ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সংক্ষিপ্ত টাইমলাইন


ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সংক্ষিপ্ত টাইমলাইন
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত প্রক্সি যুদ্ধ থেকে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। মূলত ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং আঞ্চলিক প্রভাব নিয়ে উত্তেজনাই এর পেছনের কারণ। মধ্যপ্রাচ্যের দুই বিপরীতমুখী শক্তির দ্বন্দ্ব পুরোনো এবং বহুমুখী। নিচে কেবল ২০২৫ সালের মূল ঘটনাগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত টাইমলাইন দেওয়া হলো-মার্চ : মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড জানান- মার্কিন সংস্থাগুলোর ধারণা, ইরান সক্রিয়ভাবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না এবং সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ২০০৩ সাল থেকে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির অনুমোদন দেননি। তুলসি গ্যাবার্ডের মন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে স্বস্তির আভাস দিয়েছিল।৩০ এপ্রিল : ইরান একজন ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তিনি ইসরায়েলের মোসাদের জন্য কাজ করার এবং ২০২২ সালে তেহরানে রেভল্যুশনারি গার্ড কর্নেল হাসান সাইয়াদ খোদাইয়ের হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন।৭ জুন : ইরানি মিডিয়া দাবি করে, একটি বড় গোয়েন্দা অভিযানে ইসরায়েলের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কিত নথি সংগ্রহ করা হয়েছে। যদিও এই দাবি যাচাই করা যায়নি এবং অমীমাংসিত রয়েছে।১২ জুন : আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা ইরানকে তার পারমাণবিক প্রসারণ বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করে। যা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দেয়।১২ জুন রাত ও ১৩ জুন ভোর : ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে ইরানে একটি বড় আকারের বিমান হামলা চালায়। যা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা নাতানজ, ফোর্দো এবং ইসফাহানসহ, ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা এবং সামরিক ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে। এই হামলায় ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের সিনিয়র কমান্ডার হোসেইন সালামি এবং আমির আলী হাজিজাদেহসহ পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা নিহত হয়। ইরানি রাষ্ট্রীয় মিডিয়া জানায়, হামলায় ৭৮ জন নিহত এবং ৩০০ জনের বেশি আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিকও রয়েছে। তেহরানের নোবোনিয়াদ স্কয়ারের কাছে একটি ১৪ তলা আবাসিক ভবনসহ অন্যান্য বেসামরিক স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া। যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ঘাঁটি সক্রিয় করে। উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য ইরানেকে দোষারোপ করে পশ্চিমারা। অপরদিকে সৌদি আরব, তুরস্ক, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ ইরানের পক্ষ নেয়। ইসরায়েলের দখলদার নীতির সমালোচনা করে তারা।১৩-১৪ জুন : ইরান প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটি এবং তেল আবিবসহ বেসামরিক এলাকায় ১০০টির বেশি ড্রোন এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ইসরায়েলে কমপক্ষে তিনজন নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হয়। ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনেকগুলো প্রজেক্টাইল প্রতিহত করে। তবে কিছু ক্ষতি সাধন করে, যার মধ্যে তেল আবিবের কিরিয়া এলাকাও রয়েছে। উভয় দেশ তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় এবং ইসরায়েল জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে।১৪ জুন : ইরানের জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলি হামলায় ৭৮ জনের মৃত্যু এবং ৩২৯ জনের আহত হওয়ার কথা জানান। ইরান “কঠিন” প্রতিক্রিয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। যা আরও উত্তেজনার আশঙ্কা বাড়ায়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত এবং রাশিয়া কূটনৈতিকভাবে ইসরায়েল ও ইরানের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে সংযমের আহ্বান জানায়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আলোচনার প্রস্তাব দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভ্যন্তরীণ বিভেদের মধ্যেও ইসরায়েলি হামলার সমর্থন জানালেও বৃহত্তর সংঘাত এড়াতে সংযমের আহ্বান জানান।মাত্র এক ঘণ্টায় ইসরায়েলের ১০টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করে ইরান। আরও দাবি অনুযায়ী, ইসরায়েলের আয়রন ডোম আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ব্যর্থ করে তেল আবিবে অবস্থিত প্রতিরক্ষা সদর দপ্তরে হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান।ইসরায়েলের হামলায় ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরের একটি প্রশাসনিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইরানের রাজধানী তেহরানের একটি তেলের ডিপোতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।ইসরায়েলজুড়ে রাতভর হামলা চালায় ইরান। দখলদারদের হাইফা ও তেল আবিব শহরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে তেহরান। এতে কমপক্ষে সাতজন নিহত হয়েছে।১৫ জুন : ইসরায়েলজুড়ে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাসিন্দাদের অনেকে বাংকারে অবস্থান নিয়েছেন। রাতের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে উদ্ধারকাজ চলছে।