বিলুপ্তির পথে যাত্রাশিল্প


‘যাত্রা আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য। কিন্তু আমাদের গ্রাম-বাংলার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্যে আজ বিলুপ্তির পথে যাত্রাপালা। দুর্গাপূজা এবং শীতকাল হচ্ছে যাত্রাপালার ভরা মৌসুম। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এই ভরা মৌসুমেও যাত্রাশিল্পের সঙ্গে জড়িতরা সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা অভাবেই বিনোদনের জনপ্রিয় এই মাধ্যমটি আজ ঝুঁকির মধ্যে।যাত্রার ক্রমবিকাশ সম্পর্কে যাত্রা গবেষক ও কবি ড. তপন কুমার বাগচী লিখেছেন, ‘১৮৬০ সালে ঢাকায় কৃষ্ণকমল গোস্বামী (১৮১১-৮৮) কৃষ্ণ বিষয়ক ঢপ কীর্তন পরিবেশনের পাশাপাশি পৌরাণিক পালা রচনা ও মঞ্চায়নের মাধ্যমে যাত্রার যে গতি সঞ্চার করেন, চারণকবি মুকুন্দ দাসের (১৮৮৭-১৯৩৪) হাতে তা হয়ে ওঠে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের জাগরণী মন্ত্র।’ কিন্তু সেই জাগরণী মন্ত্র আজকে যাত্রা পেশাদারি শিল্প মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে নানারকম ঝুঁকির মুখে পড়েছে।৯০’র পর থেকে অশ্লীলতা, নিরাপত্তা সমস্যাসহ নানা অজুহাতে যাত্রাশিল্পকে আবদ্ধ করা হয় নিয়ন্ত্রণের বেড়াজালে। যাত্রাপালা আয়োজনে জেলা প্রশাসনের অনুমোদন দরকার হয়। কিন্তু যাত্রার কথা শুনলেই আজকাল অনেক ক্ষেত্রেই প্রশাসন আর অনুমোদন দিচ্ছে না। জাতীয় শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে সোমবার যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে যাত্রা উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দে বলেন, ‘যাত্রা নিয়ে প্রশাসনের অনুমতির খেলা আর সহ্য করা হবে না।এবার যেখানে যাত্রার বাতি জ্বলবে না, সেখানে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’ সরকার শিল্প-সংস্কৃতি চর্চায় অনুপ্রাণিত করলেও মাঠপর্যায়ের অবস্থা খুবই জীর্ণশীর্ণ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, জঙ্গি হামলা এমন নানা অজুহাত দেখিয়ে যাত্রার অনুমোদন বন্ধ রাখা হয়। যাত্রাশিল্পের আয়োজকদেরও অনেকে দায়ী করেন যাত্রাশিল্প বন্ধ হওয়ার জন্য। তাদের ভাষ্য, আয়োজকদের উদ্যোগের অভাবে যাত্রাশিল্প এখন বন্ধের পথে।এমন অনেক আয়োজক রয়েছেন, যারা যাত্রাকে সামনে রেখে অশ্লীলতা প্রদর্শন ও অন্যান্য ব্যবসার জন্য ব্যস্ত থাকেন। যে কারণে অনেক সময় প্রশাসন অনুমতি দেয় না। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ যাত্রাশিল্প প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের দেশের যাত্রাশিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। একে বাঁচাতে হলে প্রথমত এগিয়ে আসতে হবে যাত্রাসংশ্লিষ্টদের। তাদের এক হতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কাজের সফলতা আসে না। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যাত্রাশিল্পের পাশে আছে। দেশের প্রায় প্রত্যেকটি জেলায় আমাদের জোটের শাখা আছে। যাত্রাপালা পরিবেশনার অনুমতির জন্য জোটের শাখা থেকে যাত্রাশিল্পীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ডিসির অনুমতি চাইব। তাতে না হলে কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা প্রচেষ্টা চালাব।’