ধাপে ধাপে রাশিয়ার পেটে ইউক্রেন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

আর মাত্র একদিন বাদেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের বর্ষপূর্তি। রুশ আগ্রাসন, বুচায় ভয়াবহতা, মারিওপোল যুদ্ধ কিংবা ভয়াবহ শীত সবই যেন যুদ্ধকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। ধাপে ধাপে রাশিয়ার পেটে পুরে নিয়েছে ইউক্রেনকে। টানা এক বছরের যুদ্ধকে বড় ঘটনাগুলোর ভিত্তিতে পাঁচটি অধ্যায়ে দেখানো যায়।
অধ্যায় ১: পূর্ণমাত্রার অভিযানগেল বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ প্রেসিডেন্ট ভদিমির পুতিন ইউক্রেনে আগ্রাসন ঘটান। ধীরে ধীরে এই বিশেষ সামরিক অভিযান পূর্ণ রূপ ধারণ করে। পুতিন জানান, তিনি ইউক্রেনের পূর্ব দনবাস অঞ্চলের দুটি স্বঘোষিত রুশপন্থি অঞ্চলের মানুষকে গণহত্যার কবল থেকে বাঁচাচ্ছেন। যদিও এই বক্তব্যের কোনো তথ্য-প্রমাণ দেয়নি মস্কো। ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহরেই রাশিয়া শুরু করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব দিক থেকে রুশ বাহিনী দেশে প্রবেশ করে এবং পূর্ণমাত্রায় আক্রমণে রূপ নেয়। পুতিনকে আলোচনার টেবিলে রাখার জন্য উন্মুত্ত কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পরে এই আক্রমণটি একটি আন্তর্জাতিক ক্ষোভের কারণ হয়। ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার ওপর নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। প্রথমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠাতে সম্মতি দেয়। যার পরপরই বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তার গ্রিনলাইট দেয় যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনের দক্ষিণ উপকূলে দ্রুত সাফল্য অর্জন করতে থাকে। রাতারাতিই খেরসন, কৃষ্ণ সাগর বন্দর, রুশ-অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের নিকটবর্তী অঞ্চলসহ আজভ সাগরের বার্দিয়ানস্ক বন্দর দখল করে ফেলে। মস্কোর সৈন্যরাও কিয়েভকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে। রাশিয়ার সীমান্তবর্তী ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে করে ভারী বোমাবর্ষণ।অধ্যায় ২: বুচায় ভয়াবহতাযুদ্ধের এক মাস কাটানোর পরেও কিয়েভে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয় রাশিয়া। রুশ সেনারা পূর্ব ও দক্ষিণে মনোনিবেশ করে এবং উত্তর ইউক্রেন প্রত্যাহার করে। ২ এপ্রিল বুচা শহরের উত্তর-পশ্চিম কিয়েভ শহরতলির রাস্তায় ২০ জন বেসামরিক লোকের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। অধিকাংশের হাত পিঠের পিছনে বাঁধা ছিল। পরের দিনগুলোতে আরও শতাধিক মৃতদেহের সন্ধান মেলে। কিছু লাশে ছিল বীভৎস নির্যাতনের চিহ্ন, বাড়ি, ঘর কিংবা অগভীর কবরে পাওয়া যায় দেহাবশেষ। কিয়েভ রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ। যদিও বরাবরের মতোই রাশিয়া এ অভিযোগ স্বীকার করেনি।অধ্যায় ৩: মারিওপোল যুদ্ধ২১ এপ্রিল, রাশিয়া দাবি করে তারা দক্ষিণ-পূর্ব বন্দর শহর মারিউপোল দখল করেছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে নিরলস বোমাবর্ষণের শিকার ছিল অঞ্চলটি। রাশিয়ার লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে দনবাসের বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলকে সংযুক্ত করা। ২ হাজার ইউক্রেনীয় যোদ্ধা এক মাস শহরের আজভস্টাল স্টিলওয়ার্কে আটকে পড়ে থাকে। পরে মে মাসে জীবন বাঁচাতে তাদের রুশদের কাছে আÍসমর্পণের আদেশ দেয় কিয়েভ। ইউক্রেন সরকারের দেওয়া তথ্য অনুসারে, যুদ্ধে মারিউপোলের ৯০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। নিহত হয়েছে কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ।অধ্যায় ৪: ইউক্রেনের পালটা লড়াইসমগ্র গ্রীষ্মজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র আর ইইউ কিয়েভে তাদের ভারী অস্ত্রের সরবরাহ বাড়াতে থাকে। যার ফলে যুদ্ধ দ্বিমুখী লড়াইয়ের দিকে ধাবিত হয়। আগস্টের শেষের দিকে দক্ষিণাঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনী খেরসন পুনরুদ্ধারের জন্য আক্রমণ শুরু করে। সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে উত্তর-পূর্বে খারকিভের চারপাশে পালটা আক্রমণের পর শত শত শহর ও গ্রাম পুনরুদ্ধার করে ইউক্রেন। কয়েকদিন পরেই পুতিন আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনের চার অঞ্চল সংযুক্তির ঘোষণা দেন। সেগুলো হলো-দোনেস্ক, লুহানস্ক, খেরসন আর জাপোরিজঝিয়া। সংযুক্তির আগে অঞ্চলগুলোতে গণভোটের আয়োজন করা হয়। যদিও কিয়েভ আর তার মিত্র পশ্চিমারা গণভোটকে ছলনা হিসাবে প্রত্যাখ্যান করেছিল। যুদ্ধের টানাপোড়েনে ৯ নভেম্বর, রাশিয়ার বাহিনী খেরসনের কিছু অঞ্চল পরিত্যাগ করে।অধ্যায় ৫: ভয়াবহ শীতঅক্টোবরের দিকে রাশিয়া যুদ্ধ কৌশলে পরিবর্তন আনে। ইউক্রেনের শক্তি অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে চালায় ক্ষেপণাস্ত্র আর ড্রোন হামলা। বিদ্যুৎ-পানি হারিয়ে শীতে ভয়াবহতার মুখোমুখি হয় ইউক্রেনের লাখ লাখ মানুষ। জানুয়ারিতে ভাড়াটে গোষ্ঠীর সমর্থিত রুশ ওয়াগনার বাহিনী যুদ্ধের দীর্ঘতম এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের কেন্দ্রস্থল বাখমুতের দোনেৎস্ক শহরে আক্রমণ বাড়ায়। সে সময় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বারবার পশ্চিমাদের কাছে ট্যাঙ্কের আবেদন করেন। ন্যাটোর চাপে পড়ে জার্মানি লেপার্ড-২ ট্যাংক পাঠাতে সমর্থন দেয়। এছাড়াও পাঠানো হবে আব্রামস আর চ্যালেঞ্জার ট্যাংক।
