বাসের স্টিয়ারিংয়ে সহকারী, পিষ্ট অটোরিকশার ৫ যাত্রী
অনলাইন নিউজ ডেক্স

সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে এক হাতে স্টিয়ারিং ধরে বেপরোয়া গতিতে স্বদেশ পরিবহনের বাসটি চালাচ্ছিল চালকের সহকারী। চালক তখন যাত্রীর সিটে ঘুমে আচ্ছন্ন। সাউন্ডবক্সে উচ্চ স্বরে গান শুনতে শুনতে চালকের সহকারী একটু অমনোযোগী হতেই হঠাৎ সামনে পড়ে যায় সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা। তীব্র গতিতে এসেই ডান দিক থেকে বাসটি চাপা দেয় অটোরিকশাকে। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান চালকসহ ৪ অটোরিকশাযাত্রী। পরে আহত এক শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা হন বাসের যাত্রীরা। কিন্তু তাকেও শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি। ততক্ষণে অবশ্য দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বাসটির হেলপার ও চালক লাপাত্তা।গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার দ্বিতীয় বাইপাস সড়কের সুজাবাদ দহপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- গাবতলী উপজেলার কালাইহাটা গ্রামের সাহানা আক্তার (৩০) ও তাঁর সাত বছর বয়সী মেয়ে কেয়া, একই উপজেলার কদমতলীর বাসিন্দা অটোরিকশাচালক হযরত আলী (৫০), ধুনটের বেড়েরবাড়ী গ্রামের নূরনবী বাদশা (৬০) এবং একই উপজেলার পিড়াপাড়া গ্রামের বাবলু প্রামাণিকের ছেলে কলেজছাত্র সুইন প্রামাণিক (১৭)। এর মধ্যে সকালে বগুড়া শহরের লাটাইপাড়া এলাকায় বড় মেয়েকে স্কুলে দিয়ে ছোট মেয়ে কেয়াকে নিয়ে তাড়াহুড়া করে গ্রামের বাড়ি কালাইহাটা ফিরছিলেন সাহানা। গ্রামে তাঁদের একটি ওয়াজ মাহফিলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। বাস যেতে দেরি করে বলে অটোরিকশাতে মেয়েকে নিয়ে উঠেছিলেন সাহানা। কিন্তু বাড়ি ফেরার আগেই বেপরোয়া বাস কেড়ে নেয় তাঁদের জীবন। সাহানা কালাইহাটা গ্রামের ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলামের স্ত্রী।বাসটির যাত্রীরা জানান, দুর্ঘটনার সময় বাস চালাচ্ছিল চালকের সহকারী। তাকে দ্রুতগতিতে বাস চালাতে যাত্রীরা বারবার নিষেধ করেন। কিন্তু ওই তরুণ কথা শোনেনি। বাস যখন বগুড়ার দ্বিতীয় বাইপাস দিয়ে যাচ্ছিল, তখন অটোরিকশাটি রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তীব্র গতিতে বাস অটোরিকশাকে চাপা দিলে সেটি দুমড়েমুচড়ে যায়। শাজাহানপুর কৈগাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আব্বাস আলী জানান, দুর্ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আগুন নেভায়। শাজাহানপুর থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী জানান, ঘাতক বাসটির চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তারা দুর্ঘটনার পরই পালিয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।এদিকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় মাদলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ফান্ড থেকে এই অর্থ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বগুড়া ছাড়াও এ দিন দেশের আরও কিছু স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় মা-ছেলেসহ অন্তত ৪ জনের প্রাণ গেছে।উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) : সকালে বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কে উপজেলার চালাগ্রামের পাশে সিমেন্টবাহী একটি পিকআপ ট্রাক যাত্রীবাহী ভ্যানকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই করুনা খাতুন (২৫) ও তাঁর ছেলে ছেলে তরিকুল ইসলাম (৫) প্রাণ হারান। গুরুতর আহত হন আরও ২ জন। করুনা খাতুন চালাগ্রামের খলিলুর রহমানের স্ত্রী। আহতদের মধ্যে করুনার শাশুড়ি সাকেরা খাতুন রয়েছেন। পুলিশ ঘাতক পিকআপ ট্রাকটি আটক করলেও চালক পালিয়েছে।কলারোয়া (সাতক্ষীরা) : উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের সিংহাল ব্রিজের পাশে মোটরসাইকেল ও মাটিকাটা মেশিনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ইমরান হোসেন (৩২) নামে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন নয়ন হোসেন নামে এক যুবক। নিহত ইমরান ইউনিয়নের শংকরপুর গ্রামের মোনায়েম হোসেনের ছেলে। তিনি চট্টগ্রামের একটি থানায় কর্মরত ছিলেন।পাবনা ও চাটমোহর : বুধবার রাতে টেবুনিয়া-চাটমোহর সড়কের ভবানীপুর নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় পাবনা-২ আসনের এমপি আহমেদ ফিরোজ কবিরের গাড়িচালক ফারুক হোসেন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ২ জন। নিহত ফারুক সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের শিকদারপাড়ার মরহুম আব্দুল বারেকের ছেলে। রাতে অটোরিকশায় করে ফারুক চাটমোহর রেলস্টেশনে যাচ্ছিলেন। পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অটোরিকশা গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়।
