এক বছরে টাকার মান কমেছে ১২.৭২%


বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে গত টানা ৩ বছর ধরেই দেশে ডলারের সংকট চলছে। এ কারণে ডলারের দাম বেড়েছে, এর বিপরীতে কমেছে টাকার মান। গত ১ বছরে ডলারের দাম বেড়েছে ১৪ টাকা। সদ্য বিদায়ি বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারির প্রথম দিনে ডলারের দাম ছিল ১১০ টাকা। বছরের শেষ দিনে মঙ্গলবার এর দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৪ টাকায়। এ হিসাবে টাকার মান কমেছে ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ। এর মধ্যে বছরের প্রথম ৭ মাস ৫ দিনে ডলারের দাম বেড়েছে ৮ টাকা বা ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ৫ আগস্টের পর থেকে মঙ্গলবার বছরের শেষ দিন পর্যন্ত ডলারের দাম বেড়েছে ৬ টাকা অর্থাৎ ৫ দশমিক ০৮ শতাংশ। সরকার পতনের পর ডলার সংকট কিছুটা কমলেও বছরের শেষ দিকে সংকট আবার বেড়ে যায়। গত বছরের ১ জানুয়ারিতে ডলারের দাম ছিল ১১০ টাকা। অফিশিয়ালি ব্যাংকে ডলারের দর ১১০ টাকা হলেও বাস্তবে দাম আরও বেশি ছিল। ওই সময়ে আমদানির এলসি খোলার জন্য ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১২২ টাকায় ওঠেছিল। খোলা দাম ছিল সর্বোচ্চ ১৩২ টাকা। পরে ডলারের দাম কিছুটা কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মে মাসে ডলারের দামে ক্রলিং পেগ (একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বেঁধে দিয়ে ডলারের দামে ওঠানামার সুযোগ) পদ্ধতি চালু করে। ওই সময়ে ডলারের মধ্য দর ১১৭ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ফলে ব্যাংকগুলোকে এর চেয়ে এক টাকা বেশি বা কমে ডলার লেনদেনের সুযোগ দেওয়া হয়। এ হিসাবে ডলার ১১৬ টাকা থেকে ১১৮ টাকায় লেনদেন হয়। কিন্তু এই দরেও ব্যাংকে ডলার পাওয়া যাচ্ছিল না। ব্যাংকে আরও বেশি দামে ডলার বেচাকেনা হয়েছে। ৫ আগস্ট সরকারের পতন হওয়ার আগ পর্যন্ত ডলারের দাম এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সরকারের পতন হলে নতুন গভর্নর দায়িত্ব নিয়ে ডলারের দাম আরও কিছুটা বাড়িয়ে দেন। এ সময়ে এর দাম সর্বোচ্চ ১২০ টাকায় লেনদেনের সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই সময়ে ডলারের দাম ১২০ টাকার নিচে নামেনি। নভেম্বর পর্যন্ত এর দাম ১২০ টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংক থেকে টাকা পাচারের ঘটনা ব্যাপকভাবে কমে যায়। পাশাপাশি নতুন করে লুটপাটও বন্ধ হয়ে যায়। বেড়ে যায় রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ। যে কারণে ব্যাংকে ডলারের প্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভ থেকে ডলার না নিয়েই প্রায় ৪০০ কোটি ডলারের স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করেছে। দীর্ঘমেয়াদি ঋণও শোধ করেছে ২৫০ কোটি ডলারের বেশি। ডলারের প্রবাহ বাড়ার কারণে নভেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সার্কুলার দিয়ে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়, এখন থেকে কোনো দেনা আর স্থগিত রাখা যাবে না। নিয়মিত শোধ করতে হবে। এতে বাজারের ডলারের সংকট আবার বেড়ে যায়। ফলে ডিসেম্বরের থাকে। ব্যাংকগুলো বাড়তি ডলার কেনা শুরু করে। এতে আমদানিতেও দাম কিছুটা বাড়িয়ে দেয়। কোনো কোনো ব্যাংক ১২৫ টাকা দরে রেমিট্যান্স কিনে ১২৬ টাকা দরে আমদানিতে ডলার বিক্রি করেছে। বছর শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাড়তি তদারকির ফলে ডলারের দাম আবার কিছুটা কমে যায়। এই সময়ে রেমিট্যান্স কেনার ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১২৩ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়। ফলে আমদানিতে এর দাম ১২৪ টাকায় নেমে আসে। তবে বেশিরভাগ ১২০ টাকার মধ্যেই আমদানিতে ডলার বিক্রি করেছে। কিন্তু এর বিপরীতে নানা চার্জের নামে দাম বেশি নিয়েছে। গত বছরের ১ জানুয়ারি ব্যাংকে ডলারের দাম ছিল ১১০ টাকা। বছর শেষে তা বেড়ে ১২৪ টাকায় ওঠে। ওই সময়ে প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে ১৪ টাকা। অর্থাৎ ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ টাকার মান কমেছে। এর মধ্যে আওয়মী লীগ সরকারের সময়ে ১ জানুয়ারি থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত দাম বেড়েছে ৮ টাকা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিন ডলারের দাম ছিল ১১৮ টাকা। এ হিসাবে টাকার মান কমেছে ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ৫ আগস্টের পর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বর্তমান সরকারের আমলে ডলারের দাম বেড়েছে ৬ টাকা বা ৫ দশমিক ০৮ শতাংশ। এর আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ডলারের দাম ছিল ১০৫ টাকা। ওই বছরের ডিসেম্বরে তা বেড়ে ১১০ টাকায় ওঠে। ওই বছরে টাকার মান কমেছিল ৫ টাকা বা ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। ওই বছরের ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৫ টাকায়। ওই সময়ে টাকার মান কমেছে ১৯ টাকা বা ২২ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যাংকে ডলারের অফিশিয়াল দামের চেয়ে আন-অফিশিয়াল দাম আরও বেশি ছিল। এদিকে খোলা বাজারে ডলারের দাম বেড়ে এখন সর্বোচ্চ ১২৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের শুরুর দিনে খোলা বাজারে ডলারের দাম ছিল ১১৪ থেকে ১১৬ টাকা। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খোলা বাজারে এর চাহিদা কমে আসায় দামও কমে ১২১ টাকায় নামে।