মালিকপক্ষ ও তদারকি সংস্থার গাফিলতি পেয়েছে তদন্ত কমিটি
অনলাইন নিউজ ডেক্স

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে গত ৪ মার্চ সীমা অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় মালিকপক্ষের অবহেলা ছিল বলে নিশ্চিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে কমিটি বলেছে, স্পর্শকাতর এ স্থাপনা যে দক্ষ জনবল দিয়ে পরিচালনা হওয়ার কথা, তা ছিল না কারখানাতে। এ ধরনের স্থাপনার কার্যক্রম সুচারুভাবে পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তদারকি সংস্থা; কিন্তু তারাও গাফিলতির পরিচয় দিয়েছে। আট পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে ৯ দফা সুপারিশ। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য কিছু কর্মপরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে। কমিটির এসব সুপারিশ যাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।তদন্ত কমিটি বলছে, ৪৮০টি ছোট-বড় কলকারখানা তৈরি হওয়ায় সীতাকুণ্ড একটি বিপজ্জনক এলাকা হয়ে উঠেছে। এখানকার কারখানাগুলোতে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তদারকি সংস্থার প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা, তা মানা হচ্ছে না। গত বছরের ৪ জুন সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে ৫১ জনের প্রাণহানির ঘটনায়ও মালিকপক্ষ ও তদারকি সংস্থার গাফিলতি পেয়েছিল তদন্ত কমিটি।সাধারণত কারখানাগুলোর অবকাঠামোগত নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিল্ডিং কোড মানছে কিনা, তা দেখার দায়িত্ব গণপূর্ত বিভাগের। শ্রম আইন ও বিধি মানছে কিনা, তা দেখার দায়িত্ব কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের। অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের। বিদ্যুৎ নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের। বিভিন্ন কারখানায় যন্ত্রপাতির নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং পেট্রোবাংলার। বয়লারের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয়ের। বিস্ফোরণজনিত নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব বিস্ফোরক পরিদপ্তরের। পরিবেশগত বিষয়ে ছাড়পত্র দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু সীমা অক্সিজেন প্লান্ট দুর্ঘটনায় কোনো তদারকি সংস্থাই ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেনি। তদারকি সংস্থাগুলোর দায়িত্ব ঠিকমতো পালন না করার কারণেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চুয়েটের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের মতামত আমলে নিয়ে সীমা অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণ সম্পর্কে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। অন্যান্য দেশে কখন, কোথায় অক্সিজেন প্লান্টে দুর্ঘটনা ঘটেছে– সেটিও পর্যবেক্ষণে এনেছে তদন্ত কমিটি। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে আজ মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হবে এই তদন্ত প্রতিবেদন। যদিও গতকাল সোমবার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামান বলেন, সোমবার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও ব্যস্ততার কারণে আমি গ্রহণ করতে পারিনি। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে এটি গ্রহণ করা হবে। তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান বলেন, অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শফি ১৯৯৬ সালে সীমা অক্সিজেন প্লান্টটি প্রতিষ্ঠা করেন। দুর্ঘটনার দিন ১৪ থেকে ১৫ জন শ্রমিক কাজে ছিলেন। কারখানাটি পরিচালনায় ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী দু’জন অপারেটর, মানবিক বিভাগ থেকে পাস করা একজন সুপারভাইজার ও প্রশাসন বিভাগে দু’জন লোক রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি শিল্পে ব্যবহৃত অক্সিজেন উৎপাদন করে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় স্নাতক ডিগ্রিধারী মেকানিক্যাল প্রকৌশলী প্রয়োজন; কিন্তু কারখানাটিতে তা ছিল না।
যা আছে ৯ দফা সুপারিশে : সীতাকুণ্ডে ৪৮০টি ছোট-বড় শিল্পকারখানা আছে। এগুলোর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আরও আধুনিক করতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের দিতে হবে প্রশিক্ষণ। সব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে নিয়মিত করতে হবে কর্মশালা। তদারকি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম আরও জোরালো করতে হবে। স্পর্শকাতর স্থাপনা নিয়মিত পরিদর্শন করতে হবে। এ জন্য মোবাইল কোর্টের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। কারখানাগুলোকে নিরাপদ রাখতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও করতে হবে সম্পৃক্ত। ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার আগে কারখানা পরিদর্শন করবেন তাঁরা। কোনো ত্রুটি পেলে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন ইউপি চেয়ারম্যানরা। ভয়াবহ কোনো দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হলে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করতে হবে উপযুক্তভাবে। আহত ও নিহতদের পরিবার যাতে অর্থকষ্টে না ভোগে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে মালিকপক্ষকে। মালিকদের কারখানার নিরাপত্তার বিষয়ে আরও মনোযোগী হতে হবে। অদক্ষ লোক দ্বারা কারখানা পরিচালনা করা যাবে না। তদারকি সংস্থাকে এ বিষয়গুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
