ইউরোপের প্রতিরক্ষা খাতে ঢল, ভাগ বসাতে ছুটছে মার্কিন কোম্পানিগুলো
অনলাইন নিউজ ডেক্স

ইউরোপের সামরিক ব্যয়ের অভাবনীয় বৃদ্ধি মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর ইউরোপের দেশগুলো প্রতিরক্ষা খাতে রেকর্ড পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ করেছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে মার্কিন প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ইউরোপের বাজারে ঝাঁপিয়ে পড়ছে।মার্কিন ড্রোন নির্মাতা অ্যান্ডুরিল ইন্ডাস্ট্রিজ জার্মানির প্রতিরক্ষা কোম্পানি রাইনমেটাল-এর সঙ্গে যৌথভাবে ইউরোপে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি উৎপাদনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এই অংশীদারিত্বে অ্যান্ডুরিলের ‘ব্যারাকুডা’ এবং ‘ফিউরি’ ড্রোনের ইউরোপীয় সংস্করণ তৈরি করা হবে।
বোয়িংয়ের ইউরোপ কৌশল: যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রতিরক্ষা জায়ান্ট বোয়িং ঘোষণা করেছে, তারা ইউরোপে তাদের কার্যক্রম বহুগুণে বাড়াতে চায়। ইতালির লিওনার্দো ও জার্মানির এয়ারবাস হেলিকপ্টার্স-এর সঙ্গে যৌথ প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বোয়িং ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষা প্রকল্পে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।ভেঞ্চার ক্যাপিটালের আগ্রহ: ২০২৫ সালে ইউরোপের প্রতিরক্ষা স্টার্টআপগুলোতে মার্কিন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্মগুলো প্রায় ৬৫% বিনিয়োগ করেছে। সাইবার নিরাপত্তা, ড্রোন প্রযুক্তি ও কমিউনিকেশন ব্যবস্থায় এই বিনিয়োগগুলো ইউরোপের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।শেয়ারবাজারেও প্রভাব : রাইনমেটাল, লিওনার্দো, থ্যালেস, সুইডেনের সাব – এসব ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা কোম্পানির শেয়ারমূল্য ২০২৫ সালে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিরক্ষা খাতে এই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।চ্যালেঞ্জও রয়েছে : যদিও মার্কিন কোম্পানিগুলো ইউরোপে তাদের অবস্থান মজবুত করতে চাইছে, তবুও ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্থানীয় শিল্প ও প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। “মেইড ইন ইউরোপ” উদ্যোগের কারণে কিছুটা প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে পারে আমেরিকান প্রতিষ্ঠানগুলো।ইউরোপ এখনো আমেরিকান প্রযুক্তিনির্ভরএখনও ইউরোপীয় দেশগুলো মার্কিন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ইউরোপে লকহিড মার্টিনের যুদ্ধবিমান, রেথিয়নের প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র, বোয়িংয়ের হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহৃত হচ্ছে। আর ভবিষ্যতের যুদ্ধ প্রযুক্তি—যেমন AI, উপগ্রহ নেটওয়ার্ক বা ড্রোনে—স্পেসএক্স, প্যালান্টির এবং অ্যান্ডুরিলের মতো মার্কিন কোম্পানিগুলো অনেক এগিয়ে।
ইউরোপীয় নেতাদের স্বীকারোক্তি: ইতালির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুইডো ক্রোসেটো বলেন, “ইউরোপে এখনো বেশি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আছে। প্রযুক্তি ও বাজেটের সীমাবদ্ধতায় আমাদের আমেরিকার সহায়তা নিতে হবে।”এয়ারবাসের শীর্ষ কর্মকর্তা জ্যাঁ-ব্রিস দ্যুমঁ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের ওপর শূন্য নির্ভরশীলতা একটি স্বপ্নমাত্র।”যদি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউরোপের প্রতিরক্ষা খাতে নজিরবিহীন ব্যয়ের ঢল মার্কিন প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। তবে একই সঙ্গে এ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে তাদের কৌশলগত বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের উপর ভর করতে হবে।
