চাঁপাইনবাবগঞ্জে লোকো চক্ষুর আড়ালে কারাগারে চলছে ঘুষ বাণিজ্য, লেন-দেন বিকাশে মাধ্যম ।


চাঁপাইনবাবগঞ্জে লোকো চক্ষুর আড়ালে কারাগারে চলছে ঘুষ বাণিজ্য, লেন-দেন বিকাশে মাধ্যম ।
‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’- চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারের এই স্লোগান শুধু দেয়ালেই সীমাবদ্ধ। দুর্নীতি যেন এ কারাগারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। বন্দীদের নির্যাতন, সাক্ষাৎ-বাণিজ্য, সিট-বাণিজ্য, খাবার-বাণিজ্য, চিকিৎসা-বাণিজ্য এবং জামিন-বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করে কারা কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কারারক্ষীদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারার অভিযোগে উঠেছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র।অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে কারা কর্তৃপক্ষ ঘুষের টাকা জামিনপ্রাপ্ত আসামীর পরিবারের কাছ থেকে বিকাশে গ্রহণ করেন। বন্দীর পরিবার অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে তাকে আমদানি কক্ষেই রেখে দেয়া হয়। আরও জানা যায়, বন্দীদের পিসি বইতে (কারা অভ্যান্তরের ক্যান্টিনের খাবার কেনার জন্য পরিবার বা বন্দী যে টাকা জমা রাখে তার হিসাব বহি)যত টাকা থাকে জামিনে বের হবার সময় সেসব টাকাও নিয়ে নেয় কারারক্ষি, অফিসের স্টাফ, কর্তৃপক্ষ, রাইটার ও ম্যাটেরা। একরকম অসহায় অবস্থায় বের হতে হয় জামিনপ্রাপ্তদের। এসব তথ্য জানায় জেল থেকে বেরিয়ে আসা বন্দীরা। এছাড়াও বন্দীদের দেয়া হয় মানহীন খাবার। এসব নিম্নমানের খাবার সরবরাহের সঙ্গে কারারক্ষীসহ জেল সুপার সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।কারাগারের নিয়ন্ত্রণে দুটি ক্যান্টিন রয়েছে। একটি কারাগারের ভেতরে, অন্যটি বাইরে। বাইরের ক্যান্টিনে কোন মূল্য তালিকা নেই। ভেতরের ক্যান্টিনের পরিবেশ অত্যন্ত নাজুক। দুই ক্যান্টিনেই সিগারেট, কলা, বিস্কুট, কেক আপেলসহ অন্যান্য প্রতিটি পণ্যের দাম অনেক বেশি নেয়া হয়। বন্দীদের পিসিতে ১ হাজার পাঠালে ২০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়। অথচ রশিদে লেখা হয় ১ হাজার টাকা। ভেতরের ক্যান্টিনে ক্রয়কৃত মালামালের বিপরীতে মূল্য পিসি (প্রিজনার ক্যাশ) কার্ড থেকে কর্তন করা হয়। শুধুমাত্র কর্তনকৃত মোট টাকার পরিমাণ থাকে। কোন পণ্যের নাম লেখা থাকে না।নির্ভরযোগ্য সূত্র ও জামিনে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসা একাধিক বন্দী জানিয়েছেন- কারাগারের প্রতিটি ওয়ার্ড ইজারা দেয়া হয়। ম্যাট, সিও ম্যাট, সিআইডি ম্যাট, পাহারাদার ও ওয়ার্ড রাইটার এসব ওয়ার্ড বরাদ্দ নিয়ে থাকে। নির্দিষ্ট ইজারা মূল্য কারা কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করতে বাধ্য করে।সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন সন্ধ্যায় কারাগারের সামনে জামিনপ্রাপ্ত আসামির স্বজনদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা যায়। জামিনপ্রাপ্ত আসামির স্বজনদের কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। বন্দীরা আদালত থেকে জামিনলাভ করলেও অর্থ প্রদান না করলে জামিননামা আটকিয়ে রেখে মুক্তি বিলম্বিত করা হয়। এর জন্য সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা দিতে হয়।অভিযোগ আছে, বন্দীদের খাবার, স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ, কারাগারে ভালো স্থানে থাকার ব্যবস্থা- এ সবকিছু চলে টাকার বিনিময়ে। টাকার বিনিময়ে সোনা চোরাকারবারি ও মাদক কারবারিরাও কারাগারে বিলাসী জীবনযাপন করে। কারাগারকে বলা হয় সংশোধনাগার। সেখানে অপরাধীদের রাখা হয় কৃত অপরাধের সাজা প্রদানের পাশাপাশি সংশোধনের উদ্দেশ্যে। সেই কারাগারেই চলছে নানা ধরনের অপরাধকর্ম।জানা গেছে জেল সুপারের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে এই অনিয়ম ও দুর্নীতির সিন্ডিকেট। অন্তত ৩-৪শ’ বন্দীর কাছে মাসে সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড ভাড়া উত্তোলন করা হয়। অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত বেড ভাড়ার নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কারা কর্তৃপক্ষের পকেটে যায়। বাকি টাকা ম্যাট, পাহারাদার ও ওয়ার্ড রাইটারদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়।চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতের এক আইনজীবী জানান, আদালত থেকে আসামির জামিনাদেশ পাওয়ার পরও কারা কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে কালক্ষেপণ করে থাকে। বিভিন্ন সময় দাঁড়ি-কমার ভুল দেখিয়ে নানা অজুহাতে আসামি প্রতি দুই-তিন হাজার টাকা দাবি করে। ঘুষের টাকা না দিলে মুক্তি দিতে টালবাহানা করে। প্রতিনিয়ত এ ধরনের ধৃষ্টতা দেখিয়ে থাকে কারা কর্তৃপক্ষ।এসব বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার মোঃ মুজিবুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি রাগতঃ কর্কশ ভাষায় বলেন, আমি মোবাইলে কোন তথ্য দিবো না। আপনি যেই হন না কেন আমার সাথে অফিসে দেখা করেন। যা বলার সামনা-সামনি বলবো। তাকে ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে প্রশ্ন করতে গেলে তিনি ধমকের স্বরে বলেন, আপনি কথা বন্ধ করেন, বলে ফোন কেটে দেন।

Archive Calendar

SatSunMonTueWedThuFri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728

Archive Calendar

SatSunMonTueWedThuFri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728