরিক শিক্ষার মশিউর রহমান। তারা জানান, তাদের স্কুলের ১৪ জনের কাজ নিয়ে রাবেয়া সুলতানার সঙ্গে চুক্তি করেছেন। ওইদিন অর্ধেক দিয়েছেন, বাকি টাকা রোববার দেবেন।
এভাবে রোববার সরেজমিন উপপরিচালকের দপ্তরের আরও দুই কর্মচারীকে সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে দরকষাকষি করতে দেখা যায়। এমনকি দুপুরে বক্তব্য নিতে এ প্রতিবেদক উপপরিচালক এএসএম আবদুল খালেকের কক্ষে অবস্থানকালে মোতালেব নামে এক পিওন এসে রাবেয়ার সঙ্গে চুক্তিকৃত ঘুসের ১৫ হাজার টাকা নিতে আসেন।
সূত্র জানায়, দৈনিক রাবেয়া বা তার সহকর্মীরা যে অর্থ সংগ্রহ করেন, তা অফিসের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় উপপরিচালককে পৌঁছে দেন। বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে এ প্রতিবেদকের সামনে দিয়ে উপপরিচালক ও রাবেয়া অফিস থেকে বেরিয়ে যান।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রোববার উপপরিচালক খালেক বলেন, তিনি ঢাকা অঞ্চলে নতুন যোগ দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত এমপিও-সংক্রান্ত কোনো কাজ করেননি। তখন ঘুস লেনদেনের অডিও-ভিডিও এবং এ প্রতিনিধি স্বয়ং ঘুস দেওয়ার কথা উল্লেখ করলে তিনি বলেন, যারা নিয়েছে তাদের গিয়ে ধরেন।
উল্লেখ্য, মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোয় ঘুসখোরদের ওপর ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদনে এমপিও কার্যক্রমে অনিয়ম-দুর্নীতি সারা দেশে ৮৬ ব্যক্তি জড়িত বলে উল্লেখ আছে।
মাউশিতে তখন পাঠানো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত এক চিঠিতে বলা হয়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণে দুর্নীতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গোপনীয় প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লিখিত সুনির্দিষ্ট অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে এ বিভাগকে (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা) অবহিত করতে বলা হয়।
ওই ৮৬ দুর্নীতিবাজের মধ্যে মাউশির প্রধান কার্যালয়ের দুই উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, আঞ্চলিক উপপরিচালক, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং ওইসব দপ্তরের কর্মচারীরা আছেন।
তাদের মধ্যে খালেক নামের একজন আছেন। তখন তিনি ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপপরিচালক ছিলেন। লেনদেন বিশ্বস্ত লোকের মাধ্যমে সারতে তখন তিনি নিজের স্ত্রীকে ওই অঞ্চলের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার পদে বদলি করে আনার ঘটনাও আছে।
তার বেপরোয়া অনিয়ম ও দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ করেছিলেন তারই তৎকালীন পরিচালক অধ্যাপক মো. আ. মোতালেব। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি নির্দেশে ঢাকা অঞ্চলের তখনকার পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ তদন্ত করেন। পরে খালেককে সরানো হলেও রহস্যজনক কারণে তাকে খুলনা অঞ্চলে পদায়ন করা হয়। এরপর তিনি ঢাকা অঞ্চলে পদায়ন পান।
সূত্র বলছে, এভাবে এমপিও-সংক্রান্ত কাজে ভূরিভূরি অভিযোগ আছে। কিন্তু অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির কম। শুধু তাই নয়, গোয়েন্দা প্রতিবেদনের আলোকে চার উপপরিচালকসহ ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া সংক্রান্ত ফাইল তখন গায়েব হয়ে যায়। এখনো সবাই বহালতবিয়তে চাকরি করে যাচ্ছেন।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।