ত্রিপুরায় এগিয়ে বিজেপি, তৃণমূলের চোখ মেঘালয়ে


ত্রিপুরায় এগিয়ে বিজেপি, তৃণমূলের চোখ মেঘালয়ে
নাগাল্যান্ডে বিজেপি জোটের জয় নিশ্চিত। ত্রিপুরাতেও ক্ষমতা দখলের দৌড়ে এগিয়ে তারা। মেঘালয় ত্রিশঙ্কু। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তিন রাজ্যে বুথফেরত সমীক্ষা অন্তত তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে! আর পূর্বাভাস সঙ্গী করেই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হচ্ছে ভোটগণনা।ত্রিপুরায় জনজাতি দল তিপ্রা মথাও ভোটে ভাল ফল করতে পারে বলে সবক’টি বুথ ফেরত সমীক্ষার পূর্বাভাস। কয়েকটি সমীক্ষার বার্তা, ত্রিশঙ্কু বিধানসভায় ‘নির্ণায়ক’ হয়ে উঠতে পারে তারা। তিনটি রাজ্যেই বিধানসভার আসন ৬০। তবে মেঘালয়ে প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে একটি আসনে ভোট স্থগিত হয়েছে। নাগাল্যান্ডে একটি বিধানসভা কেন্দ্রে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে বিজেপি।ইতিহাস বলছে, অতীতে ভারতে অনেক ভোটেই জনমত সমীক্ষা বা বুথফেরত সমীক্ষার ফল মেলেনি। আবার মিলে যাওয়ার নজিরও রয়েছে। ভোট পণ্ডিতদের একাংশে মতে, এই ধরনের সমীক্ষার ফলের সঙ্গে গড়ে ৩ শতাংশ পর্যন্ত ফারাক হতে পারে বাস্তবের। ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ডের মতো ছোট রাজ্যের ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটলে ফলের বড়সড় হেরফেরের সম্ভবনা থাকে।২৫ বছরের বাম শাসনের ইতি টেনে ২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটে ত্রিপুরায় ক্ষমতা দখল করেছিল বিজেপি এবং জনজাতি দল আইপিএফটির জোট। এর পর পঞ্চায়েত এবং পুরভোটে একতরফা জয় পেয়েছিল পদ্ম-শিবির। কিন্তু গত বছরের জুন মাসে ত্রিপুরার চার বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনের ফল ইঙ্গিত দিয়েছিল বিরোধীরা জোট বাঁধলে সমস্যায় পড়তে পারে বিজেপি। এর পর আংশিক বিরোধী ঐক্য হয়েছে। একদা প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসকে ১৩টি এবং নির্দল প্রার্থীকে ১টি আসন ছেড়ে ৪৬টিতে লড়ছে বামেরা। কয়েকটি বুথফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিত বাঙালি প্রভাবিত ৪০টি আসনে বিজেপির সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বাম-কংগ্রেস জোটের।ত্রিপুরার ২০টি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে স্বশাসিত জনজাতি পরিষদের (এডিসি) এলাকায়। সেখানে বিজেপি এবং তার সহযোগী জনজাতি দল আইপিএফটির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ত্রিপুরার রাজ পরিবারের বংশধর প্রদ্যোতবিক্রম মাণিক্য দেববর্মনের তিপ্রা ইন্ডিজেনাস প্রোগ্রেসিভ রিজিয়োনাল অ্যালায়েন্স বা তিপ্রা মথা। ২০২১ সালের গোড়ায় জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার রক্ষার দাবিতে এই দল গড়েছিলেন প্রদ্যোৎ। তিপ্রার জনভিত্তির প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় ২০২১ সালের এপ্রিলে, ত্রিপুরা ট্রাইবাল এরিয়াস অটোনমাস ডিসট্রিক্ট কাউন্সিল (এডিসি) নির্বাচনে। বিভিন্ন আদিবাসী বা জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে তৈরি তিপ্রা মথা, এডিসির ১৮টি আসনে জয়লাভ করে। বাকি ৯টি আসন মিলিত ভাবে পায় বিজেপি এবং তাদের জোট সঙ্গী জনজাতি আইপিএফটি।এ বার ভোট প্রচারের সময় প্রদ্যোত দাবি করেছেন, কোনও শিবিরই গরিষ্ঠতা পারে না। তিপ্রা ‘কিং মেকার’ হতে পারে বলেও কয়েকটি বুথ ফেরত সমীক্ষার পূর্বাভাস। যদিও অন্য কয়েকটি সমীক্ষার দাবি বিজেপি-আইপিএফটি জোট নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পাবে। জনজাতিদের বুবাগ্রা (রাজা) প্রদ্যোৎ ভোটের প্রচারের সময় বলে দিয়েছেন, ‘‘এটাই আমার শেষ ভোট। আপনাদের কাছে আর ভোট চাইতে আসব না।’’ নিজে প্রার্থী না হলেও তাঁর এই ঘোষণা জনজাতি ভাবাবেগে প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে।তবে বাঙালি অধ্যুষিত বেশ কয়েকটি আসনে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের লড়াই হতে পারে বলে মনে করছেন ভোট পণ্ডিতদের একাংশ। মোট ৬০ আসনের বিধানসভায় ২৮টিতে প্রার্থী দিয়ে ত্রিপুরায় লড়তে নেমেছে তৃণমূল। প্রচারে গিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। ২০২১ সালের নভেম্বরের পুরভোটে আগরতলায় প্রায় ২০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু গত জুনে চার বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে দলে ভোট অনেকটাই কমে যায়।