আশায় বিএনপির ৪ নেতা তৎপর জামায়াতও


আশায় বিএনপির ৪ নেতা তৎপর জামায়াতও
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপর হয়ে উঠেছেন বিএনপির চার নেতা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকেই তাদের পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এখানে দলের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। কর্মী, সমর্থক আর অনুসারীদের নিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে তো রয়েছেনই; বাড়িয়েছেন দলীয় ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের পরিধিও। সেই সঙ্গে শীতবস্ত্র বিতরণ, ক্রীড়া অনুষ্ঠান, ইসলামি জলসাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও সরব তারা। এদিকে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করলেও জামায়াতের নেতাকর্মীরা নানা কার্যক্রমে তাদের প্রস্তুতির তথ্য জানান দিচ্ছেন। শুধু বাগমারা উপজেলা নিয়েই রাজশাহী-৪ আসন। ১৯৯১ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনটিতে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত সরদার আমজাদ হোসেন। ১৯৯৬ ও ২০০১-এ বিএনপি প্রার্থী সাবেক সচিব প্রয়াত আবু হেনা জয়লাভ করেন। ২০০৮-এ আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি প্রকৌশলী এনামুল হক বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি টানা তিনবার এমপি ছিলেন। ২০২৪-এ আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরিবর্তন করে আবুল কালাম আজাদকে মনোনয়ন দেয়। তিনি এমপি নির্বাচিত হন। এনামুল ও আবুল কালাম বিভিন্ন মামলার আসামি হিসাবে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। দলটির নেতাকর্মীদের কোনো তৎপরতা নেই। বিএনপির মনোনয়নপ্রতাশীদের মধ্যে রয়েছেন-বাগমারা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডিএম জিয়াউর রহমান, সদস্য সচিব অধ্যাপক কামাল হোসেন, রাজশাহী জেলা যুবদলের সদস্য সচিব রেজাউল করিম টুটুল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রের স্বাস্থ্যবিষয়ক সহসম্পাদক ড্যাব নেতা ডা. আশফাকুর রহমান শেলী। স্থানীয় বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেই বাগমারা বিএনপির নেতাকর্মীদের একটি অংশ দখলবাজিতে নেমেছে। উপজেলাজুড়ে চলছে পুকুর দখলের ‘মহোৎসব’। থেমে নেই জমি দখলও। স্থানীয় প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে কৃষি জমি নষ্ট করে অবাধে চলছে পুকুর খনন। চলছে চাঁদাবাজিও। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদও দখলের চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। সব মিলিয়ে একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আরও অভিযোগ, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দু-একজন পতিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি অংশ বিএনপির সঙ্গে মিশে গেছেন। তাদের অনেকেই এখন নিজেদের বিএনপি কর্মী বলে পরিচয় দিচ্ছেন। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে মন্ত্রণা দিচ্ছেন। ডিএম জিয়াউর রহমান বাগমারা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক। এর আগে তিনি উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আউসপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন বাগমারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। ৫ আগস্টের পর তিনি জোরালোভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। জিয়াউর রহমান বলেন, বাগমারায় বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী। দলকে তৃণমূল পর্যায়ে আরও সুসংগঠিত করতে আমরা দিন-রাত পরিশ্রম করছি। নেতাকর্মীদের দুঃসময়ে পাশে থেকেছি। আমি দীর্ঘ সময় জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছি। এসব বিষয় বিবেচনায় হাইকমান্ড আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আশাবাদী। অধ্যাপক কামাল হোসেন বাগমারা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব। ১৯৯৪ সালে ভবানীগঞ্জ কলেজে অধ্যয়নকালে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন তিনি। ২০১০-এ বাগমারা উপজেলা যুবদলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৬-তে রাজশাহী জেলা যুবদলের এক নম্বর যুগ্ম সম্পাদক হন। ২০১৭-তে জেলা বিএনপির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক হন। কামাল হোসেন ভবানীগঞ্জ কলেজের শিক্ষক ছিলেন। ২০১৭ সালে কলেজটি জাতীয়করণ হলে তিনি ইস্তফা দেন। এরপর নেতাকর্মীদের কাছে ক্লিন ইমেজের কামাল পুরোপুরি বিএনপির রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন। অধ্যাপক কামাল বলেন, দলের চরম দুঃসময়ে আমি সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে নেতাকর্মীদের সাহস জুগিয়েছি। আওয়ামী লীগের অত্যাচার আর নির্যাতনে তারা যেন পথ না হারান সেজন্য বুক দিয়ে আগলে রেখেছি। বহু সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তারেক রহমানের নির্দেশে দলের কর্মসূচি পালন করেছি। এ কারণে মামলা ও হামলার শিকার হয়েছি। বাগমারা উপজেলা বিএনপি সাত ভাগে বিভক্ত ছিল। এখন নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। আশা করছি, দল আমাকে মূল্যায়ন করবে। জনপ্রতিনিধি হয়ে বিএনপিকে আরও শক্তিশালী এবং এলাকার উন্নয়নে অবদান রাখতে চাই। বাগমারা উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও নরদাস ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রবীণ রাজনীতিক মাস্টার মোশাররফ হোসেন বলেন, অধ্যাপক কামাল স্বচ্ছ এবং সাদা মনের মানুষ। নিজ অর্থ খরচ করে তিনি নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ান। দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের সাহস দিয়েছেন। উপকার করেছেন। জেল খেটেছেন। তিনি কর্মীবান্ধব। এ কারণে তার প্রতি আস্থা তৈরি হয়েছে। মার্জিত আচরণের কারণে তিনি গ্রহণযোগ্যতাও পেয়েছেন। মনোনয়নের প্রতিযোগিতায় কামাল হোসেন অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। রেজাউল করিম টুটুলের রাজনীতিতে হাতেখড়ি ২০০০ সালে ছাত্রদলের মাধ্যমে। ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত তিনি টানা ৫ বছর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। ২০২১ থেকে রাজশাহী জেলা যুবদলের সদস্য সচিব। এছাড়া ২০১৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তিনি জেলা বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সহসম্পাদক ছিলেন। টুটুল বলেন, আমি দীর্ঘদিন থেকে বাগমারায় রাজনীতি করছি। বাগমারায় বিএনপির সফল নেতা সাবেক এমপি আবু হেনা প্রয়াত হয়েছেন। আরেক ত্যাগী এবং প্রবীণ নেতা আব্দুল গফুর বয়সের ভারে ন্যুব্জ। বর্তমানে তিনি আমেরিকা প্রবাসী। এ কারণে বাগমারায় বিএনপির রাজনীতিতে কিছুটা নেতৃত্বের সংকট রয়েছে। তাদের অনুপস্থিতিতে আমি এ অভাব পূরণ করতে চাই। বাগমারার তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে কাজ করছি। আর নেতাকর্মীদের প্রত্যাশার জায়গা থেকেই দলের হাইকমান্ডের কাছে মনোনয়ন চাইব। ডা. আশফাকুর রহমান শেলী বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের নেতা। তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক সহসম্পাদক। ডা. শেলী বলেন, এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। গত ১৭ বছর ধরে আমি দলের পক্ষে জোরালো ভূমিকা পালন করেছি। এ কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। দল মনোনয়ন দিলে বিজয়ী হয়ে এলাকার উন্নয়ন করতে চাই। অপরদিকে এ আসনটিতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য জামায়াতও সর্বাত্মক প্রস্ততি গ্রহণ করেছে। নেতাকর্মীরা দলীয় এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছেন। বাগমারা উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা এ আসনে প্রার্থী নির্ধারণের জন্য স্থানীয়ভাবে নির্বাচন করেছি। ভোটের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর প্রার্থীর নাম ঘোষণা দেওয়া হবে।