কাশিমপুর কারগারে আরেকটি ‘৩ নভেম্বরের জেল হত্যাকাণ্ড’ ঘটার শঙ্কা!


দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের ওপর জেল হত্যার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে গাদাগাদি করে রাখা দুই সেলে থাকা নেতাদের অবস্থান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, মানবাধিকার সংস্থা ও আটককৃতদের পরিবার।

৫ই আগস্টের ক্ষমতা পরিবর্তনের পর থেকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা গ্রেপ্তার হয়ে বিভিন্ন কারাগারে রয়েছেন।

সূত্র জানায়, এসব নেতাদের মধ্যে অনেককেই কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের দুটি সেলে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরিবারগুলো বলছে, এ ধরনের কেন্দ্রীকরণ এবং গোপনীয়তা পঁচাত্তরের ৩ নভেম্বর জেল হত্যার মতো একটি ঘটনা পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা তৈরি করেছে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তাদের প্রিয়জনদের কোনো অভিযোগ ছাড়াই গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে, কারাগারে তাদের জীবন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। পরিবারের অভিযোগ, বন্দিদের আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না এবং স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগেও বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের আটক এক প্রেসিডিয়াম সদস্যের স্ত্রী বলেন, “কাশিমপুর কারাগারের অবস্থা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। ৩ নভেম্বরের মতো আরেকটি ঘটনা ঘটার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”

তিনি আরও বলেন, “জামায়াত-ইউনূস ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠী আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার ষড়যন্ত্র করছে। আটক নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।”

অপর এক বন্দি নেতার স্ত্রী বলেন, “আমরা জানি না তারা কেমন আছেন। এমনকি কারাগারে চিকিৎসার সুযোগও দেওয়া হচ্ছে না। আমরা ভয় পাচ্ছি, এর পেছনে কোনো গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে।”

রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আটক নেতাদের ওপর কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে আরও অস্থিতিশীল করবে।

কারাগারে ঘটছে একের পর এক রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা

আসক-এর প্রতিবেদন অনুসারে, দেশের বিভিন্ন কারাগারে অসুস্থতার অজুহাতে ৬৫ জন বন্দির মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে ১২ জন ব্যক্তি সরকারি বাহিনীর হেফাজতে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। এমএসএফ-এর প্রতিবেদন অনুসারে, কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন ৬ জন এবং পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে ৯৮ জনকে।

এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো বগুড়া কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতাদের মৃত্যুর ঘটনা। মাত্র ২৯ দিনের ব্যবধানে এই কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন চারজন আওয়ামী লীগ নেতা।

১. শাহাদত আলম (৫৭), বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
২. আবদুল লতিফ (৬৭), শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ।
৩. শহিদুল ইসলাম (৫৮), বগুড়া পৌরসভার ১৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
4. আব্দুল মতিন ওরফে মিঠু (৬৫), গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

সংস্থাটি জানিয়েছে, ধারাবাহিক এ মৃত্যুগুলোর কারণ হিসেবে ‘হৃদরোগ’ উল্লেখ করা হলেও, এ বিষয়ে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের প্রয়োজন।

আসক-এর প্রতিবেদনে আদালত প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া নজিরবিহীন ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যশোরে একটি মামলায় ১৬৭ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী জামিন চাইতে গেলে সবাইকে কারাগারে পাঠানো হয়। এমনকি তাদের পক্ষে আদালতে কাজ করা আইনজীবীও রাতে গ্রেপ্তার হন।

এছাড়া, সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়ন, মিথ্যা মামলার হুমকি এবং তাদের গ্রেপ্তারের অভিযোগও উঠেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং রাজনৈতিক প্রতিশোধের ঘটনাগুলোও মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পরে তার ঘনিষ্ট সহযোগীদের আটক করে সেনা-সমর্থিত ক্ষমতা দখলকারী সরকার। এ ঘটনার ধারাবাহিকতায় সে বছরেরই ৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট ৪ সহযোগী উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ, মুজিবনগর সরকারের দুই মন্ত্রী এম মুনসুর আলী ও এএইচ কামারুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় হত্যা করে সেনাবাহিনীর একটি অংশ।