নৌকার প্রতিদ্বন্ধী লাঙ্গল, মাঠ ছাড়বে না রুপন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

যতোই দিন যাচ্ছে ততোই আলোচনা বাড়ছে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচন নিয়ে। কাগজে কলমে নির্বাচনের বাকি এখনও ৪৮ দিন। কিন্তু এরইমধ্যে নগরীর সর্বত্র আলোচনা চলছে কে হবেন আগামীর নগর পিতা।
দেশে বর্তমানে বিরোধী দলীয় রাজনীতিতে অন্যতম বড় দলখ্যাত বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনে প্রার্থী দিচ্ছে না। সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে বিগত এক বছর ধরে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী। কর্মীদের সংগঠিত করে জনসংযোগসহ নগরীর উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে ইতোমধ্যে সোচ্চার দলটি।রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে সবচেয়ে বিএনপির ভোট বেশি। তারপরে আওয়ামী লীগ ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের।
সূত্রমতে, বিএনপি যেহেতু নির্বাচনে আসছে না, আর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দরা নির্বাচনের শুরুতেই প্রার্থী মনোনয়নে দোটানার মধ্যে পরেছেন। তাই বিএনপির অবর্তমানে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী। সে ক্ষেত্রে নৌকা সঙ্গে লাঙ্গলের প্রতিদ্বন্ধীতা হতে পারে।সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ বাগিয়ে নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তাই এবারের নির্বাচনেও নগর পিতার আসন ধরে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে ক্ষমতাসীন দলটি। ইতোমধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ করা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের নাম ঘোষণা করেছেন দলের মনোনয়ন বোর্ডের নেতৃবৃন্দরা। তবে নতুন প্রার্থী ঘোষণার পর বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী এমনকি মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখনও মাঠে নামেননি। যেকারণে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এই চ্যালেঞ্জের মধ্যে জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। কারণ, এক বছর আগেই তাকে (তাপস) মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে দল থেকে। গত এক বছরে নগরীর আওতাধীন ৩০টি ওয়ার্ডে দলের নেতৃত্বকে সু-সংগঠিত করার হয়েছে বলে দাবি করছেন মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস।দলীয় ঐক্য ভোটের মাঠে তাপসকে অনেকটাই এগিয়ে রাখবে বলে জানিয়ে জাপার একাধিক নেতাকর্মীরা বলেন, আমাদের মেয়র প্রার্থীর জন্য অনেকটাই তুরুপের তাস হতে পারে নৌকা বিরোধী ভোটব্যাংক। কারণ, হিসেবে তারা আরো বলেন, বরিশাল-৫ (সদর) সদর আসন এবং সিটি করপোরেশন এলাকা দীর্ঘদিন থেকে বিএনপির ভোটব্যাংক। তাই যেহেতু আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করছে না, সেহেতু বিএনপির বিশাল ভোটব্যাংক দখলে নেয়াটা অন্য প্রার্থীর চেয়ে জাপা প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসের পক্ষে অনেকটাই সহজ।তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ‘অনেকেই অনেক গুজব ছড়াচ্ছেন। আর নির্বাচনী মাঠে গুজব ছড়ানোর বিষয়টি অনেক পুরনো ঘটনা। বরিশাল নগরীকে বিএনপির ভোটব্যাংক দাবি করা হলেও বাস্তব চিত্র পুরোটাই উল্টো। কারণ, সচেতন ভোটাররা এখন উন্নয়নের পক্ষে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে থাকেন। যেখানে আমাদের আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে তার ফুফাতো ভাই খোকন সেরনিয়াবাতকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। সেখানে দলের কোনো নেতাকর্মীদের ভুল বোঝা কিংবা ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। এখন শুধু নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করাই হচ্ছে আমাদের মূল উদ্দেশ্য। এ জন্য খুব শীঘ্রই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা করে একযোগে নির্বাচনী মাঠে নামা হবে।’তিনি বলেন, ‘ওই সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি এবং বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নেতাকর্মীদের করণীয় সম্পর্কে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেবেন। কারণ, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সেই খোকন সেরনিয়াবাত হচ্ছেন বর্তমান মেয়রের একমাত্র চাচা ও আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপির একমাত্র ছোট ভাই।’অপরদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমাদের দলীয় কোনো প্রার্থী নেই এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আমরা কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো না। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনও এই সিদ্ধান্তের বাহিরে না।’বিএনপি নেতা ও সাবেক সিটি মেয়র প্রয়াত আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রুপনের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘বিএনপিতে রুপনের কোনো পদ পদবী নেই। তবে বিএনপি পরিবারের সন্তান হিসেবে তার প্রতি অনেকেই সহানুভূতিশীল।’জাতীয় পার্টির (জাপা) বরিশাল মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থী না থাকায় তাদের ভোট অন্য প্রার্থীরা পাবেন এটাই স্বাভাবিক। আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে ওই ভোটগুলো আমাদের প্রার্থীর পক্ষে আনার। আওয়ামী লীগের নতুন প্রার্থী নিয়ে নিজ দলেই বিভিন্নপক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। সেই সুযোগও আমরা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। ফলে রাজনীতির মাঠের এসব বাস্তবতা অন্যদের তুলনায় আমাদের প্রার্থীকেই এগিয়ে রাখবে।’জাপার প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, ‘২০২২ সালে দল থেকে যখন আমাকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছে, তারপর থেকেই দলকে সু-সংগঠিত করে আমি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শক্তিশালী অবস্থানে আনতে সক্ষম হয়েছি। নগরীতে যারা উন্নয়ন চায়, পরিবর্তন চায় তারাও আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। এখন শুধু সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিয়ে আশঙ্কা করছি।’জাতীয় পার্টির প্রার্থীর এ আশাকে দিবাস্বপ্নের সাথে তুলনা করে বিসিসি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে যাওয়া সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুল আহসান রুপন বলেন, ‘জাতীয় পার্টি কিছুদিন আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে সরকারের অংশ ছিল। বিএনপির সমর্থকদের দীর্ঘদিন সরকারি নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। সেই কষ্টের দিনগুলো আমরা ভুলে যাইনি। তাই বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা লাঙ্গল বা নৌকা প্রতীকে ভোট দেবে না বলে আমার বিশ্বাস।’তিনি বলেন, ‘আমার দল কৌশলগত কারণে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না এবং দলীয় পদ না থাকায় গঠনতান্ত্রিকভাবে আমারও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে কোনো বাঁধা নেই। যেহেতু আমি বিএনপি পরিবারের সন্তান তাই জাতীয়তাবাদী চেতনার ভোটাররা আমাকেই নগর পিতার দায়িত্বে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।’অপরদিকে, বরিশাল বিএনপির প্রভাবশালী নেতা আলহাজ্ব মো. এবায়েদুল হক চাঁন সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে পারেন বলে আজ ২৫ এপ্রিল সকাল থেকে বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন চলছে। তাদের দলেরই একাধিক নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, চাঁন প্রার্থী হতে পারেন। এ নিয়ে ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতিও চলছে। এবায়েদুল হক চাঁন সর্বশেষ জেলা দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি ছিলেন। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের নতুন কমিটিতে পদ হারানোর পর তাকে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ দেওয়া হয়।এর আগে তিনি ২০০৩ সালে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দল থেকে বহিস্কৃত হয়েছিলেন এবং ২০০৮ সালের সিটি নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হয়ে চতুর্থ স্থানে ছিলেন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে তৎকালীন জেলা দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি আহসান হাবিব কামাল দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে চাঁনকে জেলার সভাপতি পদ দেওয়া হয়েছিল।আসন্ন সিটি করপোরেশ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে বরিশাল বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এবায়দুল হক চাঁন বলেন, ‘এটা স্থানীয় নির্বাচন। ফলে ব্যক্তি বিশেষের প্রভাব প্রথম। তারপর দলের প্রভাব। দল থেকে এখনও কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে অনেকে যোগাযোগ করে মেয়র প্রার্থী হতে বলেছেন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখনও অনেক সময় আছে।’উল্লেখ্য, আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনে সকল ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে ইভিএম’র মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা বললেও এখনও তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় আগামী ১৬ মে, বাছাই ১৮ মে, বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ১৯ থেকে ২১ মে, আপিল নিস্পত্তি ২২ থেকে ২৪ মে, প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষদিন ২৫ মে। প্রতীক বরাদ্দ ২৬ মে এবং ভোটগ্রহণ করা হবে আগামী ১২ জুন।
