শিশুদের নরক যন্ত্রণা


শিশুদের নরক যন্ত্রণা
ছয় বয়সী মিরন একসময় পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের ছবি আঁকত। তার আঁকাআঁকি ঘিরে সুন্দর সময় কাটত পরিবারটির। কিন্তু সেই মিরনের আঁকা ছবি দেখেই মা-বাবা এখন উদ্বিগ্ন। কারণ তাঁদের ছেলে আর মানুষ আঁকে না; সে আঁকে যুদ্ধ, ট্যাঙ্ক, আগুন ও বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জামের ছবি।চিত্রগ্রাহক ও লেখক হেইলি স্যাডলার ইউরোপের দেশ জর্জিয়ার রাজধানী তিবলিসিতে বেশ কিছুদিন কাটিয়েছেন। রুশ আক্রমণ শুরুর পর ইউক্রেনের অনেক নাগরিক সেখানে আশ্রয় নেন। তিবলিসিতে \'ইউক্রেনীয় হাউস\' নামে উদ্বাস্তুদের চালিত একটি ভবন রয়েছে। আগ্রাসনের পর থেকে সেখানে দুই শতাধিক ইউক্রেনীয় আশ্রয় নিয়েছেন। তবে বর্তমানে আছেন ২১টি পরিবারের ৮৬ জন, এর মধ্যে ২৬ শিশু। এক বছর আগে অন্যদের মতো পালিয়ে ছেলে মিরন ও স্বামীর সঙ্গে সেখানে ওঠেন গান্না সিরদিউক।তিনি বলেন, মিরন বলেছে এখানে কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চায় না। কারণ সে জানে জায়গাটি ছেড়ে যেতে হবে। সে স্বাভাবিক জীবন চায়। সন্তানের মুখ থেকে এমন ভারী কথা শোনা খুব কষ্টের। অভিভাবক হিসেবে এটি মোকাবিলা করাও মুশকিল।রুশ আক্রমণের পর সিরদিউকদের মতো ইউক্রেনের প্রায় ৮০ লাখ মানুষ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, বিভিন্ন দেশে পালিয়ে গেছেন ৭০ লাখ ৯০ হাজার মানুষ, যাঁদের ৯০ শতাংশ শিশু ও নারী। অনেক শিশু ভয়ংকর সহিংসতা প্রত্যক্ষ করেছে। তারা নিজেদের বাড়ি, বিদ্যালয় ও প্রতিবেশীদের হারিয়েছে। অনেকে মা-বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে ৫০ লাখেরও বেশি শিশু। তাদের মধ্যে ৩ লাখ ৬০ হাজার শিশুর বিদ্যালয়ে যাওয়া ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাশিয়া আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ইউক্রেনে ৭ হাজার ২০০ বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে শিশু ৪৩৮ জন। আহত হয়েছে প্রায় ৯০০ শিশু। বিভিন্ন দেশে আশ্রিত শিশুরা ভয়ংকর মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাদের জীবনে শৈশবের সুন্দর সময়ের কোনো স্মৃতি হয়তো জমবে না। এসব শিশুর পড়াশোনা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা।সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘ জরুরি শিশু তহবিল-ইউনিসেফ জানায়, ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে ৫০ লাখেরও বেশি শিশুর শিক্ষা ব্যাহত হয়েছে। তারা যাতে পিছিয়ে না যায় সেজন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।পড়াশোনার জন্য এখন স্লোভেনিয়ায় থাকে কিশোরী টিমাকিনা। তাঁর মা ও বোন থাকেন ইউক্রেনীয় হাউসে। টিমাকিনা বলে, আর যুদ্ধ দেখতে চাই না। পরিবারের সবাইকে আবার এক ছাদের নিচে দেখতে চাই।