আসামি গ্রেফতারের ক্ষমতা পাচ্ছেন প্রসিকিউটররা
অনলাইন নিউজ ডেক্স

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটরদের আসামিদের গ্রেফতারে ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। এলক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল-১) কার্যবিধি, ২০১০-এ কিছু বিধি সংশোধন হচ্ছে। এই সংশোধনীর মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের কিছু ক্ষমতা কমানো হতে পারে। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল-১) কার্যবিধি, ২০১০-এর সংশোধনের খসড়া প্রস্তাবে এসব বলা হয়েছে। তবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম শনিবার বলেন, বিধি এখনো হয়নি। আইনে ক্ষমতা আছে, আমরা গ্রেফতার করতে পারি। এটা আরও স্পষ্ট করার চেষ্টা চলছে। সেটার ব্যাপারে বিধি প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না। যে কোনো সময় চূড়ান্ত হয়ে যাবে। আমরা মনে করি এটা হওয়া দরকার।জানা যায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটরসহ মোট ১৪ জন প্রসিকিউটর আছেন। কো-অর্ডিনেটরসহ তদন্ত সংস্থায় ২৩ জন তদন্ত কর্মকর্তা রয়েছেন। আইন অনুযায়ী, প্রসিকিউটররা তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। কার্যবিধি অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনাল কারও বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তা তামিল করে থাকেন। সংশোধন করে পরোয়ানা কার্যকরের ক্ষমতা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও তদন্ত কর্মকর্তাদের দেওয়া হচ্ছে। প্রসিকিউটর বা তদন্ত কর্মকর্তারা তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে কাউকে গ্রেফতার করতে পারবেন। কার্যবিধি অনুযায়ী, গ্রেফতার করার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজির করতে হয়। এখানে পরিবর্তন এনে বলা হচ্ছে, গ্রেফতার করার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ বা তদন্ত কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনাল বা যে কোনো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে আসামিকে হাজির করতে পারবে।বর্তমানে ট্রাইব্যুনাল নির্দেশিত প্রথম শ্রেণির কোনো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে জবানবন্দি নেওয়া হয়। জবানবন্দি গ্রহণের সময় ভুক্তভোগীর আইনজীবী উপস্থিত থাকতে পারেন। যদিও সেই আইনজীবী কথা বলা বা কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না জবানবন্দির সময়। এই দুটি ধারা বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে বিধির ২৪-এর ২ উপবিধিতে বলা হয়েছে, তদন্ত সংস্থার কোনো সদস্য যে কোনো প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য রেকর্ড করার জন্য আবেদন করতে পারেন। এ ধারা বহাল থাকতে পারে।জানতে চাইলে তদন্ত সংস্থার কো-অর্ডিনেটর মো. মাজহারুল হক বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরদের আসামি গ্রেফতারের ক্ষমতার বিষয়টি আলোচনা হয়েছিল। এ বিষয়ে প্রসিকিউশনের বিশেষ পরামর্শক টবি ক্যাডম্যানের একটি পরামর্শ ছিল। এটা নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়েছে বলে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। প্রসিকিউশন ভালো বলতে পারবে।আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর শাইখ মাহদী বলেন, আসামি গ্রেফতারের ক্ষমতা প্রদানের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটা প্রস্তাব করা হয়েছে। এখনো ফাইনাল হয়নি। তিনি বলেন, এটা হচ্ছে রুলস অব প্রসিডিউর, সিদ্ধান্ত হলে গেজেট আকারে আসবে। বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। চূড়ান্ত এখনো হয়নি। প্রসিকিউশনের মতে, বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা একান্তভাবে ট্রাইব্যুনালের। যেহেতু বিধি আগে থেকেই আছে, তাই অধিকতর স্বচ্ছতা ও বিচার অধিকতর গ্রহণযোগ্য করার জন্য বিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনবেন ট্রাইব্যুনাল।বিদেশে বসে অপরাধ করলেও ট্রাইব্যুনালে আমলে নেওয়ার সুযোগ থাকবে : এদিকে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ২৪ নভেম্বর জারি হওয়া অধ্যাদেশে বলা হয়, বিদেশে বসে কেউ মানবতাবিরোধী অপরাধ করলেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তা আমলে নেওয়ার সুযোগ থাকবে। ট্রাইবু্যুনাল চাইলে শুনানির অডিও ও ভিডিও রেকর্ড রাখতে পারবে। তবে গণমাধ্যমের জন্য সম্প্রচারের কোনো ব্যবস্থা থাকবে না। বাংলাদেশের বাইরে অপরাধ করলে ট্রাইব্যুনালে আমলে নেওয়া যাবে। এতদিন শুধু বাংলাদেশের ভেতরে সংঘটিত অপরাধকে আমলে নিতে পারত ট্রাইব্যুনাল। তবে সেদিন আইন সংশোধনের খসড়ায় রাজনৈতিক দল ও তার সহযোগী সংগঠনের শাস্তির বিধান রাখা হয়নি। আগে খসড়ায় অপরাধ প্রমাণ হলে দল ও সংগঠনের ১০ বছর নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়। উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এটি বাদ রেখে সংশোধনী অনুমোদন করা হয়।আসামির আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় কমানো হয়েছে : ১১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩-এর কয়েকটি সংশোধনী আনা হয়। এই আইনের নাম সংশোধন করে রাখা হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’। এ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এই আইনে দুবার সংশোধনী আনে। ট্রাইব্যুনাল আইনে আসামির আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় কমানো হয়। আগে আসামি আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ৬ সপ্তাহ সময় পেতেন। এখন তা কমিয়ে ৩ সপ্তাহ করা হয়েছে। দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার জন্য এই সময় কমানো হয়।
