ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচার ও ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক


ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচার ও ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক
বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতীয় মিডিয়ার ভিত্তিহীন সংবাদ, মিথ্যা ভাষ্য ও বিকৃত তথ্য সম্প্রচার শুরু হয় ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই। এই আচরণ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অপেশাদার হলেও বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যম বা প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো প্রথম দিকে বিষয়টি উপেক্ষা করেছে। কিন্তু অপপ্রচারের মাত্রা বেড়ে চললে সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিকরা ভারতীয় মিডিয়ার যথেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে উঠেছেন।বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের ঘটনায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম খুবই অখুশি বলে রোববার বিকেলে সিপিডির অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন মন্তব্য করেন। তিনি বলেছেন, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম প্রমাণ করতে চাচ্ছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে এবং বাংলাদেশে তালেবান ঘরানার সরকার আসতে যাচ্ছে। এর আগে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার নিয়ে ভারত সত্যকে বিকৃত করছে বলে মঙ্গলবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে জানায়।বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার বলেন, ‘ভারতের পত্রপত্রিকায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনভাবে দেখানো হচ্ছে যেন বাংলাদেশে এ ধরনের নিকৃষ্ট ঘটনাগুলো (সংখ্যালঘু নির্যাতন) ঘটছে। ঘটনা তো তা না। এটা তারা কেন করছে?’ (প্রথম আলো, ৩০ নভেম্বর) আজকাল অধিকাংশ ভারতীয় মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে যেসব তথ্য বা খবর প্রচার করা হচ্ছে, তার সঙ্গে বাস্তবতার সম্পর্ক বেশির ভাগ ক্ষেত্রে থাকে না। ভারতীয় মিডিয়ায় সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ বাংলাদেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতার বিরুদ্ধে বানোয়াট সংবাদের হিড়িক দেখলে আঁতকে উঠতে হয়।৫ আগস্টের পর ভারত সরকারের নানা আচরণও প্রশ্নের উদ্রেক করে। শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, বাংলাদেশজুড়ে চলতি বছরের আগস্টসহ বিভিন্ন সময়ে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর ওপর সহিংসতার খবর দেখেছে ভারত সরকার। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। সেদিনই দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেন, ‘বাংলাদেশে উগ্র বক্তব্যের ঢেউ, সহিংসতা ও উস্কানির ক্রমবর্ধমান ঘটনায় ভারত উদ্বিগ্ন।’ তিনি বলেন, ‘এসব বিষয় শুধু মিডিয়ার অতিরঞ্জন হিসেবে খারিজ করা যায় না।’২. বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে ভারতীয়দের কথাবার্তা বা সংবাদভাষ্যের মিল না থাকলেও তারা অপপ্রচার চালিয়েই যাচ্ছেন। এর কারণ সন্ধানে কয়েকটি ঘটনা আমরা ফিরে দেখতে পারি। চলতি বছরের ৫ আগস্টের আগেও এ দেশে কমবেশি সংখ্যালঘু নির্যাতন চলেছে। অন্য সময়ের কথা বাদ দিই, অন্তত ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবার পরও সেটা বন্ধ হয়নি। কিন্তু গত ১৬ বছরে আওয়ামী শাসনামলে এ দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রসঙ্গে একটিবারের জন্যও ভারত মুখ খোলেনি। বিশ্বজিৎ হত্যাসহ ক্ষমতাবানদের হাতে হিন্দুদের সম্পত্তি জবরদখল নিয়েও ভারতীয় মিডিয়াসহ কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।অন্তর্বর্তী সরকার বারংবার ভারতীয় মিডিয়ার উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছে, তারা এ দেশে সরেজমিন এসে সংখ্যালঘু পরিস্থিতিসহ অন্য যে কোনো পরিস্থিতি দেখে তারপর রিপোর্ট করুক; কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ভারতীয়রা মনের মাধুরী মিশিয়ে রিপোর্ট করে যাচ্ছেন। সর্বশেষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার ও এর প্রেক্ষিতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পরও সেটা দেখা গেছে। আন্তর্জাতিক কয়েকটি মিডিয়াসহ ভারতীয় মিডিয়া প্রচার করে, চিন্ময়ের আইনজীবী সাইফুলকে ইসলামপন্থিরা কুপিয়ে হত্যা করেছে; যা সত্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। সাইফুল সরকারি আইনজীবী, এপিপি; তিনি চিন্ময়ের আইনজীবী নন। আর তাঁর খুনিদের পরিচয়ও ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করা হয়। স্বস্তির বিষয়, নানা উস্কানির পরও সকল পক্ষের সম্মিলিত আহ্বান ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের চেষ্টা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থেকে বাংলাদেশকে দূরে রাখতে পেরেছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের পর ভারতীয় সরকার ও মিডিয়া যেভাবে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠল, তখন নিরীহ প্রশ্নটি করতেই হয়– জুলাই-আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের গুলিতে শত শত মানুষের লাশের স্তূপে যখন বাংলাদেশ রক্তাক্ত হয়ে উঠল, তখন কোথায় ছিল ভারতীয় মিডিয়া বা ভারত সরকার? ন্যূনতম সৌজন্যমূলক নিন্দা বা উদ্বেগ ভারতীয়রা তখন প্রকাশ করেনি। কেন?৩. ৫ আগস্টের পর ভারতের এই সরব ‘বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা’র কারণ ভারত প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সরকারের নতজানু নীতি। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেনের বহুল আলোচিত সেই সংলাপ ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মতো!’ কিংবা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই উক্তি– ‘ভারতকে যা দিয়েছি, তা তাদেরকে সারাজীবন মনে রাখতে হবে!’ এসবই দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে আওয়ামী লীগের নীতির নির্যাস।শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ভারতের সঙ্গে যেভাবে সম্পর্ক স্থাপন করেছে, তা প্রতিবেশী দুটি স্বাধীন দেশের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমমর্যাদার নয়; বরং ভারতকে উচ্চাসনে বসিয়ে তার স্নেহস্পর্শে থাকবার মতো। যদিও ভারতের স্নেহস্পর্শের রূপ আওয়ামী সরকার বুঝলেও, বাংলাদেশের মানুষ কখনোই তা বুঝে উঠতে পারেনি। তাই কিশোরী ফেলানীর মৃতদেহ দু’দেশের সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলতে দেখা যায়। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে যত হত্যাকাণ্ড ঘটে, বিশ্বের আর কোনো সীমান্তে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটে না। অবশ্য সব হত্যাকাণ্ডই একতরফা। ভারতীয়দের গুলিতে বাংলাদেশিরা নিহত হয়। ভারতের জন্য করিডোর, বাণিজ্য সুবিধা, সুন্দরবনে বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ গত দেড় দশকে ভারতের সকল অমীমাংসিত ইস্যু বাংলাদেশ সম্পন্ন করে দিয়েছে; কিন্তু বাংলাদেশের কোনো ইস্যুই ভারতের কাছে প্রাধান্য পায়নি। বাংলাদেশে একতরফা রপ্তানি করে ভারত, সে দেশে বাংলাদেশিরা সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটক ও চিকিৎসাপ্রার্থী; তারপরও ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সুবিধা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। সেই সঙ্গে লাগাতার অপপ্রচার চলছেই।কোনো অসম সম্পর্ক সুস্থ ও দীর্ঘমেয়াদি হয় না। নতজানু নীতি আর যাই হোক, বিশ্বমঞ্চে কোনো জাতিকে মাথা উঁচু করে বাঁচতে দেয় না। বন্ধুত্ব তখনই সম্ভব যখন তা হয় পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ ও সমমর্যাদাসম্পন্ন। ভারতকে ‘দাদা’ বা ‘বড় ভাই’ থেকে নেমে বন্ধুর পর্যায়ে দাঁড়াতে হবে। অবশ্যই ভারত আয়তনে ও জনসংখ্যায় বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বড় দেশ; বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। সবই সত্য, তবে সবচেয়ে বড় সত্য যে, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। ঐতিহাসিক প্রয়োজনে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের পাশে ছিল, এ জন্য নিশ্চয়ই বাংলাদেশ কৃতজ্ঞ। তার মানে এই নয় যে, বাংলাদেশের সার্বভৌম মতামত ও অস্তিত্ব ভারতের পরামর্শমতো চলবে। বাংলাদেশের সকল মানুষ এ দেশের সমঅধিকারসম্পন্ন নাগরিক, তাদের প্রত্যেকের সমানভাবে দেখভালের দায়িত্ব এ দেশের সরকারের। এখানে সংখ্যালঘু কার্ড খেলে ভারত কী বোঝাতে চায়? এ দেশের হিন্দুদের দেখভালের দায়িত্ব ভারতের? তাহলে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের দেখভালের দায়িত্ব কি বাংলাদেশের? সে দেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি কী? বাংলাদেশ কখনও সে ব্যাপারে কথা বলেছে; নাকি সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলা বাংলাদেশের জন্য সংগত হবে?সংগত বা অসংগত– বাংলাদেশ বা ভারতের জন্য একই। এটি ভারতীয় মিডিয়া ও ভারত সরকার যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবে, দুই দেশের সম্পর্ক তত দ্রুত স্বাভাবিক ও সহজ হবে।মাহবুব আজীজ: উপসম্পাদক, সমকাল; সাহিত্যিক mahbubaziz01@gmail.com

সর্বশেষ :

সুখবর পাচ্ছেন প্রাথমিকের ৩০ হাজার প্রধান শিক্ষক   সুখবর পাচ্ছেন প্রাথমিকের ৩০ হাজার প্রধান শিক্ষক সাইফ পাওয়ার টেকের অধ্যায় শেষ, চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্বে নৌবাহিনী   সাইফ পাওয়ার টেকের অধ্যায় শেষ, চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্বে নৌবাহিনী গাজীপুর মহানগর বিএনপির চার নেতা বহিষ্কার   গাজীপুর মহানগর বিএনপির চার নেতা বহিষ্কার ‘পাগল তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্বকে বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প   ‘পাগল তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্বকে বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প রকেট চালিত গ্রেনেড দিয়ে লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা   রকেট চালিত গ্রেনেড দিয়ে লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ইনিংসেই ডাবল সেঞ্চুরি? এমন কীর্তি ক্রিকেট ইতিহাসে হয়েছে মাত্র তিনবার। আর এখন সে তালিকার শীর্ষে উইয়ান মুল্ডার। দক্ষিণ আফ্রিকার এই অলরাউন্ডার বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে অধিনায়কত্বের অভিষেকে অপরাজিত ২৬৪ রানে দিন শেষ করেছেন—যা এ ধরনের ম্যাচে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস।  এর আগে ১৯৬৮ সালে ভারতের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চে ২৩৯ রান করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের গ্রাহাম ডাউলিং। সেটাই এতদিন ছিল অধিনায়কত্বে অভিষেক টেস্টে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড। আরও আগে ২০০৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিবনারায়ণ চন্দরপল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে করেছিলেন ২০৩*।  ২৭ বছর বয়সী মুল্ডারের এই অধিনায়কত্ব আসলে অনেকটাই আকস্মিক। নিয়মিত অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা হ্যামস্ট্রিং চোটে জিম্বাবুয়ে সফরে যাননি। সহ-অধিনায়ক এইডেন মার্করাম ও অভিজ্ঞ পেসার কাগিসো রাবাদাকেও বিশ্রামে রাখা হয়। এর ফলে প্রথম টেস্টে নেতৃত্ব পান স্পিনার কেশব মহারাজ। কিন্তু ব্যাটিংয়ের সময় কুঁচকিতে চোট পেয়ে দ্বিতীয় টেস্ট থেকে ছিটকে যান তিনিও। তখনই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় মুল্ডারের কাঁধে।  আর সেই সুযোগের সর্বোত্তম ব্যবহারই করেছেন তিনি। ৩৪টি চার ও ৩টি ছক্কার মাধ্যমে দুর্দান্ত ইনিংস গড়ে প্রথম দিন শেষ করেছেন ২৬৪* রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর দাঁড়ায় ৯০ ওভারে ৪ উইকেটে ৪৬৫।  এটাই প্রথম নয়। সিরিজের প্রথম টেস্টেও দারুণ ব্যাটিং করেছিলেন মুল্ডার, করেছিলেন ১৪৭ রান। ফলে তার ফর্ম বলছে, তিনি শুধু স্ট্যান্ড-ইন অধিনায়ক নন, দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ভবিষ্যতের অন্যতম বড় ভরসাও বটে।  রেকর্ড বইয়ে নাম উঠলো যাদের  অধিনায়কত্বের অভিষেকে ডাবল সেঞ্চুরি:  উইয়ান মুল্ডার (দ.আফ্রিকা) – ২৬৪* বনাম জিম্বাবুয়ে, বুলাওয়ে ২০২৫ গ্রাহাম ডাউলিং (নিউজিল্যান্ড) – ২৩৯ বনাম ভারত, ১৯৬৮ শিবনারায়ণ চন্দরপল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) – ২০৩* বনাম দ.আফ্রিকা, ২০০৫ এছাড়া, মুল্ডার হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে অধিনায়কত্বের অভিষেকে সেঞ্চুরি করা দ্বিতীয় ক্রিকেটার—১৯৫৫ সালে জ্যাকি ম্যাকগ্লু প্রথম এই কীর্তি করেছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।  বিভিন্ন নিয়মিত তারকার অনুপস্থিতিতে হঠাৎ নেতৃত্ব পাওয়া মুল্ডার ব্যাট হাতে যা করে দেখিয়েছেন, তা শুধু রেকর্ড নয়—একটি বার্তাও। হয়তো ভবিষ্যতের নিয়মিত অধিনায়ক হওয়ার দিকেও তাকিয়ে আছেন তিনি। আর এমন অভিষেকের পর দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বিশ্বও নিশ্চয় তার নামটি একটু আলাদা করে মনে রাখবে।   টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ইনিংসেই ডাবল সেঞ্চুরি? এমন কীর্তি ক্রিকেট ইতিহাসে হয়েছে মাত্র তিনবার। আর এখন সে তালিকার শীর্ষে উইয়ান মুল্ডার। দক্ষিণ আফ্রিকার এই অলরাউন্ডার বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে অধিনায়কত্বের অভিষেকে অপরাজিত ২৬৪ রানে দিন শেষ করেছেন—যা এ ধরনের ম্যাচে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। এর আগে ১৯৬৮ সালে ভারতের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চে ২৩৯ রান করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের গ্রাহাম ডাউলিং। সেটাই এতদিন ছিল অধিনায়কত্বে অভিষেক টেস্টে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড। আরও আগে ২০০৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিবনারায়ণ চন্দরপল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে করেছিলেন ২০৩*। ২৭ বছর বয়সী মুল্ডারের এই অধিনায়কত্ব আসলে অনেকটাই আকস্মিক। নিয়মিত অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা হ্যামস্ট্রিং চোটে জিম্বাবুয়ে সফরে যাননি। সহ-অধিনায়ক এইডেন মার্করাম ও অভিজ্ঞ পেসার কাগিসো রাবাদাকেও বিশ্রামে রাখা হয়। এর ফলে প্রথম টেস্টে নেতৃত্ব পান স্পিনার কেশব মহারাজ। কিন্তু ব্যাটিংয়ের সময় কুঁচকিতে চোট পেয়ে দ্বিতীয় টেস্ট থেকে ছিটকে যান তিনিও। তখনই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় মুল্ডারের কাঁধে। আর সেই সুযোগের সর্বোত্তম ব্যবহারই করেছেন তিনি। ৩৪টি চার ও ৩টি ছক্কার মাধ্যমে দুর্দান্ত ইনিংস গড়ে প্রথম দিন শেষ করেছেন ২৬৪* রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর দাঁড়ায় ৯০ ওভারে ৪ উইকেটে ৪৬৫। এটাই প্রথম নয়। সিরিজের প্রথম টেস্টেও দারুণ ব্যাটিং করেছিলেন মুল্ডার, করেছিলেন ১৪৭ রান। ফলে তার ফর্ম বলছে, তিনি শুধু স্ট্যান্ড-ইন অধিনায়ক নন, দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ভবিষ্যতের অন্যতম বড় ভরসাও বটে। রেকর্ড বইয়ে নাম উঠলো যাদের অধিনায়কত্বের অভিষেকে ডাবল সেঞ্চুরি: উইয়ান মুল্ডার (দ.আফ্রিকা) – ২৬৪* বনাম জিম্বাবুয়ে, বুলাওয়ে ২০২৫ গ্রাহাম ডাউলিং (নিউজিল্যান্ড) – ২৩৯ বনাম ভারত, ১৯৬৮ শিবনারায়ণ চন্দরপল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) – ২০৩* বনাম দ.আফ্রিকা, ২০০৫ এছাড়া, মুল্ডার হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে অধিনায়কত্বের অভিষেকে সেঞ্চুরি করা দ্বিতীয় ক্রিকেটার—১৯৫৫ সালে জ্যাকি ম্যাকগ্লু প্রথম এই কীর্তি করেছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। বিভিন্ন নিয়মিত তারকার অনুপস্থিতিতে হঠাৎ নেতৃত্ব পাওয়া মুল্ডার ব্যাট হাতে যা করে দেখিয়েছেন, তা শুধু রেকর্ড নয়—একটি বার্তাও। হয়তো ভবিষ্যতের নিয়মিত অধিনায়ক হওয়ার দিকেও তাকিয়ে আছেন তিনি। আর এমন অভিষেকের পর দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বিশ্বও নিশ্চয় তার নামটি একটু আলাদা করে মনে রাখবে। অভিষেকেই ইতিহাস, ডাবল সেঞ্চুরিতে প্রোটিয়া অলরাউন্ডারের বিশ্বরেকর্ড   অভিষেকেই ইতিহাস, ডাবল সেঞ্চুরিতে প্রোটিয়া অলরাউন্ডারের বিশ্বরেকর্ড যেভাবে কোলেস্টেরল কমাবেন   যেভাবে কোলেস্টেরল কমাবেন