মুক্ত স্বদেশে কুড়িগ্রামে বঙ্গবন্ধুর আগমনের ৫০ বছর পূর্তি
অনলাইন নিউজ ডেক্স

মুক্ত স্বদেশে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কুড়িগ্রাম সফরের ৫০ বছর পূর্তি রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি)। ১৯৭৩ সালের এই দিনে নির্বাচনি সফরে এসে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে জনতার উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। স্বাধীন বাংলাদেশে এটিই ছিল, কুড়িগ্রামে তার প্রথম সফর। তবে স্বাধীনতার পূর্বে ’৬৯ ও ’৭০ সালে কুড়িগ্রামে সফর করেছিলেন। স্বাধীনতার পর ’৭৩ ও ’৭৪ সালে দুবার কুড়িগ্রাম সফর করেন বঙ্গবন্ধু।১৯৭৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ হোসেন সরকারের সভাপতিত্বে এবং ছাত্রনেতা আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মন্ডলের সঞ্চালনায় জনসভায় অর্ধলক্ষাধিক (মতান্তরে লক্ষাধিক) মানুষের সমাগম হয়েছিল। সভায় দেওয়া ভাষণের শেষাংশে বঙ্গবন্ধু উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আপনাদের কাছে আমি আবেদন করবো, আপনারা সত্য পথে চলবেন, ন্যায়ের পথে চলবেন, অন্যায়ের মোকাবিলা করবেন, দেশকে ভালোবাসবেন এবং দেশকে গড়বেন এবং আপনারা যদি পয়দা করতে পারবেন, তা সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে বাস করতে পারবেন। ভবিষ্যত আমরা যারা আছি, আমাদের বয়স হয়েছে, আমরা ভোগ করতে না পারি। কিন্তু এমন কিছু করে যাই, যাতে আমাদের ভবিষ্যত বংশধররা আর মানুষের কাছে হাত পাততে না হয়। ওরা যেন সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে বাস করতে পারে। সোনার দেশ, সোনার বাংলা হয়ে যায়। খোদা হাফেজ। জয় বাংলা।’সেদিন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী সরদার। সেদিনের জনসভা প্রসঙ্গে প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘১৯৭৩ সালের ওই দিনটি ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন। প্রচণ্ড কুয়াশায় বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী হেলিকপ্টার অবতরণ করতে সমস্যা হচ্ছিল। দীর্ঘক্ষণ পরে হেলিকপ্টারটি কুড়িগ্রাম স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। এদিকে প্রাণপ্রিয় নেতাকে একনজর দেখতে কুড়িগ্রাম ও আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ কলেজ মাঠে উপস্থিত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে দেখার আকাঙ্ক্ষা মানুষের শীতানুভূতিকে প্রচ্ছন্ন করে দিয়েছিল। ঠান্ডা উপেক্ষা করে মানুষ প্রিয়নেতার বক্তব্য শুনে প্রাণ জুড়িয়েছিল।’প্রসঙ্গত, সেদিন বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সেই ভাষণের অডিও রেকর্ড ও লিখিত অনুলিপি কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গ জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।ভাষণের বিষয়ে জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান এস.এম আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে এটি ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রথম কুড়িগ্রাম সফর। নির্বাচনি জনসভায় ভাষণ দিতে কুড়িগ্রামে এসেছিলেন। কিন্তু ভাষণে তিনি একবারের জন্য দল কিংবা দলীয় প্রার্থীর জন্য ভোট চাননি।’“বঙ্গবন্ধু সেদিন দেশ গঠনের কথা বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফেরত আনার দাবি তুলেছিলেন। ওই ভাষণে তিনি উপস্থিত জনতাকে তিন বার ‘কুড়িগ্রামের ভাই ও বোনেরা’ বলে সম্বোধন করেছেন।” ভাষণ প্রসঙ্গে যোগ করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত এই সমাজকর্মী।হানাদারমুক্ত স্বদেশে কুড়িগ্রামে প্রথম সফরের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে নানা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে উত্তরবঙ্গ জাদুঘর।জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান এস.এম আব্রাহাম লিংকন জানান, রবিবার সকাল ৯টায় কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর সেদিনের ভাষণ শোনানো এবং শিক্ষার্থীদের জন্য কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের জন্য সন্ধ্যায় উত্তরবঙ্গ জাদুঘর চত্বরে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জাফর আলী
