রণক্ষেত্র এখন জাবালিয়া, ইসরাইল-হামাস তুমুল লড়াই


ফিলিস্তিনের উত্তর গাজার জাবালিয়া শহর এখন রণক্ষেত্র। রাফার পর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সঙ্গে ইসরাইলি বাহিনীর তুমুল লড়াই চলছে সেখানেও। প্রত্যক্ষদর্শকরা জানিয়েছেন, রাতভর জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের চারপাশে ভয়াবহ লড়াই হয়েছে। শনিবার আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, জাবালিয়ায় ইসরাইলের হামলায় বেশ কয়েকটি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া শনিবার পর্যন্ত গত কয়েক ঘন্টায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তবে বরাবরের মতো এবারও হার মানছে না হামাসও। যুদ্ধ যতই দীর্ঘস্থায়ী হোক না কেনো তারা শেষ পর্যন্ত এ হামলার মোকাবেলা করবে। হামলা-পালটাহামলার মধ্যেই এবার দীর্ঘমেয়াদে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠীটির সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবাইদা এই তথ্য জানিয়েছেন। শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘আমাদের জনগণের ওপর গত কয়েক মাস ধরে যে নির্মম আগ্রাসন চলছে, তা বন্ধের জন্য আমরা পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং একই সঙ্গে শত্রুদের সঙ্গে গাজায় দীর্ঘমেয়াদে লড়াই চালিয়ে যেতেও আমরা প্রস্তুত।’ ভিডিও বার্তায় আল-কাসেম ব্রিগেডের এই মুখপাত্র দাবি করেছেন, গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত হামাসের যোদ্ধারা ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে ব্যাপক বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করছে। ইতোমধ্যে ইসরাইলি বাহিনীর যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি সাধনেও সফল হয়েছে তারা। কিন্তু ইসরাইলি বাহিনী নিজেদের ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য প্রকাশ করছে না। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত শহর রাফায় অভিযান শুরু করেছে আইডিএফ। সেখানেও ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে হামাস যোদ্ধাদের তীব্র সংঘাত চলছে বলে দাবি করেছেন আবু উবাইদা। ভিডিও বার্তায় এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘গত ১০ দিনে পুরো গাজা উপত্যকায় অন্তত ১০০ ইসরাইলি সামরিক সাঁজোয়া যান ধ্বংস করেছে আল-কাসেম ব্রিগেডের যোদ্ধারা। রাফাহ শহরে আমাদের যোদ্ধাদের সঙ্গে আগ্রাসনকারী বাহিনীর তীব্র লড়াই হচ্ছে এবং শহরের পূর্বাঞ্চলে শত্রুরা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।’ উল্লেখ, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে এই দশকের সবচেয়ে বড় হামলা চালায় হামাস। এর পরপরই গাজায় বিমান হামলা ও স্থল হামলা শুরু করে ইসরাইল। সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত ৭৯ হাজার ছাড়িয়েছে। এ গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। এদিকে গাজা যুদ্ধ শেষ করে ইসরাইলকে একটি ‘পরিপূর্ণ বিজয়’ এনে দিতে গাজার হামাসপ্রধান ইয়াহইয়া সিনওয়ারকে হত্যা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক গণমাধ্যম মিডলইস্ট আইকে এমনটাই বলেছেন কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা। শনিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা মিডলইস্ট আইকে বলেছেন, সিনওয়ারকে খোঁজার জন্য বিভিন্ন ধরনের পন্থা অবলম্বন করছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা মনে করছে, ৬১ বছর বয়সি সিনওয়ার গাজার নিচে গভীর সুড়ঙ্গে লুকিয়ে রয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন এখন ধারণা করছে সিনওয়ার মিসরের সিনাই উপত্যকায় লুকিয়ে রয়েছেন। তবে তিনি সেখান থেকে লেবানন বা সিরিয়ায় পালিয়ে যেতে পারেন। তবে হোয়াইট হাউজ মিডলইস্ট আইকে জানিয়েছে, মার্কিন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান এ সপ্তাহের শুরুতে জানিয়েছেন-তিনি সিনওয়ার সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্যের বিষয়ে মন্তব্য করবেন না। বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা বিশেষ কোনো গোয়েন্দা তথ্য উল্লেখ করেননি। তবে বলেছেন, মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনী সিনওয়ারের সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে তথ্যের ব্যাপারে পিছিয়ে রয়েছে।