জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
অনলাইন নিউজ ডেক্স
বহুল আলোচিত ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারিক আদালতের রায় হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাদের ভাষ্য, দেশের ইতিহাসে এই বিচারিক আদালতে বিচার প্রক্রিয়াকে অবৈধ ঘোষণা করে সব আসামিকে মুক্ত করা হয়েছে।
কারও অভিমত, এতে হতাহতরা বিচারবঞ্চিত হয়েছেন। আবার কেউ বলছেন, বিচারের ত্রুটি তুলে ধরে হাইকোর্ট সঠিক রায় দিয়েছেন। মামলার বাদীরা আপিল করতে পারেন। পাশাপাশি পুনঃতদন্ত এবং বিচারের আবেদনও করতে পারেন। রাষ্ট্রপক্ষও আপিল করতে পারে। হাইকোর্টই পুনঃতদন্ত ও বিচারের নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা, তা পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর বলা যাবে।
পুনঃতদন্ত এবং বিচারের বিষয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক বলেন, ঘটনার ২০ বছর পর প্রকৃত আসামি খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। রাজনৈতিক নেতাসহ সব আসামিকে হাইকোর্ট খালাস দিয়েছেন। অন্য আসামি থাকলে (যারা গ্রেনেড হামলায় জড়িত) তাদের বিষয়ে চিন্তা করা যেত। কিন্তু এখন তো আর আসামি নেই। অর্থাৎ, এখানেই মামলা শেষ। শাহ্দীন মালিক বলেন, পশ্চিমা দেশে এমন মামলায় যারা খালাস পান, তারা দীর্ঘ কারাবাসের জন্য রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। আমাদের দেশে ক্ষতিপূরণ চাওয়া ও পাওয়ার নজির নেই। এটা থাকলে ভবিষ্যতে শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় আসামি করে দোষী সাব্যস্তের প্রবণতা কমত।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, মামলাটি শুরু থেকেই রাজনীতিকীকরণ হয়েছে। তদন্তে পুলিশ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেনি। হাইকোর্টের রায়ের পর এখন আর মামলার ভবিষ্যৎ নেই। মামলাটি এখানেই মরে গেল। তবে ক্ষতিগ্রস্তরা পুনঃতদন্তে আপিল বিভাগে আবেদন করতে পারবেন। রাষ্ট্রপক্ষও করতে পারবে। বেনিফিট পাবেন কিনা, বলা দুষ্কর।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল স্মরণকালের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। এ ন্যক্কারজনক ঘটনায় সারাবিশ্ব হতবাক হয়েছিল। বিচারিক আদালতে সবার সাজা হয়েছে, কিন্তু হাইকোর্ট সবাইকে খালাস দিয়েছেন, কীভাবে হলো, আশ্চর্য হলাম। কোন বিবেচনায় সব আসামি খালাস পেলেন, বুঝতে পারছি না। সব ঘটনায় তো চাক্ষুষ সাক্ষী থাকে না। পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে আদালত রায় দেন। এখন এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ এবং ক্ষতিগ্রস্তরা আপিল করতে পারেন।
ফৌজদারি বিশেষজ্ঞ আইনজীবী আমিনুল গণি টিটো বলেন, ২০ বছর আগে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটেছে, এটা সত্য। কিন্তু কারা গ্রেনেড ছুড়েছে, সঠিকভাবে তা এখনও বের করা হয়নি। সেই সময় তদন্তে অনেক গলদ ছিল, আইনি ত্রুটি ছিল। বিচারের সময় প্রসিকিউশন অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু পুলিশি তদন্ত ভালো ছিল, বলা যাবে না। মামলার প্রথম দিকে আমি আসামি আরিফ হাসান সুমনের আইনজীবী ছিলাম। পরবর্তী সময়ে তিনি আর মামলা চালাতে পারেননি।
হাইকোর্ট সঠিক রায় দিয়েছেন মন্তব্য করে আমিনুল গণি বলেন, এ মামলার ভবিষ্যৎ নেই। আপিল করলেও খুব ভালো সুবিধা করতে পারবে বলে মনে হয় না। ২১ আগস্টের সমাবেশ মুক্তাঙ্গনে হওয়ার কথা ছিল। পুলিশি বাধায় কেন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশ হলো, এর সঠিক তদন্ত আজও হয়নি, যা করা উচিত ছিল।
হাইকোর্ট রায়ে বলেন, সাক্ষীরা ঘটনার বর্ণনা করেছেন। কিন্তু কে গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছেন, তা কেউ সাক্ষ্য দেননি। কে গ্রেনেড দিয়েছে, তা অভিযোগপত্রে নেই। আইনের ভিত্তিতে বিচারিক আদালতে বিচার হয়নি। এক সাক্ষীর সঙ্গে অন্য সাক্ষীর সাক্ষ্যে সামঞ্জস্যতা নেই।
লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ভারত উপমহাদেশে ৪০০ বছরের বিচারিক ইতিহাসে দ্বিতীয় জবানবন্দির ভিত্তিতে কাউকে সাজা দেওয়ার নজির নেই।
জয়নুল কমিশনের প্রতিবেদন
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার তিন দিন পর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের একক নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন। এক মাস ১০ দিনের তদন্ত শেষে ১৬২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। হামলার জন্য ভারতকে ইঙ্গিত করে এতে বলা হয়েছিল, বিদেশি শক্তি জড়িত, যা সমালোচিত হয়।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।