উত্তরের চার জেলায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি


কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে লালমনিরহাট, রংপুরের কাউনিয়া, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীর ডিমলায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। চরাঞ্চলগুলোর ঘরবাড়ি ও ফসলি জমিতে পানি উঠে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। পানির তোড়ে ভেসে গেছে অনেক পুকুরের মাছ। বেশ কিছু স্থানে তিস্তার বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদী পাড়ের মানুষ। এতে রাস্তাঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। অনেকে গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন। ফসলি জমিতে পানি ওঠায় নষ্ট হচ্ছে আগাম শীতকালীন শাকসবজি, বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল। ইতোমধ্যে পানির চাপ কমাতে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। এদিকে, ত্রাণ নয়, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন চান তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-লালমনিরহাট : পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতোমধ্যে জেলার তিস্তার তীরবর্তী ৫টি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বেশকিছু গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে কয়েকটি বিদ্যালয়ে পানি উঠে পড়ায় ওইসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধিতে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রমনীগঞ্জ, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, গোবর্ধন, বাহাদুরপাড়া, কালমাটি, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, বড়বাড়ি, রাজপুর, গোক্লুা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নে শনিবার রাতে সলেডি স্প্যার বাঁধ-২ এর উপর দিয়ে পানি উপচে পড়ছে। এ কারণে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ভাটিতে থাকা শত শত পরিবার। স্থানীয়রা রাত জেগে বাঁধে বালুভর্তি বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষার প্রাণন্তকর চেষ্টা চালিয়েছেন।এই অবস্থায় রোববার লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার মহিষখোচা ইউনিয়নের পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।রংপুর ও কাউনিয়া : রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়ায় প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কাউনিয়ায় শতাধিক পুকুর ও মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে। পানি বৃদ্ধি পেলে আরও নতুন নতুন এলাকায় বন্যা দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে করে তিস্তা ব্যারাজের ভাটিতে অবস্থিত কাউনিয়ার তিস্তা তীরবর্তী চরাঞ্চল এলাকার বাসিন্দারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, কাউনিয়ার তিস্তা রেল সেতু পয়েন্টে রোববার দুপুরে তিস্তার পানি ২৯.৬৩ সেন্টিমিটার অর্থাৎ বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তিস্তার তীরবর্তী রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা, বিদ্যানন্দ ও উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া, বজরা, থেতরাই, গুনাইগাছ ও চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নের চর ও নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৪ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গ্রামীন কাঁচা সড়কসহ ১৫৯ হেক্টর জমির রোপা আমন ও মৌসুমি ফসলের খেত নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।ডিমলা (নীলফামারী) : উপজেলায় পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকিতে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। বন্যা ও ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নদীপাড়ের হাজারো মানুষ। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের সবকটি জলকপাট কয়েকদিন ধরে খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। রোববার সকালে ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ০২ সে.মি উপরে প্রবাহ দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। বেলা ৩টায় তা কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ী, পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রাম ও নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় প্রায় ২ হাজার ৫শ’ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও টানা বৃষ্টিপাতে পানি বাড়ার ফলে উপজেলার সব নদ-নদীর পানির পাশাপাশি বিলের পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত আছে।বাইশ পুকুর এলাকার সবুজ মিয়া বলেন, আমাদের বাড়িতে পানি উঠেছে। হয়তোবা মধ্যরাতে আবারও পানি বাড়বে। এরকম পরিস্থিতিতে নদীপাড়ের বাসিন্দারা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত্রীযাপন করছে।নীলফামারীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, তিস্তার বিষয়টি প্রশাসনের নজরে রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সার্বিক দেখভাল করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) : দেওয়ানগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। রোববার সন্ধ্যা ৬টায় যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় ৫৮ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পায়। দেওয়ানগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার আব্দুল মান্নান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, পানি আরও বাড়তে পারে।