নবাবপুরে অগ্নিকাণ্ডে সর্বস্ব হারানোদের বিলাপ, সহায়তার আশ্বাস মেয়রের


নবাবপুরে অগ্নিকাণ্ডে সর্বস্ব হারানোদের বিলাপ, সহায়তার আশ্বাস মেয়রের
রাজধানীর নবাবপুরে বৃহস্পতিবার রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ২০ জন ব্যবসায়ী সর্বস্ব হারিয়েছেন।পুড়ে যাওয়া গোডাউন ও বাসার দিকে তাকিয়ে কেউ কেউ বিলাপ করছেন।শুক্রবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মেয়র আসার কথা শুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও ভাড়াটিয়ারা জড়ো হয়েছেন। কেউ কেউ বিলাপ করে কান্না করছেন আবার কেউ দোকানের ভেতর থেকে কিছু উদ্ধার করা যায় কিনা- সেই চেষ্টা করছেন।ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে আল আমিন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, সবাই তারাবির নামাজ পড়ে যার যার মতো দোকান-গোডাউন বন্ধ করে বাসার দিকে রওনা হয়েছি। এমন সময় আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসতে আসতে আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। মুহূর্তেই আমার ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকার মেশিনারিজ মালামাল পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে। এখন আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম।ওইখানে ম্যাচ বাসায় থাকতেন দিনমজুর ইব্রাহিম। তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে পরিবারের জন্য ১০ হাজার টাকার কেনাকাটা করেছি। আর ৩০ হাজার টাকা জমিয়ে রেখেছিলাম। এখন আমার সবকিছু পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে বলে হাউমাউ করে কান্নাকাটি শুরু করেন তিনি।ব্যবসায়ী স্বপন দাস বলেন, এখানে আমি সাবমারসিবল পাম্পের বিজনেস করতাম। সঙ্গে সার্ভিসিংয়ের কাজও করতাম। আগুনে আমার একাই ৭৫ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে।ফাতেমা হার্ডওয়্যারের মালিক ইমন বলেন, আমাদের এখানে গোডাউনে প্রায় ১১ লাখ টাকার শুধু বেল্ট ছিল। ওই সব মেশিনারিজ বেল্টের সঙ্গে আরও কিছু যন্ত্রাংশ ছিল। সব মিলিয়ে ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।এদিকে শুক্রবার জুমার নামাজের পর ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা পরিদর্শন করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সান্ত্বনা দিয়ে তাদের পুনর্বাসনে সহায়তা করার আশ্বাস দেন। মেয়রের সঙ্গে নবাবপুর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি খন্দকার মইনুর রহমান জুয়েল, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মামুনসহ ডিএসসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র ওই সময় বলেন, ব্যবসায়ীদের সহায়তা করার জন্য পর্যাপ্ত ফান্ড গঠন করা হয়েছে। ওই ফান্ড থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে।নবাবপুর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি খন্দকার মইনুর রহমান জুয়েল বলেন, আমরা বিভিন্ন মার্কেট ও ব্যবসায়ীদেরকে আগুন নিয়ন্ত্রণ সরঞ্জামাদি স্থাপনের জন্য চিঠি দিয়েছি। তারা ওই অনুযায়ী কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদেরকে সিটি করপোরেশনকে সঙ্গে নিয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। তাছাড়া গতকালের (বৃহস্পতিবার) ঘটনার পরপরই স্থানীয় এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। আশপাশের বিল্ডিংগুলো থেকে পানি সরবরাহ ও স্বেচ্ছাসেবকরা এগিয়ে আসায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।বৃহস্পতিবার রাত দশটার দিকে নবাবপুরের মদিনা আরজু টাওয়ারের অপর পাশে ভাই ভাই গলিতে কয়েকটি টিনশেডের দোতলা ঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে । পরে এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় রাত পৌনে ১২টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা। অগ্নিকাণ্ডে একটি বেকারিসহ কয়েকটি গোডাউন ও আবাসিক মেচ বাসা পুড়ে গেছে। এতে অল্পের জন্য আশপাশের কয়েকটি মার্কেট আগুনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।