গণতন্ত্রের পথে পিআর পদ্ধতির বিকল্প নেই
অনলাইন নিউজ ডেক্স

সংসদের উচ্চকক্ষের প্রতিনিধি নির্বাচন নিম্নকক্ষের ভোটের সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) হতে হবে। আসনসংখ্যার ভিত্তিতে করা হলে তা হবে পুরোপুরি পণ্ডশ্রম। এতে কোনো লাভ হবে না। শুধু কিছু লোককে প্রোভাইড করা ছাড়া এর আর কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। তখন উচ্চকক্ষ হবে নিম্নকক্ষের পুরোপুরি রেপ্লিকা (প্রতিরূপ)। এতে দলের আধিপত্য আরও নিরঙ্কুশ হবে, স্বৈরাচার আরও পাকাপোক্ত হবে। এছাড়া আমরা যদি দেশে গণতান্ত্রিক ধারার দিকে আরও বেশি করে যেতে চাই, তাহলে অবশ্যই ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টনের দিকে যেতেই হবে। শনিবার বিকালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘সংসদের উচ্চকক্ষে ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টন : নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এই বৈঠকের আয়োজন করে ‘নাগরিক কোয়ালিশন’।নিম্নকক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে উচ্চকক্ষ প্রয়োজন বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, নিম্নকক্ষে আসনভিত্তিক পদ্ধতি হতে পারে। আর উচ্চকক্ষ সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে হতে পারে। উচ্চকক্ষের আসন নির্বাচনে, আসন ও ভোটের সংখ্যা অনুপাতের প্রস্তাব আছে জানিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই সদস্য বলেন, বড় দল বিএনপির পক্ষ থেকে আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষ নির্বাচনের প্রস্তাব দেওয়া আছে।তিনি বলেন, যদি উচ্চকক্ষের নির্বাচন আসন সংখ্যার ভিত্তিতে হয়, তাহলে এটা হবে পুরোপুরি পণ্ডশ্রম। এতে উচ্চকক্ষ হবে নিম্নকক্ষের পুরোপুরি রেপ্লিকা। দলের আধিপত্য আরও নিরঙ্কুশ হবে। ওই যে আমাদের স্বৈরাচার সৃষ্টি হয়েছে, এভাবে হলে স্বৈরাচার আরও পাকাপোক্ত হবে।এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার ভাষ্যমতে, যেটা আমরা অপ্রকাশ্যভাবে শুনেছি, যেসব দলকে তারা সিট দিতে পারবেন না, উচ্চকক্ষ থাকলে তাদের সেখানে আসন দিয়ে ম্যানেজ করতে পারবেন। এই ধরনের কথা চালু রয়েছে। তাই পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ নির্বাচিত না হলে কোনো লাভ হবে না।উচ্চকক্ষের আসন ভোটের সংখ্যানুপাতে করার পক্ষে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। একই সঙ্গে সংবিধান সংশোধনেও উচ্চকক্ষের দুই-তৃতীয়াংশের ভোটে অনুমোদনের পক্ষে দলটি বলে জানিয়েছেন যুগ্ম আহবায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ।দ্বিকক্ষ সংসদের উচ্চকক্ষ ভোটের সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচিত হলে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) না থাকলেও চলবে বলে মনে করেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরল হক নুর। তিনি বলেন, এনসিসি প্রস্তাবের মূল কারণ হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী যাতে দৈত্য-দানবে পরিণত না হন।গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি বলেন, আমরা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির সমর্থক। আমরা মনে করি না, ওয়েস্ট মিনস্টার পদ্ধতি একমাত্র মডেল। বরং সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিই আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা।জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, বাংলাদেশ এখন এক পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে। এই সময়ে নির্দলীয় গ্রহণযোগ্য ও ভবিষ্যৎমুখী কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, আমাদের দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ঘোষণা করা আছে, আমরা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট দেখতে চাই এবং উচ্চকক্ষে আনুপাতিক হারে নির্বাচিত সদস্য দেখতে চাই।রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশরাফ কায়সার বলেন, প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দুটি বা তিনটি দল বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে। বাকিরা অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলেন, কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে সেটা হয় না। এটাই হলো বাস্তবতা। এই বাস্তবতায় আমরা যদি উচ্চকক্ষে আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে প্রতিনিধি না নেই, তাহলে সেই একই বাস্তবতা ফিরে আসবে। আর পিআর পদ্ধতিতে ছোট দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব থাকার সুযোগ তৈরি হবে।রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম বলেন, পিআর-এর মাধ্যমে আমরা প্রধান প্রধান পার্টিরগুলোর বাইরেও আরও বেশি মানুষকে যুক্ত করতে চাই। দেশে আমরা যদি ডেমোক্রেসিকে রিয়েলি মিন করতে চাই, তাহলে আলটিমেটলি আমাদের পিআর-এর দিকেই যেতে হবে।সভাপতির বক্তব্যে মানবাধিকার কর্মী শহীদুল আলম বলেন, সংস্কারের এমন সুযোগ জাতির জীবনে দুই-একবার আসে, এবার তা কাজে লাগাতে হবে।বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন নাগরিক কোয়ালিশনের সহসমন্বয়ক ফাহিম মাশরুর। এতে আরও বক্তৃতা করেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. আসিফ শাহান, নাগরিক ঐক্যের সাকিব আনোয়ারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
