সন্ত্রাস দমনে অগ্রগতি, মানবাধিকারে পিছিয়ে বাংলাদেশ: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন


বাংলাদেশ ২০২২ সালে সন্ত্রাস দমনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। তবে এ সময়ে বিচারবহির্ভূত হত্যার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত ছিল বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেররিজম ২০২২: বাংলাদেশ’ অংশে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ জঙ্গি দমনে, বিশেষত আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস) সংশ্লিষ্ট নব্য জেএমবি দমনে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে। ফলে ২০২২ সালে এ দেশে খুব কম জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারের অন্য কর্মকর্তারা বারবার ‘সন্ত্রাসবাদে শূন্য সহনশীলতা’ নীতির কথা জোর দিয়ে বলেছেন। বাংলাদেশ কখনো আল-কায়েদা কিংবা আইএসের মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর উপস্থিতির কথা স্বীকার করেনি। ২০২২ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ আল-কায়েদা থেকে অনুপ্রাণিত জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার অপচেষ্টা রুখে দেওয়ার কথা জানিয়েছে। এতে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাংলাদেশের পুলিশ ইউনিট সন্দেহভাজন অনেক জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটেছে। এতে বলা হয়, জঙ্গি সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার ও আটকের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ ২০০৯ সালের সন্ত্রাস দমন আইনের ব্যবহার করছে। ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) পুলিশকে অনলাইনে জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সমালোচকদের মতে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সরকারের সমালোচকদের দমন-পীড়নে ব্যবহার হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তা জোরদার ও সন্ত্রাস দমনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নানা ধরনের সহায়তা দিয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক (এটিটি) ও সরকারি কৌঁসুলিদেরও যুক্তরাষ্ট্র প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এতে আরও বলা হয়, নিজের সীমান্ত এবং জলসীমায় নজরদারি করার সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে। সেই জনবল, প্রযুক্তি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ বন্দরে কার্গো এবং যাত্রীদের ওপর নজরদারি বাড়াতেও সক্ষম হয়েছে। বন্দর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লে­খযোগ্য অগ্রগতি করেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লে­খ করা হয়েছে। সহিংসতা ও সন্ত্রাসের জন্য কারাগারে উগ্রবাদীতে পরিণত করার বিষয়টি বড় উদ্বেগের কারণ জানিয়ে প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সন্ত্রাস মোকাবিলায় দায়িত্বরত বিভিন্ন ইউনিট ও সংস্থার নাম উল্লে­খ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সন্ত্রাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে। বাংলাদেশ ইন্টারপোলের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করে। তবে বাংলাদেশের নিজস্ব কোনো সন্ত্রাসী নজরদারি তালিকা নেই। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ‘অ্যালার্ট লিষ্ট’ প্রকল্প সরকারের বিবেচনায় আছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রিত রয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোয় সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও ২০২২ সালে এসব শিবির থেকে উল্লে­খযোগ্য কোনো সন্ত্রাসী তৎপরতার হুমকি তৈরি হয়নি।