ট্রেন দুর্ঘটনা: দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনুন
মোঃ রাছেল রানা, প্রধান সম্পাদক

গত রোববার সন্ধ্যায় কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হাসানপুর স্টেশনে মালবাহী ট্রেনকে যাত্রীবাহী ঢাকাগামী আন্তঃনগর সোনার বাংলা এক্সপ্রেস পেছন থেকে সজোরে ধাক্কা দিলে সেটি উলটে যায় এবং যাত্রীবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ছয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। তাদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর। অন্যদিকে মালবাহী ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। উল্লেখ্য, আন্তঃনগর সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যেতে ৫ ঘণ্টা ৪০ মিনিট সময় লাগে। ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে ছাড়ার পর কেবল ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে থামে। তাই সব স্টেশনে ট্রেনটির সিগন্যাল ঠিক রাখা জরুরি হলেও এক্ষেত্রে তার ব্যত্যয় হয়েছে বলেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে, সন্দেহ নেই। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দুর্ঘটনার কারণ নির্ণয় করে দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।দুঃখজনক হলো, দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষাপটে আলাদা রেল মন্ত্রণালয় গঠন করা হলেও এতে বিশেষ কোনো লাভ হয়নি। সুলভ ও নিরাপদ বাহন হিসাবে মানুষ রেলভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। অথচ লাগামহীন দুর্নীতি ছাড়াও নানা ধরনের অব্যবস্থাপনার আবর্তে আকণ্ঠ নিমজ্জিত রেল বিভাগ মানুষের প্রত্যাশার বিষয়গুলো আমলেই নিচ্ছে না। বস্তুত তারা সাধারণ মানুষের পছন্দ ও চাহিদাকে কাজে লাগাতে পুরোপুরি ব্যর্থ তো হয়েছেই; উপরন্তু যাত্রীসাধারণের জীবন অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে-গত রোববারের দুর্ঘটনা ছাড়াও প্রায়ই নানা ধরনের দুর্ঘটনা, অরক্ষিত লেভেলক্রসিং ও পাথর নিক্ষেপসহ বিভিন্ন ঘটনায় এর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।দেশে প্রচলিত যোগাযোগ ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হলো রেলওয়ে খাত। অথচ দুর্নীতি ও গোষ্ঠীস্বার্থের কারণে এ সম্ভাবনাকে আমরা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছি। মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়েছে। তাই আমরা মনে করি, রেলে পরিবর্তন আনাটা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। এ লক্ষ্যে ‘প্রায় অচল’ রেলে গতিসঞ্চারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সময়ে সময়ে রেল নিয়ে নানা ধরনের পরিকল্পনা ও উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও আজ পর্যন্ত এর তেমন কোনো সুফল লক্ষ করা যায়নি; বরং প্রতিবছর রেলওয়েকে লোকসান গুনতে হচ্ছে অন্যূন ৮০০ কোটি টাকা। এ ক্ষতি এড়াতে জনপ্রত্যাশা ও চাহিদা অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে রেলের আধুনিকায়ন সম্পন্ন করে এটিকে নিরাপদ বাহনে পরিণত করা হবে, এটাই প্রত্যাশা।
