এপস্টেইনের ঘনিষ্ঠ নেতা, শিল্পী ও ব্যবসায়ীদের ছবি প্রকাশ
অনলাইন নিউজ ডেক্স
মার্কিন বিচার বিভাগ গত শুক্রবার দণ্ডিত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনের তদন্তের কয়েক হাজার পৃষ্ঠার নথিপত্র প্রকাশ করেছে। এ ঘটনা ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের পর তাঁর প্রশাসনের জন্য বড় রাজনৈতিক ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও প্রকাশিত নথির বড় অংশ কালো কালিতে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এরপরও বিনোদন, রাজনীতি ও ব্যবসা জগতের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম ও ছবি সামনে এসেছে।
প্রকাশিত নথিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, ব্রিটিশ রাজপরিবারের সাবেক সদস্য অ্যান্ড্রু মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসর এবং বিনোদন জগতের মাইকেল জ্যাকসন, ক্রিস টাকার, ডায়ানা রস ও উদ্যোক্তা রিচার্ড ব্র্যানসনের মুখ দেখা গেছে।
একটি ছবিতে ক্লিনটনকে পুলে সাঁতার কাটতে এবং অন্যটিতে উষ্ণ টাবে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। এপস্টেইনের দণ্ডিত সহযোগী গিসলাইন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে পুলে ক্লিনটনের উপস্থিতিও নথিতে পাওয়া গেছে। ক্লিনটন বরাবরই এপস্টেইনের অপরাধ সম্পর্কে জানার কথা অস্বীকার করেছেন। তাঁর মুখপাত্র জানিয়েছেন, ২০ বছরের পুরোনো এ ঝাপসা ছবিগুলোর মাধ্যমে ক্লিনটনকে বলির পাঁঠা বানানো হচ্ছে।
অন্যদিকে, একটি সাদাকালো ছবিতে অ্যান্ড্রু মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসরকে পাঁচজন নারীর কোলে শুয়ে থাকতে দেখা গেছে। এপস্টেইনের সহযোগী গিসলাইন ম্যাক্সওয়েলকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলেও এর প্রেক্ষাপট জানানো হয়নি। এ ছাড়া বিনোদন জগতের ডায়ানা রস, ক্রিস টাকার এবং উদ্যোক্তা রিচার্ড ব্র্যানসনের ছবিও ফাইলে রয়েছে। তবে ফাইলে নাম থাকা বা ছবি থাকা মানেই কোনো অপরাধের প্রমাণ নয়।
নথিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উল্লেখ পাওয়া গেছে। আদালতের নথিতে অভিযোগ করা হয়েছে, এপস্টেইন ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো রিসোর্টে ট্রাম্পের সঙ্গে ১৪ বছরের একটি মেয়ের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। ২০২০ সালে এক মামলায় ভুক্তভোগী দাবি করেন, সেই সময় এপস্টেইন ও ট্রাম্প মেয়েটিকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন। তবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো অপরাধের অভিযোগ সেই নথিতে নেই। ডেমোক্র্যাটরা এপস্টেইনের কিছু ই-মেইল প্রকাশ করেছেন। সেখানে দাবি করা হয়েছে, ট্রাম্প মেয়েদের বিষয়ে জানতেন। হোয়াইট হাউস একে ট্রাম্পের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা বলে বর্ণনা করেছে।
আইনি বাধ্যবাধকতা ও বিতর্ক
‘এপস্টেইন ফাইলস ট্রান্সপারেন্সি অ্যাক্ট’ অনুযায়ী ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে সব নথিপত্র প্রকাশ করার কথা থাকলেও বিচার বিভাগ তা পুরোপুরি পালন করতে পারেনি। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ডেমোক্রেটিক কংগ্রেস সদস্য রো খান্না এবং সিনেট নেতা চাক শুমার অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন আইনের শর্ত পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল টড ব্ল্যাঞ্চ জানান, ২০০৬ সাল থেকে শুরু হওয়া এই তদন্তের নথির পরিমাণ বিশাল হওয়ায় তা পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করা হচ্ছে। এক হাজার ২০০ জনের বেশি ভুক্তভোগীর পরিচয় গোপন রাখতে অনেক অংশ ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
অন্যান্য চাঞ্চল্যকর তথ্য
নথিতে এপস্টেইনের হয়ে কাজ করা শিল্পী মারিয়া ফারমারের বক্তব্যও রয়েছে। তিনি জানান, এপস্টেইন তাঁর দুই অপ্রাপ্তবয়স্ক বোনের ছবি চুরি করেছিলেন। মুখ খুললে ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া নথিতে ভ্লাদিমির নাবোকভের উপন্যাস ‘ললিতা’র উদ্ধৃতি এক নারীর শরীরে লেখা থাকার ছবি পাওয়া গেছে। এ নিয়ে জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিচার বিভাগ জানিয়েছে, আরও কয়েক লাখ পৃষ্ঠার নথি আগামী সপ্তাহগুলোতে প্রকাশ করা হবে।
২০১৯ সালে কারাগারে বিচার শুরুর আগে মারা যান এপস্টেইন। ২০২১ সালে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের পাচারে সহায়তার দায়ে ২০ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া গিসলাইন ম্যাক্সওয়েলের তদন্ত-সংক্রান্ত নথি প্রকাশের বাধ্যবাধকতাও এই আইনে রয়েছে।
