এখন থেকেই নির্বাচনের কাজ শুরু করার নির্দেশনা ডিসিদের
অনলাইন নিউজ ডেক্স

শেষ হয়েছে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন। এ সম্মেলন থেকে আসন্ন স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনসহ দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা পেয়েছেন ডিসিরা। যা মাঠ প্রশাসনে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে তাদেরকে। সরকারের নীতিনির্ধারক এবং জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের মধ্যে সামনা-সামনি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য সাধারণত প্রতি বছর ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তবে নানা কারণে এবারের ডিসি সম্মেলনটি ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।জেলা প্রশাসকদের তিন দিনব্যপী সম্মেলন শুরু হয় ১৬ ফেব্রুয়ারি। তিন কার্যদিবসে মোট ৩৪টি পৃথক কর্ম-অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দিন সম্মেলন উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এবারের সম্মেলনে জেলা প্রশাসকরা ৩৫৪টি প্রস্তাব পেশ করেন। এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। পৃথক কর্ম-অধিবেশনগুলোয় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা, সিনিয়র সচিব, সচিব ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।তবে সুনির্দিষ্ট করে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) সরকারের ১২টি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিয়ে মাঠে ফিরেছেন। তাদের আইন ও বিবেক খাটিয়ে প্রভাবমুক্ত থেকে দায়িত্ব পালনের তাগিদ দিয়েছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। এখন থেকেই তাদের নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ শুরুর জন্য বলা হয়েছে। নির্ভয়ে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারও রক্তচক্ষুর কাছে নতি স্বীকার না করে নিজের ওপর আস্থা রেখে সরকারি নির্দেশ পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, কালোবাজারি, মজুতদার ও বাজার সিন্ডিকেট খুঁজে বের করার ব্যাপারে তাগিদ দেওয়া হয়।১২ নির্দেশনার মধ্যে আরও আছে সরকারি সম্পদ জবরদখল রোধ, খাল, নদী, পুকুরসহ প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ, সরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ সরবরাহ নির্বিঘ্ন করা, সার, বীজসহ কৃষি উপকরণের সহজলভ্যতা, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন তদারকি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়া, চিকিৎসা সেবায় হয়রানি বন্ধ এবং সব ধরনের সেবা পর্যায়ক্রমে অনলাইনে দেওয়া। একাধিক ডিসির সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিসি সম্মেলন থেকে বলা হয়েছে, জেলায় জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাধারণ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছে। তারা ভেতর থেকেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। গত বছর ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পালানোর পর পুলিশের বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৬ হাজার অস্ত্র লুট হয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৬০০টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আরও প্রায় ১ হাজার ৪০০ অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। একই সময়ে লুট হয় ৬ লাখ গুলি। এর মধ্যে ৩ লাখ ৫০ হাজার গুলি বিভিন্ন বাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো বিভিন্ন ধরনের প্রায় আড়াই লাখ গুলি উদ্ধার হয়নি। সেগুলো সন্ত্রাসীদের হাতে পড়তে পারে এবং তারা ব্যবহার করতে পারে। সেক্ষেত্রে ডিসিদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা, জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে বাড়তি নজরদারি করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে যৌথ বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিসিদের নির্ভয়ে মাথা উঁচু করে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। দেশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ডিসিদের উদ্দেশে বলেন, ইলেকশন নিয়ে আমরা যেমন কাজ করছি, আপনারাও সহযোদ্ধা। আমরা একটা যুদ্ধে নেমেছি। এটা হচ্ছে একটা সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার যুদ্ধ। আপনারা আমাদের সহযোদ্ধা হিসাবে থাকবেন। এখন থেকেই কাজ শুরু করেন।সংশ্লিষ্টরা জানান, আসন্ন পবিত্র মাহে রমজানে নিত্যপণ্য সাধারণের নাগালে রাখতে ডিসিদের বিশেষ উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। সরকার রমজানে সুলভমূল্যে তথা ফেয়ার প্রাইসে, ওপেন মার্কেট সেল ( ওএমএস) ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জন্য খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করবে। এছাড়া ঈদ উপলক্ষ্যে বিনামূল্যে ১০ কেজি করে চাল দেবে। এসব সরকারি উদ্যোগ যেন কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় এবং সুষ্ঠু বণ্টন হয়, সে বিষয়ে সতর্ক পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট দেখা দিয়েছে। কালোবাজারি, মজুতদার এবং একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট কৃত্রিক সংকট সৃষ্টি করে জনভোগান্তি সৃষ্টি মাধ্যমে সরকারের দুর্নাম করতে চায়। এসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ডিসিদের বার্তা দেওয়া হয়েছে।দেশে খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কৃষি উৎপাদনের বিকল্প নেই। উৎপাদন বাড়াতে পারলে আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়। সেক্ষেত্রে চলতি বোরো মৌসুমে কৃষক যেন ঠিক সময়ে সার, বীজ এবং সেচ সুবিধা নির্বিঘ্নে পান, তা ডিসিদের নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। কৃষিকাজে বিদ্যুৎ সরবরাহ যেন নিরবচ্ছিন্ন হয়, তা তদারকি করতে বলা হয়েছে।দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা ঘটে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিভাবক কমিটি নিয়ে দলাদলি, মারামারি, মামলা-হামলার ঘটনা ঘটে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থের কোনো হিসাবনিকাশ থাকে না। ভর্তি বাণিজ্যের ঘটনা ঘটে। এসব অপরাধ এখন জেলা-উপজেলা পর্যায়েও সংঘটিত হচ্ছে। তাছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেওয়ালের বাইরে দোকানঘর তৈরি করে ভাড়া দেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও প্রভাবশালীরা। দোকান ভাড়ার টাকা তারা আত্মসাৎ করেন। এসব বিষয়ে অনিয়ম বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং সরকারের সচিবরা বলেছেন, দুর্নীতি দেশের এক নম্বর সমস্যা। দুর্নীতি দেশের সীমানা পেরিয়ে বাইরে গিয়ে আছড়ে পড়ছে। দুর্নীতির কারণে দেশের বদনাম হচ্ছে। এ অবস্থা আর চলতে দেওয়া যায় না। সব ধরনের দুর্নীতি সমূলে উৎপাটন করতে ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
