ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ভয়াবহ বর্ণনা দিলেন বেঁচে ফেরা মুজাহিদ


ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ভয়াবহ বর্ণনা দিলেন বেঁচে ফেরা মুজাহিদ
উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপে পাড়ি জমানোর স্বপ্নে বিভোর যুবকরা দালাল চক্রের প্রলোভনে জীবনের মায়া ত্যাগ করে অনিশ্চিত পথে পা বাড়ান। দালাল চক্রের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন তারা। এরপর দালালরা ছোট নৌকায় সাগরপথে পাঠিয়ে দেন। এই অনিশ্চিত যাত্রায় অনেকেই প্রাণ হারান। ভূমধ্যসাগরে ডুবে যায় তাদের স্বপ্ন।গত ৯ মার্চ লিবিয়া থেকে সাগরপথে ইতালির উদ্দেশ্যে মোট ৪৭ জন ব্যক্তিকে একসঙ্গে নৌকায় ওঠানো হয়। সাগরের মাঝখানে যাওয়ার পর নৌকাটি ডুবে গেলে ৩০ জন নিখোঁজ হন। বাকি ১৭ জনকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে একজন ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার মুজাহিদ। তিনি ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছেন।মুজাহিদের সঙ্গে যাওয়া নগরকান্দার ১২ ও সালথার এক যুবক নিখোঁজ হন। তারা হলেন- নগরকান্দার আটকাহনিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম রাসেল (৩০), কৃষ্ণনগর গ্রামের মো. আল আমিন মাতুব্বর (২০), মো. মাহফুজ মোল্যা (২২), মো. আকরাম ব্যাপারী (২৭), বাশাগাড়ী গ্রামের মো. স্বপন ফকির (২৭), শংকরপাশা গ্রামের শামীম কাজী (২১), মো. বিপুল (২৫), বিটুল শেখ (২৫), শ্রীঙ্গাল গ্রামের মো. মিরান শেখ (২২), তুহিন শেখ (২০), নাজমুল (২৫) ও শাওন তালুকদার (২২) এবং সালথার মো. বাদল হোসেন (৩০)।মুজাহিদ তার বন্ধু সাকিবুল হাসান রিজুকে ফোন করে জানিয়েছেন, গত ৯ মার্চ লিবিয়া বেনগাজি থেকে সাগরপথে ৪৭ জন বাংলাদেশি নাগরিক অভিবাসনপ্রত্যাশী একটি ফাইবার বোটে করে ইতালির পথে রওয়ানা হন। বোটটি সাগরের মাঝখানে যাওয়ার পর সমুদ্রঝড়ের কবলে পড়ে। বোটের ঠিক অদূরে একটি মালবাহী জাহাজও তাদের সঙ্গে যাচ্ছিল। এমতাবস্থায় তারা জাহাজটিকে সাহায্যের জন্য আকুতি জানালে প্রথমে তারা অস্বীকৃতি জানায়। পরে বোটের আরোহীরা ওদের ওয়ারলেস ফোনে লিবিয়া কোস্টগার্ডদের কাছে সাহায্যের জন্য বললে তারাও অস্বীকৃতি জানায়।মুজাহিদ আরও জানান, ততক্ষণে সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে একে একে ৩০ জন বোট থেকে ছিটকে পড়ে। যে বোট থেকে পড়ে, সে আর উঠে আসতে পারেনি। যারা বোট আঁকড়ে প্রাণপণ বাঁচার চেষ্টা করেছেন শুধুমাত্র তারাই ১৭ জন বেঁচে গেছেন। এই লোমহর্ষক পরিস্থিতিতে অদূরে থাকা মালবাহী জাহাজ ওই ১৭ জনকে উদ্ধার করে। পরে তাদের ইতালির কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করে।নগরকান্দার নিখোঁজ আল আমিনের মা চামেলি বেগম বলেন, দালাল চক্রের এক সদস্য কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা মুরাদ ফকির গত সোমবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সাগরে ট্রলারডুবির পর আল আমিনের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানান।চামেলী বেগম বলেন, ৯ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তার ছেলের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়।মানবপাচার চক্রের প্রধান মো. মুরাদ ফকির লিবিয়ায় পলাতক থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার সহযোগী বাশাগাড়ী গ্রামের ইমারত মিয়া মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের বলেন, আমি মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত নই। তবে আমার হাত দিয়ে দুই একজনের টাকা মুরাদ ফকিরকে দিয়েছি মাত্র।সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, মানবপাচাররোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব সময় সচেতন করা হচ্ছে। তারপরও মানবপাচার বন্ধ হচ্ছে না। যদি কেউ তথ্য প্রমাণসহ কোনো মানবপাচাকারীর তথ্য দিতে পারে, তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।তিনি আরও বলেন, কেউ যদি বিদেশে গিয়ে উপার্জন করতে চায়, তাহলে বৈধপথে যাওয়ার বিকল্প নেই। অবৈধপথে গেলে জীবন দিতে হয়। অনাকাঙ্ক্ষিত এসব ঘটনা এড়াতে, বিএমইটির মাধ্যমে বা যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে কম খরচে সরকারিভাবে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এত সুবিধা থাকার পরেও ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে যাওয়া বন্ধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।