টঙ্গীবাড়ী এক সড়কের ৫ টি সেতুর গোড়া ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ।
অনলাইন নিউজ ডেক্স

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার একটি সড়কের ৫টি সেতুর নিচের পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে স্থাপন নির্মাণ করা হয়েছে। এতে সেতুগুলোর পাশের কয়েকটি বিলের চাষি জমিতে জলবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় টঙ্গীবাড়ী উপজেলার বলই গ্রাম হতে পাশের আড়িয়ল বাজার হয়ে ভাটনিসার সংযোগ সড়কের ৫ কিলোমিটার অংশের ৫টি সেতুর গোড়া ভড়াট করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে কতিপয় ভূমিদশ্যূ। ফলে উপজেলার কয়েকটি বিলে জলবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। অনেক আবাদী জমি অনাবাদী হয়ে পরেছে। এছাড়া ২ ফসলি ও ৩ ফসলী জমিগুলোতে এখোন এক ফসল উৎপাদন করতে কস্ট হচ্ছে কৃষকের। কিছু কিছু নিচু জমিতে সেচ মেশিন দিয়ে পানি সেচেঁও ঠিকমতো আবাদ করতে পারছেনা কৃষক।ওই ৫ সেতুর মধ্যে ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে এলজিইডি ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার ৭৪১ টাকা ব্যায়ে ওই রাস্তার বলই খালের উপরে একটি কালভার্ট ( ছোট সেতু) বাস্তবায়ন করে। গত ২১মার্চ ১৯৯৬ ইং তারিখে ওই সেতুটির কাজ সমাপ্ত করা হয়। সেতুটির নিচের খালটি বলই বিল হতে বলই গ্রামের ভিতর দিয়ে দোরাবর্তী হয়ে আমতলী হয়ে টঙ্গীবাড়ি খালের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। খালটি দিয়ে বলই, দামপাড়া, আউটশাহী, পুড়াপাড়া, বিলের জমির পানি নিস্কাশন হতো। এক সময় এ খাল দিয়ে নৌকা চড়তো মানুষ ও যাতায়াত করতো। কিন্তু ওই স্থানে নির্মিত সেতুটি সরু হওয়ায় পাশের বিলগুলোর পানি নিস্কাশনে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ওই সেতুর পাশে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় আর আর এম আই এমপিকে প্রকল্পের আওতায় বলই ভাটনিসার রাস্তার উপরে ১৫০ মিটার চেইনেজ ৩০মি. আরেকটি সেতু ১০ লক্ষ ৯৬ হাজার ২৭৭ টাকা ব্যায়ে নির্মাণ করা হয়। সেতুটির কাজ গত ৩০শে মার্চ ২০০০ সালে সমাপ্ত হয়। তারপর হতে পাশাপাশি ওই দুটি সেতুর নিচ দিয়ে বিলের পানি নিস্কাশিত হচ্ছিল।কিন্তু বলই গ্রামের মোহন সেখ, রাজন ও সুমন গংরা ওই সেতু দুটির পশ্চিম পাশের গোড়ার একটি সেতুর সম্পূর্ণ অংশ ও আরেকটি সেতুর গোড়ার আংশিক অংশ ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ করেন। পরে আংশিক অংশ ভরাট করা সেতুটির পুরো অংশ ভরাট করে আরাফাত নামের ব্যাক্তি আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করেন। যার কারনে ওই সমস্ত বিলে আবাদী জমিগুলোতে চাষ নিয়ে বিরম্বনায় পরেছেন কৃষক।বলই এলাকার হোসেন সেখ বলেন , এ রাস্তাটি হওয়ার পরে পানি নামার জন্য বলই খালের উপর প্রথমে ছোট্ট একটি ব্রীজ নির্মান করা হয়। কিন্তু ছোট ব্রীজের নিচ দিয়ে পানি গিয়ে সড়তে না পারায় এখানে পরে আরো একটি ব্রীজ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এখন দুটি সেতুর গোড়ায় ভড়ে ফেলা হয়েছে। যার কারনে পানি জমি হতে না নামতে পারায় আমরা জমিতে ঠিকমতো চাষাবাদ করতে পারছিনা।বলই গ্রামের হাতেম মাদবর বলেন, বলই বিলসহ আশেপাশের বিল হতে পানি নামার জন্য বলই খালের উপরে একেএকে নির্মাণ করা হয় দুটি ব্রীজ। বলই খালটি গ্রামের ভিতর দিয়ে পাশ্ববর্তী আমতলী গ্রাম হয়ে টঙ্গীবাড়ি খালের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। প্রায় ৫ কিলোমিটার এই খালটি দিয়ে আগে নৌকা চড়তো । আমরা গরুর জন্য ঘাস কেটে এই খাল দিয়ে নৌকা বোঝাই করে নিয়ে আসতাম । কয়েকটি বিলের পানি এ খাল দিয়ে নামতো । কিন্তু এখোন খালসহ ব্রীজের গোড়া ভড়াট করে ফেলায় ঠিকমতো পানি নামতে পারছেনা।এ ব্যাপারে ওই খাল ভরাটকারী মোহন সেখ সেতুর গোড়া ভরাটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, যদি সেতুর গোড়া ভরাট করার বিষয়টি অপরাধ হয়ে থাকে তবে আমি সেতুর গোড়া খুলে দিব।ওই খাল দুটির ২ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে আড়িয়ল বাজারের দক্ষিন পাশের খালের উপর আরেকটি সেতুর গোড়া ভড়াট করে আবাসন প্রকল্প বানিয়ে প্লট বিক্রি চলছে। এলাকাবাসী জানান ওই সেতুটি প্রায় ৩০ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। শাহজাহান নামের জনক্য ব্যক্তি এই খালটির পশ্চিম পাশের অংশ ভরাট করেছে। এ খালটি দিয়ে আড়িয়ল ও আশেপাশের বিলের জমির পানি নামতো। আঃ রশিদ (৭০) বলেন, খালটি দিয়ে আরিয়ল গ্রামসহ পাশের বিলের পানি নামতো। ১ বছর আগে খালটির গোড়া সম্পূর্ণ ভরাট করে ফেলা হয়। এ ব্যাপারে শাহজাহান এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।এদিকে একই সড়কের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ফজুশাঁ বাজারের দক্ষিন পাশের পাশাপাশি ২টি সেতুর গোড়ার পশ্চিম পাশের অংশ ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে স্থাপনা । এই খালটি দিয়ে পাশের নিতিরা, যোগানিয়া, আড়িয়ল, ফজুশা, বিলেরপাড় এলাকার বিলের পানি প্রবাহিত হতো। বসাউল্লাহ গ্রামের সেলিম দেওয়ান,রহমান দেওয়ান গংরা। উক্ত খাল দুটি ভরাট করে খালের পশ্চিম পাশের গোড়ায় স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।নিতিরা গ্রামের মানিক হালদার (৭০) বলেন, এই ব্রীজ দুটির নিচ দিয়ে ফজুশা ,বসুউল্লাহ, ভদ্রপাড়া বিলসহ আশেপাশের বিলের পানি নামতো। এখোন ভরাট করায় পানি ঠিকমতো নামতে পারছেনা।স্থাণীয় আরিফ বলেন, জন্মের পর হতেই এখানে সেতু দুটি দেখছি। এখান দিয়ে আশেপাশের বিলের পানি নামতো। তিন বছর আগে ভরাট করে ফেলা হলো। ভরাট করার সময় মানুষ বাধা দিছিল পুলিশ এসেছিল কিন্তু পরে ভরাট করে ফেললো। এখন আমাদের জমির পানি নামে না। আমরা সেলো মেশিন দিয়ে জমির পানি সেচেঁ তারপর চাষাবাদ করি। চাষাবাদ করতে আমাদের অনেক বিলম্ব হয়। এজন্য জমিতে ফলনও কম হয়।এ ব্যাপারে ওই খাল ভরাটকারী সেলিম দেওয়ান বলেন, ওই সেতুর দুই পাশেই আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি । আমরা আমাদের নিজস্ব সম্পত্তি ভরাট করেছি।এ ব্যাপারে টঙ্গীবাড়ি উপজেলা প্রকৌশলী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন বিষয়টি আমার জানা নেই আমি এখনই টিম পাঠিয়ে খোঁজ নেব। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।টঙ্গীবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বিষয় দেখে ব্যবস্হা নেয়া হবে।
