২০২৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর, ফেয়ার-এর উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন ও হরিনারায়ণপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহযোগিতায় নীলস্ বোর সায়েন্স ক্লাবের আয়োজনে দিনব্যাপী সফল বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্কতা, সৃজনশীলতা এবং শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা। প্রাণবন্ত এই আয়োজনে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের সক্রিয় উপস্থিতি মেলায় নতুন মাত্রা যোগ করে। পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের অংশগ্রহণ মেলাটিকে আরও প্রতিযোগিতামূলক এবং উৎসবমুখর করে তোলে। মেলায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো, যেখানে বিদ্যালয়ের বারান্দা জুড়ে প্রজেক্ট উপস্থাপনা এবং আকর্ষণীয় সজ্জা পুরো আয়োজনকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। মেলার শৃঙ্খলা রক্ষায় বিদ্যালয়ের রোভার স্কউট দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উল্লেখযোগ্য যে, কিছু প্রতিযোগিতা মেলার পূর্বেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
মেলাটি ক্লাব এবং বিদ্যালয়ের নিজস্ব উদ্যোগে বৃহত্তর আকারে আয়োজন করা হয়, যেখানে ফেয়ার প্রতিনিয়ত ক্লাব সদস্যদের উৎসাহিত করে আসছে। মাসিক মিটিংসহ বিভিন্ন সময়ে ফেয়ার ক্লাব সদস্যদের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছে যাতে তারা টেকসই ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারে। ফেয়ার-এর এই সমর্থন এবং সহযোগিতা ক্লাবগুলোকে আরও সফলভাবে সংগঠিত হতে সহায়তা করেছে এবং এই বিজ্ঞান মেলাটি তারই একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।
মেলাটি সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে, যেখানে দিনব্যাপী বিজ্ঞান প্রজেক্ট প্রদর্শনী, দেওয়াল পত্রিকা প্রদর্শনী, কুইজ প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, হাতের লেখা প্রতিযোগিতা, রিডিং পড়া প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা এবং উপস্থিত বক্তব্য প্রতিযোগিতার মতো নানা আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীরা একক ও দলীয় সংগীত ও নৃত্যও উপস্থাপন করে। মেলার সমাপনীতে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
বিজ্ঞান মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. একরামুল হোসেন বলেন, “আজকের এই বিজ্ঞান মেলা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অসাধারণ সুযোগ। এখানে তারা নিজেদের মেধা, সৃজনশীলতা এবং বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তার বিকাশ ঘটানোর সুযোগ পাবে। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির যুগে আমাদের শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এ ধরনের আয়োজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও বলেন, “নীলস্ বোর সায়েন্স ক্লাব এবং ফেয়ার-এর সক্রিয় ভূমিকা এ মেলাকে সফল করতে বিশেষভাবে সহায়ক হয়েছে। ক্লাবের সদস্যদের কঠোর পরিশ্রম এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পজিটিভ ভূমিকা শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানচর্চায় আগ্রহী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ফেয়ার সব সময়ই আমাদের পাশে থেকে বিজ্ঞান শিক্ষাকে উৎসাহিত করে যাচ্ছে, এবং এ ধরনের আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করতে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা প্রদান করেছে।”
প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমি আশা করি, এই মেলার মাধ্যমে তোমরা শুধু নতুন কিছু শিখবে না, বরং তোমাদের চিন্তাশক্তি এবং উদ্ভাবনী দক্ষতা আরও বিকশিত হবে। জয়-পরাজয় নয়, এই মেলার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা। ফেয়ার-এর সহযোগিতা ছাড়া এই আয়োজন সম্ভব হতো না, এবং আমি তাদের এই উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানাই। ভবিষ্যতে আমরা আরও বড় পরিসরে এ ধরনের আয়োজন দেখতে চাই, যেখানে ক্লাব এবং ফেয়ার একসঙ্গে কাজ করবে।”
ফেয়ার-এর প্রকল্প সমন্বয়কারী কেএম হারিসুল আলম জনি তার বক্তব্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. একরামুল হোসেন ও নীলস্ বোর সায়েন্স ক্লাবের সকল সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এমন সফল মেলার আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের আয়োজন শুধু বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটায় না, বরং অন্যান্য বিদ্যালয় ও ক্লাবগুলোর জন্য একটি অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে আরও বেশি বিদ্যালয় ও ক্লাব এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে শিক্ষার্থীদের মননশীলতা ও নেতৃত্ব বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মেলায় ৮টি প্রতিযোগিতায় মোট ৬০০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে এবং ২৫টি পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতাগুলো বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক এবং বিজ্ঞান ক্লাবের উপদেষ্টা মো. আনোয়ার হোসেন-এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। প্রতিযোগিতাসমূহে বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. একরামুল হোসেন, বিজ্ঞান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন এবং সিনিয়র শিক্ষক রবীন্দ্র নাথ সাহা।
নিম্নে প্রতিযোগিতার বিস্তারিত:
১. বিজ্ঞান প্রজেক্ট প্রদর্শনী
শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা এবং সৃজনশীলতা দিয়ে বাস্তব জীবনের সমস্যার সৃজনশীল সমাধান প্রদর্শন করে। এই প্রতিযোগিতায় ৫০ জন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে ২৫টি বিজ্ঞান প্রজেক্ট উপস্থাপন করা হয়।
• প্রথম: জেরিন জাহান প্রেমা ও তার দল
• দ্বিতীয়: তাসনিয়া শেফা ও তার দল
• তৃতীয়: জান্নাতুন ফেরদৌস শেফা ও তার দল
২.দেওয়াল পত্রিকা প্রদর্শনী
এই ধরণের প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের গবেষণা এবং লেখালেখির দক্ষতা বিকাশের মাধ্যমে তাদের সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ করে দেয়। উক্ত প্রতিযোগিতায় ২০ জন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে মোট ১২ টি দেয়াল প্ত্রিকা উপস্থাপনা করা হয়।
• প্রথম: নিশাত
• দ্বিতীয়: মাইমুনা
• তৃতীয়: শ্রেয়সী
৩. কুইজ প্রতিযোগিতা
শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও সাধারণ জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে এবং দ্রুত চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এই ধরণের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতাটি ‘ক’ (৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণি) এবং ‘খ’ (৯ম-১০ম শ্রেণি) গ্রুপে ভাগ করা হয়। দুই গ্রুপ মিলে মোট ৫৮৫ জন শিক্ষার্থী এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
• ক গ্রুপ: প্রথম: মো. তাসনিম রেনা, দ্বিতীয়: সুরাইয়া জাহান, তৃতীয়: নিশাত বিনতে গিয়াস
• খ গ্রুপ: প্রথম: সুরাইয়া ইসলাম, দ্বিতীয়: ফাইজা ফারিন, তৃতীয়: প্রেমা চক্রবর্তী
৪. বিতর্ক প্রতিযোগিতা
শিক্ষার্থীদের চিন্তাশক্তি ও বিশ্লেষণাত্মক দক্ষতা উন্নত করার লক্ষে বিজ্ঞানিভিত্তিক বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। প্রতিযোহগতার বিষং ছিল “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বই বিমুখ করছে”। উক্ত প্রতিযোগিতায় মোট ১০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে এবং বিপক্ষ দল (রাহজাবিন জাহান রাইদা, নুসরাত জামান লামিয়া, জেরিন জাহান প্রেমা) বিজয়ী হয়।
৫.হাতের লেখা প্রতিযোগিতা
শৈল্পিকতা এবং মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই ধরণের প্রতিযোগিতা যা শিক্ষার্থীদের লেখনীর দক্ষতা বৃদ্ধি করে। উক্ত প্রতিযোগিতায় ১০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতার ফলাফল:-
• প্রথম: তাসনিম রেনা
• দ্বিতীয়: সুরাইয়া জাহান
• তৃতীয়: সুরাইয়া ইসলাম
৬. রিডিং পড়া প্রতিযোগিতা
উচ্চারণ এবং পাঠের দক্ষতা উন্নত করার লক্ষে এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয় উক্ত প্রতিযোগিতায় ৭ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতার ফলাফল:-
• প্রথম: মাইসা খাতুন
• দ্বিতীয়: লামিমা
• তৃতীয়: নুসরাত জাহান
৭.রচনা লেখা প্রতিযোগিতা
সৃজনশীল লেখা এবং বিশ্লেষণ ক্ষমতা বিকাশের লক্ষ্যে এই প্রতিযেগাগিতার আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত প্রতিযোগিতায় ৭ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। যার মধ্যে:-
• প্রথম: নিশাত বিনতে গিয়াস
• দ্বিতীয়: রুমানা খাতুন
• তৃতীয়: লুবা আক্তার
৮.উপস্থিত বক্তব্য প্রতিযোগিতা
তাৎক্ষণিক চিন্তা প্রকাশের দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষে উপস্থিত বক্তব্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় যেখানে মোট ১৫ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতাটি ‘ক’ (৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণি) এবং ‘খ’ (৯ম-১০ম শ্রেণি) গ্রুপে করা হয়। দুই গ্রুপ মিলে মোট ১৫ জন শিক্ষার্থী এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। এই প্রতিযোগিতার ফলাফল:-
• ক গ্রুপ: প্রথম: অবন্তি, দ্বিতীয়: মাইশা, তৃতীয়: মাইমুনা
• খ গ্রুপ: প্রথম: জেরিন, দ্বিতীয়: রোওজা, তৃতীয়: সাদিয়া
সকল প্রতিযোগিতা শেষে পুরষ্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ক্লাবের সদস্যদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে শিক্ষার্থীরা একক ও দলীয় সংগীত ও নৃত্য উপস্থাপন করে। পরবর্তীতে বিজয়ীদের হাতে বিজ্ঞানভিত্তিক বই, ট্রফি, কলম, ফাইল, মেডেল ও স্কেল তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠান শেষে অভিভাবকগণ সকল আয়োজনের প্রশংসা করে বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি আরও আগ্রহী করে তোলে।” ভবিষ্যতে এমন আরও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনুরোধ জানান
ফেয়ার-এর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন প্রকল্প সমন্বয়কারী কেএম হারিসুল আলম জনি, এবং প্রকল্প কর্মকর্তা রবিন কুমার । তারা বিজ্ঞান মেলায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং মেলার সফল বাস্তবায়নে সহায়তা করেন।
ফেয়ার ভবিষ্যতে আরও বিজ্ঞান মেলা এবং কর্মশালা আয়োজনের পরিকল্পনা গ্রহণ করছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক নতুন ধারণার উপর কাজ করার সুযোগ পাবে।