কুষ্টিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে মাসে কোটি টাকা চাঁদার অর্ধেক পেতেন হানিফ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর বদলে গেছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। থেমে গেছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ অনুসারীদের সিন্ডিকেটের চাঁদাবাজি। তবে অভিযোগ উঠেছে, বিএনপির একাধিক গ্রুপ রেজিস্ট্রি অফিস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। তারা আগের সিন্ডিকেট পরিচালনাকারীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন। অবশ্য জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করলে, তার বিরুদ্ধে দল কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’হানিফ সিন্ডিকেটের হোতা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাবুর বড় ভাই ওয়াহেদুজ্জামান লাইজু ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সোহেল রানা আশা। অভিযোগ রয়েছে, দলিল সম্পাদনে আসা ব্যক্তিদের জিম্মি করে সমিতির নামে মাসে কোটি টাকা আদায় করতেন লাইজু ও আশা। তাদের দাপটে সবাই ছিলেন তটস্থ। অবৈধ অর্থের বড় অংশ পেতেন হানিফ ও তাঁর ভাই আতাউর রহমান আতা। কাউন্সিলর আশা অনুগত ছিলেন আতার। ৫ আগস্টের একটি হত্যা মামলায় তিনি এখন কারাগারে। আর গা-ঢাকা দিয়েছেন লাইজু।
সরেজমিন রেজিস্ট্রি অফিস ঘুরে দলিল সম্পাদনে আসা ব্যক্তি ও দলিল লেখকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ৫ আগস্টের আগে ১০ লাখ টাকার দলিল করতে সরকারি খরচের বাইরে সমিতির নেতাদের ৬ হাজার টাকা দিতে হতো। ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার দলিলে লাগত ১৩ হাজার টাকা। কোনো সাব-রেজিস্ট্রার লাইজু-আশার কথার বাইরে গেলে বদলি এমনকি অফিসে জিম্মি করেও নির্যাতন করা হতো। তবে এখন নেই কোনো সমিতি। লাইজুর অফিসও বন্ধ। দলিল লেখকরা জানান, স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন ৫ আগস্টের পরে বেশ কয়েকদিন কর্মী পাঠিয়ে টাকা তোলেন। তবে মুহুরি ও দলিল সম্পাদনে আসা মানুষের প্রতিবাদের কাছে তারা হার মানেন।একাধিক সাধারণ দলিল লেখক জানান, আগে দিনে ১০০-১৫০টি দলিল সম্পাদন হতো। সরকারি খরচ ছাড়াও লাখ লাখ টাকা তোলা হতো অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সমিতির নামে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় টাকার হিসাব বুঝে নিতেন সমিতির নেতারা। মাস শেষে কোটি কোটি টাকা বাটোয়ারা হতো সাবেক এমপি হানিফের বাসায়। টাকা বুঝে নিতেন হানিফের ভাই আতা। অবশ্য সমিতির আয়ের একটি অংশ সাধারণ দলিল লেখকদেরও দেওয়া হতো। সাব-রেজিস্ট্রার প্রতি দলিলে ১ হাজার ও অফিসের অন্যরা পেতেন ৫০০ টাকা করে। এখন সমিতির নামে চাঁদাবাজি বন্ধ হলেও সাব-রেজিস্ট্রার ঠিকই তা ভাগ বুঝে নিচ্ছেন।
সাব-রেজিস্ট্রার রাসেল মল্লিক বলেন, ‘অফিসে চাঁদাবাজি নেই। অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্থানীয় সূত্র জানায়, হানিফের প্রভাব খাটিয়ে লাইজু ও আশা পুরো সমিতি কবজায় নেন। তারা মাসে কোটি টাকার বেশি আদায় করতেন। কোনো মাসে তা ঠেকেছে আড়াই থেকে তিন কোটি। এসব টাকার অর্ধেক নিতেন হানিফ ও তাঁর ভাই। বাকি টাকার একটি অংশ লাইজু-আশাসহ কয়েকজন দলিল লেখক পেতেন। সাংবাদিকসহ বিএনপির স্থানীয় কয়েক নেতার ভাগও ছিল। সমিতির নামে আদায় করা অর্থে এক দশকেই লাইজু ও আশা কোটিপতি বনে গেছেন। সূত্র-সমকাল
