রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া


রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ওপর নানামুখী অদৃশ্য চাপ অব্যাহত রয়েছে। তবে সরকারপ্রধান হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ধরনের কোনো চাপকে আমলে নিতে চান না।অতীতেও নেননি। জনগণের স্বার্থে যা করা দরকার তা তিনি করবেন। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য নিয়ে জনমনে নানা কৌতূহল দেখা দিয়েছে।এদিকে বিষয়টি নিয়ে কাছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা ও বিশ্লেষকদের কয়েকজন। যাদের কেউ মনে করেন কারা চাপ দিচ্ছে তা দৃশ্যমান। তবে এই ধরনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপে কোনো লাভ হবে না। কেউ কেউ এই চাপের মধ্যে ষড়যন্ত্রের আলামত আছে বলেও মন্তব্য করেন। কেউ আবার রাগঢাক না রেখে বলেছেন, আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্ব হস্তক্ষেপ করছে। বিপরীতে কেউ বলেছেন, মূলত সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সরকারের ওপর জনগণের চাপ রয়েছে। এছাড়া আমরা যেহেতু গ্লোবাল ভিলেজে বাস করি তাই যে কোনো দেশ গণতন্ত্র এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কথা বলতেই পারে। এ সংক্রান্ত অনেকগুলো আন্তর্জাতিক চুক্তিতে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে।প্রসঙ্গত, গত সোমবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমন কোনো চাপ নেই যেটা শেখ হাসিনাকে দিতে পারে। এটা মাথায় রাখতে হবে যে, আমার শক্তি একমাত্র আমার জনগণ। আর ওপরে আল্লাহ আছেন। আমার বাবার আশীর্বাদের হাত আমার মাথার ওপর আছে। কাজেই কে কী চাপ দিল না দিল, তা নিয়ে আমার কিছু আসে যায় না। জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে যা কিছু করার তা আমি করব।’এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বুধবার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে চাপের কথা বলেছেন, তা সহজেই বোঝা যায়। প্রধানমন্ত্রী সঠিক কথা বলেছেন। প্রতিপক্ষ বিএনপিসহ তাদের মিত্র বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভয়-ভীতির মাধ্যমে দেশে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে।’ বিদেশি কূটনীতিকদের সাম্প্রতিক তৎপরতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নানক বলেন, ‘কারা চাপ দিচ্ছে তা দৃশ্যমান। তবে এই ধরনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপে কোনো লাভ হবে না।’জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য সঠিক বলেই মনে করি। গত ছয় মাসের ঘটনাপ্রবাহ দেখে মনে হয়েছে দেশি-বিদেশি অনেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে খণ্ডিত বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। ইনুর মতে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে পরামর্শ ও সহযোগিতার নামে বিদেশিরা তাদের নিজস্ব এজেন্ডা বলার চেষ্টা করে। এটা এক ধরনের চাপ। আর বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে যে আন্দোলন করছে সেটাই দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা বলে মনে করেন তিনি।এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক তত্ত্বাধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি কোনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে তার জানা নেই। এছাড়া দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন না।জাতীয় পার্টি-জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, সরকারপ্রধান হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নিশ্চয় এমন কোনো তথ্যপ্রমাণ রয়েছে যার ওপর ভিত্তি করে তিনি নির্বাচন নিয়ে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর এই অভিযোগের ভিত্তি আছে বলে মনে করেন তিনি।সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্ব যেভাবে হস্তক্ষেপ করছে এবং রাজনৈতিক বক্তব্য রাখছে তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিযোগ সঙ্গত বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ঠিকই বলেছেন। তবে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করাও এখন সময়ের দাবি।দিলীপ বড়ুয়া বলেন, কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে হতাশা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির আশঙ্কা বা অপচেষ্টার যে অভিযোগ করেছেন, তা সঠিক বলে তিনি মনে করেন।সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন ও সুশাসনের দাবি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া যদি ষড়যন্ত্র হয়ে থাকে তবে তা অবশ্যই ‘ষড়যন্ত্র’। যদিও এসব দাবি এ দেশের আপামর জনগণের দাবি। তার মতে, মানুষের সম্মতি অর্থাৎ ভোটের ভিত্তিতে ক্ষমতা বদলের পথ রুদ্ধ হয়ে গেলে সেই পরিস্থিতিই অস্থিতিশীল পরিবেশ। কারণ মানুষের মধ্যে তখন ক্ষোভের জন্ম নেয়, যা এখন বিদ্যমান।বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী বললেন চাপের কথা। এটা থেকে বোঝা যায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে চাপ রয়েছে। বিদেশিদের তৎপরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্ব একটি গ্লোবাল ভিলেজ। আমরা এই গ্লোবাল ভিলেজে বাস করছি। বাংলাদেশে কী হয় না হয় তা সব দেশই জানে। তাছাড়া আমরা কতগুলো আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছি। তাই এসব বিষয়ে কথা বলার সুযোগ আছে। এখন সরকার কোনটাকে চাপ মনে করছেন সেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়।