উত্তরের পথে যানজট আর ডাকাতির শঙ্কা
অনলাইন নিউজ ডেক্স

এবার ঈদুল আজহায় উত্তর অঞ্চলের ঘরে ফেরা মানুষের দুর্ভোগের কারণ হতে পারে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের যানজট। কোরবানির পশু পরিবহন এবং ঘরমুখো মানুষের যাতায়াতের যানবাহনের চাপে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।অন্যদিকে, ঈদযাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্ট বেশকিছু দিন ধরে ডাকাতি হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করা উত্তর অঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষ। তবে এ এলাকা কঠিন নজরদারিতে রাখতে মনিটরিং টিম নিয়োজিত থাকবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।টাঙ্গাইলের নিরালা সুপার যানবাহনের সুপারভাইজার হাসান আলী বলেন, এবারের ঈদযাত্রায় যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হবে। গত ঈদুল ফিতরে মহাসড়কটি স্বাভাবিক ছিল। ঈদুল ফিতরে যানবাহনের চাপ কম ছিল, ঢাকার মানুষ গ্রামের বাড়িতে কম গেছে। যার কারণে যানবাহনের সংখ্যাও কম ছিল। এবার মানুষের চাপে যানবাহনের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। সঙ্গে পশুবাহী ট্রাকও বৃদ্ধি পাবে। সব মিলে এবারের ঈদে যানজট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে।সিরাজগঞ্জের যাত্রী রোমেল মিয়া বলেন, এবারের ঈদে দীর্ঘ ছুটি পেয়েছে মানুষ। সে হিসেবে ঢাকা থেকে বেশিরভাগ মানুষ গ্রামের বাড়ি চলে আসবে। তাই মহাসড়কে এবার যানজট হবে। সম্প্রতি মহাসড়কে ডাকাতির মতো বেশকিছু দুর্ঘটনাও হয়েছে। যাত্রীদের মধ্যে ডাকাতির ভয় রয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।বাস মালিক শফিকুজ্জামান বলেন, মহাসড়কের টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে গোলচত্বর পর্যন্ত এবং মির্জাপুরের পাকুল্যা থেকে টাঙ্গাইল শহরের রাবনা বাইপাস পর্যন্ত ডাকাতি হচ্ছে। ফলে দুটি স্থান অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।মহাসড়কের এলেঙ্গায় কথা হয় লিটন সিদ্দিকীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এখন মানুষের নিরাপত্তা খুবই কম। রাতে ও দিনে সড়ক-মহাসড়কে ছিনতাই-ডাকাতি হচ্ছে। প্রশাসন যদি মহাসড়কে আরও জোরালোভাবে দায়িত্ব পালন করে, তাহলে মানুষ ঈদে ভালোভাবে বাড়িতে যেতে পারবে।যাত্রী সাফায়েত হোসেন মল্লিক বলেন, ঈদযাত্রায় মহাসড়কে আতঙ্ক থাকবেই। আশা করছি, নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছানোর জন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।টাঙ্গাইল জেলা বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন বলেন, ঈদযাত্রায় ডাকাতি প্রতিরোধে নির্দিষ্ট গন্তব্য যাওয়ার আগে প্রতিটি বাসেই ক্যামেরা দিয়ে সবার ছবি তুলে রাখার জন্য আমরা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি। ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও ওই ভিডিও বা ছবিগুলো ডাকাত ধরার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করবে।ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম গ্রুপের ম্যানেজার রবিউল আওয়াল বলেন, এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কের চার লেনের কাজ করছে মোনেম গ্রুপ। ঈদুল ফিতরের দুই লেনের কিছু অংশ চালু করেছিলাম। যার কারণে ঈদুল ফিতরে কোনো যানজট হয়নি।এবারের ঈদুল আজহায় আমরা চার লেনে চালু করতে পেরেছি। যদিও সাড়ে ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে কিছু অংশ বিচ্ছিন্ন রয়েছে, এতে কোনো ধরনের ভোগান্তি হবে না।যমুনা সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল জানান, গত ঈদুল ফিতরের মতো এবারও ঈদুল আজহায় সেতু দিয়ে সার্বক্ষণিক টোল চালু রাখার জন্য দুই প্রান্তে ৯টি করে বুথ সচল থাকবে। এ ছাড়া মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা দুটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে।টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকিবুল হাসান রাসেল বলেন, এরই মধ্যে মহাসড়কে পুলিশের টহল কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। মহাসড়ক দিয়ে যাতে যাত্রীরা নির্বিঘ্নে বাড়িতে যেতে পারে, সে বিষয় আমরা সার্বক্ষণিক চেষ্টায় রয়েছি।তিনি বলেন, ঈদযাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশে জেলা পুলিশের ৬ শতাধিক সদস্য ২ জুন থেকে নিয়োজিত থাকবেন।টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরিফা হক বলেন, ঈদযাত্রায় আমাদের মনিটরিং টিম কঠিন নজরদারিতে থাকবে। আমাদের জেলা প্রশাসন থেকে সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে, যাতে ঈদযাত্রায় মহাসড়কে যানবাহনের চাপে বড় কোনো ধরনের যানজটের শিকার না হয়। এ ছাড়া এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সিসি ক্যামেরা আওতায় থাকবে।
