আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় ট্রাইব্যুনালের অসন্তোষ


আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় ট্রাইব্যুনালের অসন্তোষ
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পরোয়ানার বেশির ভাগ আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ পর্যন্ত ১০৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩৫ জন গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতারে অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে জানাতে বলেন আদালত।বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। পাশাপাশি অসহযোগিতার বিষয়টি প্রসিকিউশনকে আবেদন আকারে দিতে বলেন। এছাড়া এদিন তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ও এসি তানজিল আহমেদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।বৃহস্পতিবার ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে ইমাম হাসান তাইম হত্যা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদনের দিন ধার্য ছিল। তবে প্রতিবেদন প্রস্তুত না হওয়ায় প্রসিকিউশনের পক্ষে দুই মাসের সময়ের আবেদন করা হয়। এ মামলার অন্যতম আসামি পুলিশের ওয়ারী জোনের তৎকালীন সহকারী পুলিশ কমিশনার তানজিল আহমেদ ও যাত্রাবাড়ী থানার তৎকালীন ওসি আবুল হোসেনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।শুনানিতে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ইমাম হাসান তাইম হত্যাকাণ্ডের ওয়ারেন্টভুক্ত চার আসামি গ্রেফতার না হওয়ার বিষয়ে প্রসিকিউশনের কাছে জানতে চান। এ সময় প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ জানান, এ মামলায় ৬ আসামির মধ্যে দুজন গ্রেফতার হয়েছেন। তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। এজন্য সময়ের আরজি জানান তিনি। ট্রাইব্যুনাল তদন্ত প্রতিবেদনের অগ্রগতি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন এবং ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের গ্রেফতারের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে সুলতান মাহমুদ বলেন, এ মামলার ভিকটিম ইমাম হাসান তাইমের ভাই রবিউল আমাদের কাছে একটি অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, পরোয়ানা জারির পর আসামিদের গ্রেফতারের ব্যাপারে পুলিশের বিভিন্ন সংস্থার কাছে তিনি গিয়ে সহযোগিতা পাননি। এ বক্তব্য শুনে ট্রাইব্যুনালসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে বলেন।ট্রাইব্যুনাল এ সময় দুই মাস সময় দিয়ে বলেন, যদি এ সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল ও আসামি গ্রেফতার না হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যাখ্যা দিতে হবে। কোনো সমস্যা থাকলে ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করতে হবে।প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘একজন আসামিকে (পুলিশের কর্মকর্তা) গ্রেফতার করতে গিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোনো সহযোগিতা করেননি। ট্রাইব্যুনাল বলেন, আসামিকে কে ধরবে? তাহলে কিভাবে বিচার হবে? যারা কাজ করবে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ট্রাইব্যুনালকে আবেদন আকারে জানান। সরকারকে জানান। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।’একপর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ বলেন, কী তদন্ত হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। সরকারকে বলেন, ব্যবস্থা নিতে। ট্রাইব্যুনাল বলেন, ১০৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এর মধ্যে কতজন আসামি গ্রেফতার হয়েছে? এ সময় প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বলেন, ৩৫ জন। এরপর এ বিচারপতি বলেন, এত বড় একটি ঘটনা। প্রায় ২ হাজার মানুষ মারা গেছে। সেখানে মাত্র ৩৫ জন গ্রেফতার হয়েছে। শুনানি নিয়ে ট্রাইব্যুনাল কী কারণে আসামি গ্রেফতার হচ্ছে না, তার কারণ উলে­খ করে প্রসিকিউশনকে একটি আবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে যাত্রাবাড়ীর এ মামলায় প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৬ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।