দুই দিনে ২০০ রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই মিয়ানমার প্রতিনিধিদের
অনলাইন নিউজ ডেক্স

আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে আগামী ২৪ এপ্রিল রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শুনানির আগে বিচারকদের সহানুভূতি নিজেদের পক্ষে রাখতে মিয়ানমারের ফন্দিফিকির চলছে। বিষয়টির সত্যতা প্রকাশ পাচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সফররত মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দলের যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে। বাংলাদেশে বর্তমানে আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ লাখ হলেও, গত দু’দিনে প্রতিনিধি দলটি মাত্র ২০০ রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই করতে পেরেছে।গত বুধবার পাঁচ দিনের জন্য টেকনাফে আসা মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল জানিয়েছে, আপাতত তারা তালিকাভুক্ত ৪২৯ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে চায়। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত দু’দিনে তারা ২০০ জন রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই-বাছাই করেছে। গতকাল মোট ৭৮ জন রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। তবে সাক্ষাৎকারে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, নাগরিকত্ব দিয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা না করলে তাঁরা মিয়ানমারে ফিরে যাবেন না।সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, টেকনাফ স্থলবন্দরের ভেতরে ত্রিপল টাঙিয়ে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের অপেক্ষায় রাখা হয়েছে। এই রোহিঙ্গারা অধিকাংশই এসেছেন টেকনাফের জাদিমুরা ও শালবাগান আশ্রয়শিবির থেকে। স্থলবন্দরের মালঞ্চ সম্মেলন কক্ষে তাঁদের সাক্ষাৎকার ও তথ্য যাচাই করছে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল।শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, মিয়ানমার প্রতিনিধি দল ৪২৯ জন রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই করবে। গত দুই দিনে ২০০ রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করেছে। সবার সাক্ষাৎকার নিতে পাঁচ-ছয় দিন সময় লেগে যেতে পারে। আমরা তাদের সহযোগিতা দিচ্ছি।টেকনাফের জাদিমুরা শিবিরের রোহিঙ্গা কাদির হোসেন সাক্ষাৎকার শেষে বেরিয়ে এসে বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যের ঠিকানা শনাক্ত করতেই বেশি আগ্রহী মিয়ানোরের প্রতিনিধি দল। তারা জানতে চেয়েছে, রাখাইন রাজ্যের কোন গ্রামে আমাদের বসতবাড়ি ছিল, সেখানকার ইউপি চেয়ারম্যান-সদস্য কে ছিলেন? সেখানে থাকতে কতজন সন্তান ছিল, বাংলাদেশে এসে কতজন সন্তান জন্ম নিয়েছে ইত্যাদি। কিন্তু প্রতিনিধি দলকে প্রশ্ন করার সুযোগ আমাদের দেওয়া হচ্ছে না। আমরা শুধু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ফিরে এসেছি।’হামিদা খাতুন নামের আরেক রোহিঙ্গা নারী জানান, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে মিয়ানমার সরকার রাজি কিনা আমরা তাদের কাছে জানতে চাইলে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা চুপ ছিলেন। তাঁদের এক সদস্য কাগজে দ্রুত টিপসই নিয়ে তাঁকে বাইরের প্যান্ডেলের দিকে পাঠিয়ে দেন।
একাধিক রোহিঙ্গা বলেন, রাখাইনের জন্মভূমিতে ফিরতে চাই বলেই আমরা মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সামনে হাজির হয়ে তথ্য উপস্থাপন করছি। কিন্তু মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে আগ্রহ না দেখালে আমরা ফিরে যেতে রাজি হবো না।
