জাহাঙ্গীরের আয় ও সম্পদ কমেছে


জাহাঙ্গীরের আয় ও সম্পদ কমেছে
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে তিন বছরের বেশি সময় থাকার পরও অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের সম্পদ ও বার্ষিক আয় দুই-ই কমেছে। এবার হলফনামায় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন সাড়ে ৯ লাখ টাকা। অথচ পাঁচ বছর আগে তার বার্ষিক আয় ছিল ২ কোটি ১৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। তবে বার্ষিক আয়ের ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীরের চেয়ে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান এগিয়ে আছেন। তার বার্ষিক আয় ৩১ লাখ ৬৫ হাজার ৫০৫ টাকা। আজমত উল্লার চেয়ে জাহাঙ্গীরের সম্পদ এখনো বেশি। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দুই প্রার্থী হলফনামা জমা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এন নিয়াজ উদ্দিনের হলফনামা থেকে তার বার্ষিক আয় চার লাখ টাকা বলে জানা গেছে। জাহাঙ্গীর আলম : ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব নেন জাহাঙ্গীর আলম। তিন বছরের বেশি সময় তিনি মেয়রের পদে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তির দায়ে ২০২১ সালের শেষের দিকে মেয়র থেকে তিনি বরখাস্ত হন। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মেরও অভিযোগ ওঠে। এ সময় তার বিরুদ্ধে আটটি মামলাও হয়। নানা অভিযোগে তাকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। দলের সাধারণ ক্ষমা পেলেও তিনি আর মেয়র পদে ফিরতে পারেননি। এবারের নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়নও পাননি।জাহাঙ্গীর আলমের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে-পাঁচ বছর আগে কৃষি খাত থেকে তার বার্ষিক আয় ছিল দেড় লাখ টাকা। এবারে কৃষি খাতে আয় দেখিয়েছেন দুই লাখ ২০ হাজার টাকা। বাড়ি ও দোকান ভাড়া আগে ছিল চার লাখ ৩০ হাজার টাকা, এবারেও একই অঙ্ক দেখিয়েছেন। ব্যবসা থেকে আগে আয় দেখান ৯৪ লাখ ২০ হাজার টাকা, এবার আয় দেখিয়েছেন মাত্র ৩ লাখ টাকা। পাঁচ বছর আগে তার স্থাবর সম্পদের মধ্যে কৃষিজমি ছিল ১৪১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। এবারে তার কোনো কৃষিজমি নেই। আগে অকৃষি জমি ছিল ৩৩ দশমিক ৭১২৫ শতাংশ। এবার অবশ্য তার অকৃষি জমি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১৫ দশমিক ২১ শতাংশ। আবাসিক সম্পদ আগে ছিল ৭ দশমিক ৪৩৭ শতাংশ। এবারে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ দশমিক ১৫ শতাংশ। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তার হাতে রয়েছে নগদ ৪০ লাখ টাকা। পাঁচ বছর আগে ছিল ৭ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। ব্যাংকে তার জমা ৫০ হাজার টাকা। আগে ছিল এক লাখ ৫৫ হাজার ৯৭১ টাকা। এবারে তিনি তালিকাভুক্ত ও নন-তালিকাভুক্ত শেয়ারের মূল্য দেখিয়েছেন অনারেবল টেক্সটাইলে ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং জেড আলম এপারেলসে ২০ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ দেখিয়েছেন ১০ লাখ টাকা। আগের বারে তিনি ব্যবসায় বিনিয়োগ দেখিয়েছিলেন ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ৭৮৭ টাকা, সঞ্চয়পত্রে ১০ লাখ টাকা।এ ছাড়া জাহাঙ্গীর আলমের দুটি গাড়ি, ৩৫ ভরি সোনা, একটি বন্দুক ও একটি পিস্তল, ইলেকট্রনিক সামগ্রী এবং আসবাবপত্র আগের মতো রয়েছে। পাঁচ বছর আগে তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা ছিল না। তবে মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে আটটি ফৌজদারি মামলা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও মামলা হয়েছে।আজমত উল্লা খান : জাহাঙ্গীর আলমের চেয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আইনজীবী আজমত উল্লা খানের বার্ষিক আয় বেশি। আজমত উল্লার বার্ষিক আয় ৩১ লাখ ৬৫ হাজার ৫০৫ টাকা। এর মধ্যে পেশা থেকে তার বার্ষিক আয় ৬ লাখ টাকা। এর বাইরে শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক সুদ থেকে তার বার্ষিক আয় ৬২ হাজার ৫০৫ টাকা। কৃষি ও তৈরি পোশাকসহ তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি বার্ষিক ২৪ লাখ তিন হাজার টাকা সম্মানি ভাতা পান। এ ছাড়া তার লেখা দুটি বই বিক্রি থেকে বার্ষিক আয় এক লাখ টাকা। ২০২১ সালে ‘রাজনীতির মহাকবি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ এবং ২০২২ সালে ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব গুণ, আদর্শ ব্যক্তি ও জাতি গঠনে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত’ নামে তার লেখা দুটি বই প্রকাশ হয়।অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আজমত উল্লার হাতে নগদ ৪ লাখ ৩১ হাজার ৭৩৬ টাকা টাকা। স্ত্রীর কাছে দুই লাখ ৩৪ হাজার ৫০৬ টাকা রয়েছে। তার নিজের কোনো যানবাহন নেই। তবে স্ত্রীর একটি প্রাডো গাড়ি রয়েছে। নিজের সোনা ২০ তোলা এবং স্ত্রীর সোনা ৩০ তোলা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে আজমতের কোনো কৃষিজমি নেই। অকৃষি জমি নিজের নামে ১৪০ দশমিক ৬৩৭৯ শতাংশ এবং স্ত্রীর নামে ২৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ রয়েছে। ৭ শতাংশ জমির ওপর তার নির্মাণাধীন বাড়ি। আগে আজমত উল্লার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাসহ তিনটি ফৌজদারি মামলা ছিল। এর মধ্যে টঙ্গী থানার হত্যা মামলার চার্জশিট থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বাকি দুটি মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।নিয়াজ উদ্দিন : জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী সাবেক সচিব এমএন নিয়াজ উদ্দিনের বার্ষিক আয় চার লাখ টাকা। তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে-নগদ ১২ লাখ ১৯ হাজার ৯৩৪ টাকা ও ব্যাংকে দুই লাখ টাকা। আছে ৫০ ভরি স্বর্ণ। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে-৩ দশমিক ৬৬ একর কৃষিজমি ও সাত বিঘা অকৃষি জমি। তার পৌনে তিন কোটি টাকা ঋণ রয়েছে।সরকার শাহনুর ইসলাম : মেয়র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলামের পেশা থেকে কোনো আয় নেই। তবে বাড়ি ভাড়া থেকে বার্ষিক আয় ৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদ বলতে তার কিছু নেই। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে-২৫ লাখ টাকা। ব্যাংকে জমা সাড়ে ১০ লাখ টাকা। তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে।