কুষ্টিয়ায় সরকারি অফিস টাইম ফাঁকি দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা নিজ ক্লিনিকে রোগী দেখেন আরএমও হোসেন ইমাম


কুষ্টিয়ায় সরকারি অফিস টাইম ফাঁকি দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা নিজ ক্লিনিকে রোগী দেখেন আরএমও হোসেন ইমাম
সরকারি অফিস টাইম ফাঁকি দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা নিজ ক্লিনিকে রোগী দেখেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. হোসেন ইমাম। হাসপাতাল সংলগ্ন তার মালিকাধীন ক্লিনিক ঘিরে গড়ে উঠেছে দালালদের বিশাল সিন্ডিকেট। জেনারেল হাসপাতালে আসা গরীব রোগীদের সুকৌশলে ভাগিয়ে আরএমও’র ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর ক্লিনিকে বসে সেবার নামে রোগীদের পকেট কাটছেন তিনি। হাসপাতালে তার খোঁজে গেলে তেড়ে আসে পোষা ক্যাডার বাহিনী। সরেজমিন একাধিক দিন অনুসন্ধান করে মিলেছে অনিয়মের নানা চিত্র।শনিবার (২১জুন), ঘড়ির কাটাই তখন বেলা পৌনে ১২টা। এ সময় সরকারি হাসপাতালের অফিসে দায়িত্ব পালন করার কথা কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. হোসেন ইমামের। কিন্তু চিত্র পুরোপুরি উল্টো। হাসপাতালের পুর্ব পাশে অবস্থিত নিজের মালিকাধীন নিউ সান ক্লিনিকে বসে তখন রোগী দেখছেন, করছেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা।১৯ জুন সকাল ৯টার দিকেও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় তার রুম ভেতর থেকে আটকানো। বাইরে হোসেন ইমামের অপেক্ষায় বসে আছেন রোগীরা। ফাঁক দিয়ে দেখা যায় আরএমও নেই। রুমের মধ্যে বসে আছেন দুই ব্যক্তি। মাঝে মধ্যে হাসপাতালের কয়েকজন নারী স্টাফ এসে রুমে ঢুকছেন আবার বেরিয়ে যাচ্ছেন। এর মাঝে তিন রোগী আসেন আরএমও হোসেন ইমামের চেম্বারে সামনে। এক নারী এসে তাদের ডেকে নিয়ে যান। পিছু নেই এ প্রতিবেদক। এরপর ইজিবাইকে তুলে নেওয়া হয় ‘নিউ সান ক্লিনিকে’। সেখানে বসে তখন রোগী দেখছেন আরএমও।অথচ তখন তার সরকারি জেনারেল হাসপাতালের চেম্বারের সামনে রোগীদের জটলা। অপেক্ষা করছেন ডা. হোসেন ইমামের জন্য। রোগীদের অভিযোগ, কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকেও দেখা মেলে না তার।সকাল ৮টা থকে দালালরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা টিকিট কাউন্টারের আশেপাশে ঘোরা ফেরা করে। গ্রামের গরীব রোগীরা আসলে তাদের টার্গেট করে নিয়ে যায় হোসেন ইমামের ব্যক্তিগত ক্লিনিকে। এভাবে গরীব রোগীরা ফ্রি চিকিৎসার পরিবর্তে হয়রানী ও অর্থ খসছে।২১ জুন সকাল ৯টায় পেটের সমস্যা নিয়ে সরকারি হাসপাতালের কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে আরএমও হোসেন ইমামের চেম্বারের সামনে আসেন উজ্জল নামের এক রোগী। তখনো অফিসে আসেননি তিনি। সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালে আসেন হোসেন ইমাম। সরকারি হাসপাতালের চেম্বারে দেখে উজ্জলকে দেখে ৫টি পরীক্ষা দেন। নারী দালাল তাকে নিয়ে যান আরএমও’র ক্লিনিক নিউ সানে। ১১টার পরপর সরকারি হাসপাতালের চেম্বার ছেড়ে গোপনে ফের নিজ ক্লিনিকে গিয়ে রোগী দেখা শুরু করেন। এ প্রতিবেদক গোপন ক্যামেরায় সে সব ছবি ধারন করে।উজ্জল হোসেন, পেটের সমস্যা নিয়ে জেনারেল হাসপাতালে যান। সেখানে এক নারী দালাল হোসেন ইমামের ক্লিনিকে নিয়ে যায়। তখন সরকারি অফিস সময়। আরএমও হোসেন ইমাম নিজে আমাকে সনো পরীক্ষা করেন।’বিকেলের দিকে চেম্বারে গেলে জেনারেল হাসপাতালে থেকে নেওয়া ৫ টাকার টিকিটের পরিবর্তে তার নিজস্ব প্যাডে ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন। এ অনিয়মের বিষয়টির ধরা পড়ে।জেসমিন নামের একজন রোগী বলেন, শনিবার সাড়ে ১১টার দিকে নিউ সানে যায় হোসেন ইমামকে দেখাতে। তিনি তখন চেম্বারে অবস্থান করে রোগী দেখছিলেন। আমাকে দেখে ২ হাজার ৬০০ টাকার পরীক্ষা দেন। পরীক্ষা বাইরে করাতে চাইলে তার স্টাফরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। হোসেন ইমাম যে প্রেসক্রিপশনের কাগজ দিয়েছিলেন সেটা তারা কেড়ে নেন। টানা দুই দিন প্রায় ৬ ঘন্টা জেনারেল হাসপাতাল ও নিউ সান ক্লিনিকে অবস্থান করে দালালদের দৌরাত্ম দেখা যায়। ১০ থেকে ১৫জন দালাল সক্রিয় হাসপাতাল ঘিরে।নারী দালালরা জানান,‘ সকাল থেকে ১১টা পর্যন্ত নিজের ক্লিনিকে রোগী দেখেন আরএমও। এর মাঝে হাসপাতালে আসেন হাজিরা দিতে। তারপরও চেম্বার থেকে কল আসলে আবার গোপনে বেরিয়ে যান। এভাবে চালান তিনি।সরকারি হাসপাতাল সূত্র জানায়, সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অফিস সময়। এ সময়ে কোন চিকিৎসক বাইরে রোগী দেখতে পারবে না। এদিকে ২১জুন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হোসেন ইমামের সরকারি হাসপাতালে চেম্বারে গিয়ে যায় ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। কড়া নাড়তেই ভেতর থেকে এক ব্যক্তি দরজা খুলে দেন। আরএমও আছেন কি-না জানতে চাইলে মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন ওই ব্যক্তি। হেনস্থা করেন এ প্রতিনিধিকে।তবে হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. নাসির উদ্দিন বলেন- সরকারি অফিস সময়ে ব্যক্তিগত চেম্বারে অফিস করার কোন নিয়ম নেই। আরএমও কোথায় আছে জানতে চাইলে তিনি নানা ব্যাখা দেন। এদিকে সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান লাকী বলেন,‘ রক্ষক যখন ভক্ষক হয় তখন সমাজে ভালো কিছু থাকে না। আরএমও নিজেই যখন দালাল দিয়ে রোগী ভাগিয়ে নেন সেখানে আর সেবা থাকে না। আর জেলা প্রশাসক মো: তৌফিকুর রহমান বলেন,‘ প্রয়োজনে দালালদের সনাক্ত করে ছবি টাঙ্গিয়ে দেওয়া হবে। আর অফিস টাইমেক ব্যাক্তিগত চেম্বার করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শনিবার দুপুরে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে দেখা পাওয়া যায়নি হোসেন ইমামের। পরে ফোন দিলেও তিনি আর রিসিভ করেননি। নিউজ করলে চাঁদাবাজি মামলা করা হবে বলেও একাধিক মাধ্যমে হুমকি দেন।