যে কারণে কমিটি থেকে বাদ পড়লেন হেভিওয়েটরা


বরিশালে মহানগর বিএনপির প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন হেভিওয়েট নেতারা। আন্দোলন সংগ্রামে না থাকায় তাদের রাখা হয়নি বলছেন দলটির নেতারা। যদিও ভিন্ন বক্তব্য হেভিওয়েটদের। নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পদে থাকা জুনিয়র নেতার নিচে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত তাদের। এ কারণে নাকি তারা নিজেরাই থাকছেন না কমিটিতে। কেন্দ্রে জমা পড়া কমিটি নিয়েও চলছে নানা সমালোচনা। ৪২ সদস্যের কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন অনেক নিষ্ক্রিয় নেতা। যুগ্ম আহ্বায়ক আর সদস্য তালিকায় ক্রমানুসার নিয়েও উঠেছে অভিযোগ। আন্দোলনের কঠিন সময়ে মাঠে না থাকা নেতাদের নাম ওপরে থাকায় ক্ষুব্ধ অনেকে। বাদ পড়া নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে। মাই ম্যান কমিটি গঠনের মিশনে নেমেছে নগর বিএনপি, অভিযোগ তাদের। যদিও তা মানতে নারাজ নগর বিএনপির আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব। দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সব হচ্ছে বলছেন তারা।৭ জুলাই গঠিত হয় নগর বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি। ৩ পদে নাম ঘোষণা করে কেন্দ্র। এই ৩ জন হলেন-আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন এবং সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার। শুরু থেকেই সিনিয়র নাসরিনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন দলের কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা। অপেক্ষাকৃত জুনিয়র নাসরিনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি তারা। যদিও সেই ক্ষোভের প্রতি গুরুত্ব দেয়নি কেন্দ্র। কারণ সরকারবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা ছিল নাসরিনের। একাধিকবার গ্রেফতার, জেলে থাকা আর হামলার শিকারও হয়েছেন। এসব কারণেই তাকে ওই পদে বসায় হাইকমান্ড। একই যোগ্যতায় আহ্বায়ক আর সদস্য সচিবের পদ পান ফারুক ও জিয়া। ৩ নেতার নাম ঘোষণার পর থেকেই ওঠে পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি করার দাবি। ৫ আগস্টের পর যা হয় আরও তীব্র। দল ক্ষমতায় আসছে ভেবে পদ-পদবি পেতে মরিয়া হয়ে উঠে অনেকে। কেন্দ্র থেকেও আসে কমিটি দাখিলের চাপ। এই অবস্থায় অনেকটা তড়িঘড়ি করে গঠন করা হয় ৪২ সদস্যের একটি কমিটি। পরে তা অনুমোদনের জন্য জমা দেওয়া হয় ঢাকায়। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ওই কমিটি জমা হওয়ার পরপরই জানাজানি হয় বিষয়টি। সেই সঙ্গে বরিশালে শুরু হয় তোলপাড়। ত্যাগী পরীক্ষিতদের বাদ দিয়ে নিষ্ক্রিয় অনেককে নেওয়া হয়েছে কমিটিতে, উঠে এমন অভিযোগ। যুগ যুগ ধরে দলের জন্য কাজ করার পরও বাদ পড়ার অভিযোগ করেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুসারীরা। সাবেক সদস্য সচিব মীর জাহিদের পক্ষ থেকেও আসে তার অনুসারীদের বাদ পড়ার অভিযোগ। সেই সঙ্গে দলের হেভিওয়েট নেতাদের নাম বাদ পড়া নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।প্রস্তাবিত কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে নাম প্রস্তাব করা ৮ জনের মধ্যে অন্তত ৩ জনের কোনো ভূমিকা ছিল না আন্দোলন সংগ্রামে। সিনিয়রদের নিচে রেখে ২নং যুগ্ম আহ্বায়ক পদে নাম প্রস্তাব করা জসিমউদ্দিনকে নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। সাবেক এমপি সরোয়ার ঘনিষ্ঠ জসিম একসময় ছিলেন মহানগর বিএনপির সহ প্রচার সম্পাদক। যুগ্ম আহ্বায়কের তালিকায় থাকা শেষ ব্যক্তিকে নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। প্রস্তাবিত কমিটিতে আরও যাদেরকে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রাখা হয়েছে তারা হলেন-আল আমিন, মুসা কাজল, হালিম মৃধা, সাজ্জাদ হোসেন, মাহফুজুর রহমান, অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ ও জহিরুল হক লিটু। এছাড়া সদস্য পদে নাম প্রস্তাব করা ৩১ জনের মধ্যে অন্তত ১৩/১৪ জনের কোনো হদিস ছিল না আন্দোলন সংগ্রামে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, কমিটিতে নাম অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বিরোধে জড়ান ৩ নেতা। শেষ পর্যন্ত সমান ভাগে ১৪ জন করে নেওয়ার সমঝোতা হয় তাদের। এদের মধ্যে দুজন আবার ছিলেন একমত। ফলে খানিকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন তৃতীয়জন। এভাবেই তৈরি হয় ৩ নেতার মাই ম্যান অর্থ্যাৎ নিজস্ব লোক নিয়ে করা কমিটি। সাবেক এমপি সরোয়ার অনুসারীদের যেমন জায়গা হয়নি কমিটিতে, তেমনি বাদ পড়েছেন স্থানীয় পর্যায়ে হেভিওয়েট হিসাবে পরিচিত নেতারা। ফারুক-জিয়ার আগের কমিটির বেশিরভাগও ঠাঁই পায়নি এই তালিকায়। কমিটিতে জায়গা না হওয়া বিষয়ে কথা হয় মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কেএম শহিদুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি নিয়েই তো অভিযোগ রয়েছে আমাদের। এমন একজনকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে যিনি রাজনীতিতে অনেক জুনিয়র। তার নিচে গিয়ে রাজনীতি করা সম্ভব না আমাদের।প্রস্তাবিত কমিটি বিষয়ে জানতে চাইলে মীর জাহিদুল বলেন, কমিটি বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি বর্তমান নেতারা। যে কারণে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা নাসরিন বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি হয়েছে। কে হেভিওয়েট কে সিনিয়র জুনিয়র সেটাতো জরুরি নয়। আন্দোলন সংগ্রামে কার কি ভূমিকা সেটাই বিবেচনায় রেখেছি আমরা।মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন বলেন, কমিটি হওয়া উচিত সবার সমন্বয়ে। এখানে আন্দোলনে সক্রিয়রা যেমন থাকবে তেমনি অভিজ্ঞদের বাদ দেওয়ারও সুযোগ নেই। বরিশালে যা দেখছি সব ওলটপালট। সবাই পকেটের লোক দিয়ে দল চালানোর প্রতিযোগিতায় মেতেছে। এভাবে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা যাবে না।নগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, হাজার সদস্যের কমিটি হলেও কিন্তু অভিযোগ থাকবে। বিএনপির মতো একটি বড় দলে অনেকেরই নেতা হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে। তাছাড়া এটা তো আহ্বায়ক কমিটি, পূর্ণাঙ্গ নয়। তাও এখন পর্যন্ত অনুমোদন পায়নি। কমিটি প্রশ্নে আমরা স্রেফ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুসরণ করছি। আন্দোলন সংগ্রামে কার কি ভূমিকা তাই গুরুত্ব পেয়েছে।মহানগরের আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, আহ্বায়ক কমিটি আকারে ছোট হয়। এখানে সবাইকে জায়গা দেওয়া সম্ভব হয় না। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে আর সমস্যা থাকবে না। তবে কমিটিতে অযোগ্য কিংবা নিষ্ক্রিয় কাউকে রাখার অভিযোগ সঠিক নয়।